রপ্তানির সুযোগ রেখে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দরপত্র আহ্বান

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সামুদ্রিক এলাকায় তেল-গ্যাসের অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক কোম্পানিকে (আইওসি) আমন্ত্রণ জানিয়ে দরপত্রের আহ্বান করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)।

রোববার তারা দরপত্রের এই আহ্বান জানায়।

২০১২ সালে ভারতের সঙ্গে ও ২০১৪ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক সীমানা-বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ার পর এবারই প্রথম সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে এই বৃহৎ উদ্যোগ নিলো সরকার।

পেট্রোবাংলার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দরপত্র বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অগভীর সমুদ্রের ১১টি ব্লকের মধ্যে নয়টি (এসএস-০১, ০২, ০৩, ০৫, ০৬, ০৭, ০৮, ১০ ও ১১) এবং গভীর সমুদ্রের ১৫টি ব্লকের (ডিএস-০৮ থেকে ডিএস-২২) জন্য এই দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগে থেকে দুটি অগভীর সমুদ্রের ব্লক ভারতের তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস করপোরেশনকে (ওএনজিসি) অনুসন্ধানের জন্য দেওয়া আছে।

আন্তর্জাতিক যেসব কোম্পানির দৈনিক অন্তত ১৫ হাজার ব্যারেল তেল বা প্রতিদিন ১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের অভিজ্ঞতা আছে, কেবল তাদের দরপত্রে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে।

দরপত্রে অংশ নিতে হলে কোনো কোম্পানিকে নিজ দেশের বাইরে অন্তত একটি কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কোম্পানিগুলো এক বা একাধিক ব্লকের জন্য দরপত্রে অংশ নিতে পারবে।

মডেল প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট (পিএসসি) ২০২৩-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আন্তর্জাতিক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টার মধ্যে আগ্রহী তেল-গ্যাস কোম্পানিকে দরপত্র জমা দিতে হবে।

বিষয়টি নিয়ে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সাবেক সদস্য-সচিব অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সমুদ্রের তেল-গ্যাস আমাদের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু অবস্থা এমন দাঁড়াচ্ছে যে, ভবিষ্যতে এটি যেন আমাদের জন্য অভিশাপে পরিণত হবে। আমার দেশের তেল-গ্যাস আমাকেই বেশি দামে আন্তর্জাতিক কোম্পানির কাছ থেকে কিনতে হবে। আবার তারা যখন উৎপাদন করবে, সেটি অর্থনৈতিক বা অন্য যে কোনো কারণে আমরা কিনতে না পারলে বাইরেও রপ্তানি করা যাবে।'

'বিদেশি কোম্পানি তো তাদের খরচ তোলার জন্য, বেশি মুনাফা অর্জনের জন্য দেশের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি করে গ্যাস উৎপাদন করবে। এটি আমাদের জন্য আর্থিক বোঝা ডেকে আনতে পারে', বলেন তিনি।

আনু মুহাম্মদ বলেন, '২০০৮ সাল থেকে সমুদ্রের গ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে আলোচনা চলছে। সরকার সবসময় বলে আসছে যে আমাদের নিজেদের গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা নেই। কিন্তু যত সময় আন্তর্জাতিক দরপত্র বা বিদেশি কোম্পানিগুলোকে ডেকে আনার পেছনে ছিল, তত মনোযোগ আমাদের নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর পেছনে দেইনি।'

তবে এই দরপত্রকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অনারারি প্রফেসর ড. বদরূল ইমাম ডেইলি স্টারকে বলেন, সমুদ্রে অনাবিষ্কৃত তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক কোম্পানিকে যুক্ত করার উদ্যোগটি অনেক দেরিতে নেওয়া হলো।

'যেহেতু আমাদের সমুদ্রে অনুসন্ধানে ব্যাপক ঘাটতি আছে, তাই বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে এখানে অনুসন্ধানের উদ্যোগ আরও আগেই নেওয়া উচিত ছিল। যদি ১০ বছর আগে তারা সেখানে কাজ শুরু করত, এখন সংকটের সময় তাদের থেকেই তুলনামূলক কম খরচে গ্যাস পেতাম', বলেন তিনি।

আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করতে পিএসসিতে লভ্যাংশের ভাগাভাগি, কিছুটা বাড়তি দামে গ্যাস নেওয়াসহ কিছু শর্ত শিথিলকরণকে গ্রহণযোগ্য মনে করেন তিনি।

'আমরা এখনো জানি না সমুদ্রে কী পরিমাণ সম্পদ আমাদের আছে। কোম্পানিগুলো যদি অনুসন্ধান শুরু করে, সেখানে হাইড্রোকার্বনের উপস্থিতির একটা পূর্ণাঙ্গ চিত্র আমাদের সামনে আসবে। তখন পরবর্তীতে কাদের দিয়ে কীভাবে কাজ করাবে, তা বিবেচনার সুযোগ আছে। পূর্ণাঙ্গ তথ্য থাকলে যেকোনো কোম্পানির সঙ্গে দর কষাকষির সুযোগ থাকে', যোগ করেন বদরূল ইমাম।

সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে পুরো প্রতিবেদন পড়তে ক্লিক করুন Tender floated for offshore oil, gas exploration

Comments

The Daily Star  | English
education in Bangladesh

As a nation, we are not focused on education

We have had so many reform commissions, but none on education, reflecting our own sense of priority.

15h ago