পরিচালকের ডাকে অডিশন দিয়েই ‘মুজিব’ সিনেমায় কাজ পাই: আরিফিন শুভ

আরিফিন শুভ
আরিফিন শুভ। ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ/স্টার

বাংলাদেশের দর্শকপ্রিয় নায়ক আরিফিন শুভ দীর্ঘদিন পর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেন। গত পাঁচমাস ধরে তিনি ভারতে শুটিং করেছেন সনি লিভের 'জ্যাজ সিটি' ওয়েব সিরিজে। কয়েকদিন আগে দেশে ফিরেছেন।

'মুজিব' সিনেমায় অভিনয়, সরকারি প্লট নেওয়া, নিজের রাজনৈতিক অবস্থান, ঈদুল আজহার সিনেমা 'নীলচক্র'সহ বিভিন্ন বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই নায়ক।

দ্য ডেইলি স্টার: 'মুজিব' সিনেমায় এক টাকা পারিশ্রমিক কী কারণে নিয়েছিলেন? অনেকেই বলছেন, পরে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেবেন বলে এটা করেছিলেন? যেমন: সরকারের দেওয়া প্লট নেওয়া বিষয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

আরিফিন শুভ: 'মুজিব' সিনেমায় আমি এক টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছি নিজের সিদ্ধান্তে—যেমনটা যেকোনো শিল্পীই নিজের কাজের ক্ষেত্রে পছন্দমতো পারিশ্রমিক নেন। এর সঙ্গে কোনো সুবিধা নেওয়ার শর্ত বা লেনদেনের প্রশ্নই আসে না। পরে ছড়ানো হলো, এই এক টাকা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে আমি পূর্বাচলে রাজউকের প্লট পেয়েছি। অথচ বাস্তবতা হলো—'শিল্পী কোটায়' এর আগেও ১৫১ জন শিল্পী জমি পেয়েছেন, যাদের কেউই এই সিনেমায় ছিলেন না, কেউ এক টাকায় কাজও করেননি।

তাহলে প্রশ্ন আসে—কীভাবে পেয়েছি? আমি নিয়ম মেনে আবেদন করেছি, সরকারনির্ধারিত মূল্য জমা দিয়েছি। বাকিরাও ঠিক এভাবেই পেয়েছেন। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এটা এমনভাবে বলা হচ্ছে, যেন সিনেমা করেছি আর বিনিময়ে জমি পেয়েছি—যেটা সম্পূর্ণ মনগড়া গল্প।

এসব গুজবের উদ্দেশ্য তথ্য তুলে ধরা নয়, মানুষের মনে বিভ্রান্তি ছড়ানো। আমি সবসময় কাজে বিশ্বাসী। যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারেন, আমি 'মুজিব' সিনেমার বিনিময়ে কোনো সুবিধা নিয়েছি—দয়া করে সামনে আনুন, দর্শকদের জানান।

আমি অভিনেতা। বিনিময়ের জন্য নয়, চরিত্রকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য কাজ করি।

ডেইলি স্টার: 'মুজিব' সিনেমায় অভিনয় করার কারণে বর্তমানে কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে?

আরিফিন শুভ: যেকোনো পেশার মানুষকেই রাজনৈতিক ফ্রেমে আটকে দিলে সেটা তার কাজের স্বাধীনতাকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে তার সৃজনশীলতা থমকে যায়, মনোবল নষ্ট হয়। এটা যদি আপনার কাছে সমস্যা মনে হয়, তাহলে নিশ্চয়ই আমি সেই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি, যেটা আমার প্রাপ্ত নয়। কারণ আমি শুধুই একজন অভিনেতা।

ডেইলি স্টার: 'মুজিব' সিনেমায় আপনি কীভাবে যুক্ত হয়েছিলেন?

আরিফিন শুভ: খোঁজ নিলেই যেকেউ জানতে পারবেন, দেশে যখন 'মুজিব' সিনেমার অডিশন চলছিল, তখন আমাকে কোনো চরিত্রের জন্য ডাকা হয়নি। কিন্তু দেশের বাইরে আমার একটি সিনেমা দেখে পরিচালকের টিম আমাকে খুঁজে পেয়েছিল। বাংলাদেশ থেকে কেউ আমাকে ডাকেনি। বরং পরিচালক নিজেই প্রথম আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন, আমন্ত্রণ জানালেন অডিশনের জন্য। তারপর সেই ধারাবাহিকতায় দুইবার ভারত ও তিন বার বাংলাদেশে অডিশন হয়। কোনো প্রভাব নয়, কাজের যোগ্যতা আর নিষ্ঠা দিয়েই আমি কাজটি পেয়েছিলাম।

ডেইলি স্টার: আপনি রাজনৈতিকভাবে কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন? কিংবা 'মুজিব' সিনেমায় অভিনয়ের পর কি রাজনৈতিকভাবে কোনো সুবিধা নিয়েছেন?

