আইয়ুব বাচ্চুর জন্মদিনে অপ্রকাশিত একটি গানের জন্মকথা

গানটি এখনো কোথাও প্রকাশ হয়নি...
আইয়ুব বাচ্চু। ছবি: সংগৃহীত

ছয় তারের জাদুকর আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একাধারে গায়ক, গীতিকার ও সুরকার। আজ এই কিংবদন্তির জন্মদিন। বেঁচে থাকলে ৬৩ বছরে পা রাখতেন এই রক লিজেন্ড।

দিনটিকে সামনে রেখে আইয়ুব বাচ্চুর স্মৃতি স্মরণ করেছেন তার অনেক শ্রোতাপ্রিয় গানের গীতিকার লতিফুল ইসলাম শিবলী।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তার (আইয়ুব বাচ্চু) গান লিখে মানুষের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। পাশাপাশি কিংবদন্তি ব্যান্ড এলআরবির শ্রোতাপ্রিয় গান লেখার জন্য এক হাজার ডলার রয়্যালিটি পেয়েছি, যা আমার গান লেখা জীবনে প্রথম পাওয়া কোনো রয়্যালিটি। একজন গীতিকার হিসেবে এটা অনেক বড় অর্জন। এজন্য বাচ্চু ভাইয়ের পরিবার, ব্যান্ডের সদস্যদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা।'

আইয়ুব বাচ্চু ও লতিফুল ইসলাম শিবলী। ছবি: সংগৃহীত

শিবলী বলেন, 'আমার কাছে বাচ্চু ভাইয়ের সুর করা অপ্রকাশিত একটা গান আছে। গানটার শিরোনাম "গান শেষে বন্ধু যেনো চোখে না আসে জল"। গানটা এখনো কোথাও প্রকাশ হয়নি। মৃত্যুর বেশ আগে আমাকে লিখতে দিয়েছিলেন। গানটা তখন সুরের উপর লিখেছিলাম। সেই সময়ে আমাদের মধ্যে একটা অভিমান পর্ব শুরু হয়। সেই কারণে গানটা তখন আর প্রকাশিত হয়নি।'

'অপ্রকাশিত এই গানটা কেউ এখন প্রকাশ করতে চাচ্ছে না। কারণ হিসেবে আমার মনে হয়, তার গান নিয়ে পরিবারের কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। এ কারণে গানটি প্রকাশে কোম্পানিগুলো অনীহা দেখাচ্ছে। আমার ইচ্ছা আছে "গান শেষে বন্ধু যেনো চোখে না আসে জল" দেশের সব ব্যান্ড এক মঞ্চে গেয়ে উঠুক। আশা করি আমার এই আশা পূরণ হবে,' যোগ করেন তিনি।

আইয়ুব বাচ্চুর জন্ম ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরের এনায়েত বাজারে। বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের এই শিরোমণি তার প্রথম গান প্রকাশ করেন 'হারানো বিকেলের গল্প' শিরোনামে। গানটির কথা লিখেছিলেন শহীদ মাহমুদ জঙ্গী। তার প্রথম একক অ্যালবাম 'রক্তগোলাপ' প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালে।

১৯৭৮ সালে আইয়ুব বাচ্চু যোগ দেন 'ফিলিংস' ব্যান্ডে। এরপর ১৯৮০ সালে 'সোলস' এর সঙ্গে শুরু হয় তার পথচলা। প্রায় এক দশক এই ব্যান্ডের সঙ্গেই ছিলেন তিনি।

'সোলস' ছাড়ার পর ১৯৯১ সালে গঠন করেন 'এলআরবি'। এলআরবির প্রথম অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে।

আইয়ুব বাচ্চুর একক অ্যালবামগুলো হচ্ছে—ময়না (১৯৮৮), কষ্ট (১৯৯৫), সময় (১৯৯৮), একা (১৯৯৯), প্রেম তুমি কি (২০০২), দুটি মন (২০০২), কাফেলা (২০০২), প্রেম প্রেমের মতো (২০০৩), পথের গান (২০০৪), ভাটির টানে মাটির গান (২০০৬), জীবন (২০০৬), সাউন্ড অব সাইলেন্স (২০০৭), রিমঝিম বৃষ্টি (২০০৮), বলিনি কখনো (২০০৯) ও জীবনের গল্প (২০১৫)।

এলআরবির অ্যালবামগুলো হচ্ছে—এলআরবি (১৯৯২), সুখ (১৯৯৩), তবুও (১৯৯৪), ঘুমন্ত শহরে (১৯৯৫), ফেরারী মন (১৯৯৬), স্বপ্ন (১৯৯৬), আমাদের (১৯৯৮), বিস্ময় (১৯৯৮), মন চাইলে মন পাবে (২০০০), অচেনা জীবন (২০০৩), মনে আছে নাকি নেই (২০০৫), স্পর্শ (২০০৮) ও যুদ্ধ (২০১২)।

আইয়ুব বাচ্চুর জনপ্রিয় কয়েকটি গান

চলো বদলে যাই, হাসতে দেখো গাইতে দেখো, কেউ সুখী নয়, ফেরারি এই মনটা আমার, একদিন ঘুম ভাঙা শহরে, বাংলাদেশ, কষ্ট পেতে ভালোবাসি, এখন অনেক রাত, হকার, এই রুপালি গিটার ফেলে, গতকাল রাতে, সেই তারা ভরা রাতে, মেয়ে তুমি কি দুঃখ চেন, সাড়ে তিন হাত মাটি, উড়াল দেবো আকাশে, কতদিন দেখেনি দু চোখ, মনে আছে নাকি নাই, কার কাছে যাব, লোকজন কমে গেছে, একটাই মন যখন তখন, এক আকাশের তারা তুই একা গুনিস নে, মন চাইলে মন পাবে।

চলচ্চিত্রের গান

অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে, আমি তো প্রেমে পড়িনি, আম্মাজান, সাগরিকা বেঁচে আছি।

আইয়ুব বাচ্চু ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর ৫৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

Comments