লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম

নদীভাঙনে বছরে বাস্তুহারা ৩ হাজারের বেশি পরিবার

কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও গঙ্গাধর নদীর ভাঙনে প্রতি বছর বাস্তুহারা হচ্ছে ৩ হাজারের বেশি পরিবার। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে সেসব পরিবারের বসতভিটা, আবাদি জমি, ফলের বাগান।
নদীভাঙন
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ফলিমারী গ্রামে ধরলার ভাঙনে নিঃস্ব রমিজা বেওয়া। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও গঙ্গাধর নদীর ভাঙনে প্রতি বছর বাস্তুহারা হচ্ছে ৩ হাজারের বেশি পরিবার। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে সেসব পরিবারের বসতভিটা, আবাদি জমি, ফলের বাগান।

এ ছাড়াও, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয়স্থান নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। প্রতি বছর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিপুল পরিমাণ সম্পদ।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় জানিয়েছে, গত ৫ বছরে ২ জেলায় নদীভাঙনে বাস্তুহারা ১৫ হাজার ৭২০ পরিবারকে সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সেই হিসাবে বছরে ৩ হাজারের বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নদীভাঙন
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার গতিয়াশ্যাম গ্রামে বালুর বস্তা ফেলে তিস্তার ভাঙন রোধের চেষ্টা। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

তবে, নদীভাঙনে প্রতি বছর কী পরিমাণ সম্পদের ক্ষতি হয় এমন তথ্য তিনি দিতে পারেননি।

জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডও এ তথ্য দিতে পারেনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, নদীভাঙনে ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে কখনো জরিপ হয়নি।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল-মামুন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই ২ জেলায় গত ৫ বছরে ভাঙনরোধ ও নদীর তীর রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে।'

'তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও' আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর অধিকাংশই তিস্তাপাড়ের। তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রকল্পের মাধ্যমে খননের পাশাপাশি নদীর তীর রক্ষা করা গেলে ভাঙন রোধ করা যাবে।'

তিনি আরও বলেন, 'শুনেছি, ৮-১০ হাজার কোটি টাকা খরচ করলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব। এটি বাস্তবায়িত হলে ৮০ থেকে ৯০ হাজার হেক্টর জমি চাষযোগ্য হয়ে উঠবে।'

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না গ্রামের খাদিজা বেওয়া (৬৭) ডেইলি স্টারকে বলেন, '৩ ছেলের পরিবার একই ভিটায় থাকতাম। তিস্তার ভাঙনে বসতভিটাসহ আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ছেলেরা পরিবার নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় চলে গেছে। তারা অন্যের জমি ও সরকারি রাস্তার ওপর ঘর তুলে থাকছে।'

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার গতিয়াশ্যাম গ্রামের মজিদুল ইসলাম (৫৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বসতভিটা, ৭ বিঘা আবাদি জমি ও ফলের বাগান তিস্তায় বিলীন হওয়ার পর সরকারি রাস্তার ওপর ঘর তুলেছি। এক সময় পরিবারে সচ্ছলতা ছিল। এখন চরম দারিদ্র্যের মধ্যে আছি। জমি কিনে বাড়ি করার সামর্থ্য নেই।'

নদীভাঙন
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার গতিয়াশ্যাম গ্রামে তিস্তার ভাঙনে ঘর সরাচ্ছে আজিজার রহমান ও আয়েশা বেগম দম্পতি। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

'তিস্তায় ভাঙনের কারণে অসংখ্য পরিবারকে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করতে হচ্ছে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'প্রতি বছর তিস্তা ভাঙছে। নদীপাড়ের মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। অনেক পরিবার গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে।'

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পশ্চিম বজরা গ্রামের কৃষক মোবারক আলী (৬৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিস্তায় বসতভিটা ও ১২ বিঘা জমি হারিয়ে এখন খাস জমিতে ঘর তুলে থাকছি। দিনমজুরি করে আয় করতে হচ্ছে।'

লালমনিরহাট সদর উপজেলার ফলিমারী গ্রামের সালেহা বেওয়া (৬৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে এখন সরকারি রাস্তার ওপর ঘর তুলেছি। সামর্থ্য না থাকায় আর কোনোদিন নিজের ঘর হবে না। ৮ বিঘা আবাদি জমি ও ২ বিঘার কলাবাগান নদীতে বিলীন হয়েছে।'

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার চর শৌলমার গ্রামের জোবের আলী (৬৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বসতভিটা ও ৬ বিঘা আবাদি জমি হারিয়ে এখন ভিক্ষা করছি। ভাঙনে অসংখ্য পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। অনেকে বসতভিটা ও আবাদি জমি হারানোর বেদনা সহ্য করতে না পেরে দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন।'

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভাঙনকবলিত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভাঙন রোধে কাজ করা হয়। কিন্তু, ভাঙন চলে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রকল্প বাস্তবায়ন সরকার দেখবে। এটি বাস্তবায়িত হলে ভাঙন ঠেকানো যাবে।'

Comments

The Daily Star  | English

High Temperature Days: Barring miracle, record of 76yrs breaks today

At least 23 days of this month were heatwave days, which equals the record set in 2019 for the entire year.

11h ago