আরিফিন শুভ: সুবিধা নিয়ে থাকলে নিশ্চয়ই সেটার রেকর্ড থাকবে। আমার মনে পড়ে না, আমি কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছি কিংবা রাজনৈতিক কোনো পদ পাওয়ার জন্য ন্যূনতম চেষ্টা চালিয়েছি। রাজনৈতিকভাবে কোনো সুবিধা আমি নিয়েছি—সেটার কোনো প্রমাণ কারো কাছে থাকলে তা প্রকাশ করুক।

ডেইলি স্টার: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় কোথায় ছিলেন এবং আপনার ভূমিকা কী ছিল?

আরিফিন শুভ: যখন আন্দোলন চলছিল, তখন আমি আসলে ছুটছিলাম নিজের ব্যক্তিজীবনের একটি দুর্বিষহ পরিস্থিতি নিয়ে। আমি দেশের বাইরে ছিলাম। দেশের ইন্টারনেট তখন বন্ধ, আমি দেশে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না, অস্থির ছিলাম দেশের পরিস্থিতি নিয়ে। খোঁজ নিয়েও প্রকৃত অবস্থা জানতে পারছিলাম না। দেশে ফিরি ৩১ জুলাই। সেদিনই আমি একটা পোস্ট দিই, যাতে আমি আমার অবস্থান স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছি—ছাত্রদের জন্য সমবেদনা জানাই, দেশের শান্তি কামনা করি। সেই সময়ের মানসিক অবস্থায় আমার পক্ষে তখন যতটুকু বলা সম্ভব ছিল, আমি বলেছি।

ডেইলি স্টার: আপনার অভিনীত 'নূর' সিনেমা অনেকদিন ধরে মুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সিনেমাটা মুক্তি পাচ্ছে না। তার নির্দিষ্ট কোনো কারণ আছে কী?

আরিফিন শুভ: সিনেমাটির মুক্তির প্রস্তুতি এখন চলছে। সঠিক মুক্তির তারিখ নির্ধারণের দায়িত্ব প্রযোজকের। আমি যতদূর জানি, প্রযোজক ও পরিচালক দ্রুততম সময়ের মধ্যে সিনেমাটি মুক্তি দেওয়ার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

ডেইলি স্টার: দীর্ঘদিন ধরে ভারতে 'জ্যাজ সিটি' নামের একটি ওয়েব সিরিজে কাজ করলেন। এটা কী ধরনের কাজ?

আরিফিন শুভ: সনি লিভের 'জ্যাজ সিটি'র কাজ শেষ করে সম্প্রতি দেশে ফিরেছি। আপাতত চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। তবে এতটুকু বলতে পারি—এই যাত্রা শুরু হয়েছিল আড়াই বছর আগে, একটি অডিশনের ডাক থেকে। এরপর কয়েক ধাপের নির্বাচন প্রক্রিয়া পেরিয়ে ২০২৪ সালের মে মাসে চুক্তিবদ্ধ হই। গেল সাত মাস ধরে শুটিং আর ডাবিং মিলিয়ে পুরোটা সময় কাজটি করেছি। এটা আমার প্রথম বলিউড প্রজেক্ট। বাকিটা এখন দর্শকের হাতে—তারাই বলবেন এই নতুন যাত্রা কতদূর পৌঁছায়।

ডেইলি স্টার: ঈদে আপনার অভিনীত ও মিঠু খান পরিচালিত 'নীলচক্র' সিনেমাটি কতটা সাড়া ফেলবে বলে মনে করেন?

আরিফিন শুভ: 'নীলচক্র' শুধু একটি সাসপেন্স থ্রিলার নয়—এটি এই সময়ের জন্য একটি সতর্ক সংকেত। বিশেষ করে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন এবং যারা অভিভাবক—তাদের জন্য এই গল্পটা খুব জরুরি। একটা অসতর্ক মুহূর্ত কীভাবে একটি পরিবারের ভিত নাড়িয়ে দিতে পারে, সেটাই উঠে এসেছে গল্পে। পরিচালক এমন এক বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন, যা নিষিদ্ধ হতে পারে, কিন্তু অস্বীকার করার সুযোগ নেই—কারণ এই গল্পগুলো আমাদের আশপাশেই প্রতিদিন ঘটে চলেছে। প্লটটা সাহসী, কিন্তু জরুরি। সেই বলেই আমি কাজটা করেছি। এখন দর্শকই ঠিক করবেন, তারা এই গল্পটিকে কতটা আপন করে নেন।

Comments

The Daily Star  | English

Russia warns strike on Iran's Bushehr nuclear plant could cause 'Chernobyl-style catastrophe'

Iran and Israel traded further air attacks on Thursday as Trump kept the world guessing about whether the US would join Israel's bombardment of Iranian nuclear facilities.

19h ago