চিকিৎসায় চ্যাটজিপিটির ব্যবহার

প্রতীকী ছবি

চিকিৎসা ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার নিয়ে নিয়মিত গবেষণা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে এআই টুল চ্যাটজিপিটি।

সাধারণ মানুষ চ্যাটজিপিটির প্রতি ব্যাপক আগ্রহ দেখালেও চিকিত্সকরা নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে এর ব্যবহারিক প্রয়োগ সম্পর্কে সচেতন না-ও হতে পারেন।

সম্প্রতি গবেষকরা নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। সেখানে কিছু নির্দিষ্ট উপায়ে চ্যাটজিপিটি, বিশেষ করে এর সর্বশেষ সংস্করণ জিপিটি-৪ এর ব্যবহারের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তারা যেগুলো তুলে ধরেছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে, জিপিটি-৪ একটি রেকর্ড করা ক্লিনিকাল ডেটা শুনে ক্লিনিকাল নোট তৈরি করে, যা ইন্টারঅ্যাকশনে উপস্থিত চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য ও সাইকোডাইনামিক্সকে ধরতে পারে। এই প্রযুক্তির ইলেকট্রনিক মেডিকেল রেকর্ড ব্যবহার করা হলে ক্লিনিকাল ডকুমেন্টেশনের চাপ কমতে পারে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে আর লেখকের প্রয়োজন হবে না।

এ ছাড়া, রোগীর চিকিৎসা ইতিহাসের একটি সারাংশ তৈরি করতে পারে জিপিটি। যা রোগীর বর্তমান রোগের চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি পর্যালোচনা প্রক্রিয়াকে সহজ করতে পারে। রোগীরাও তাদের রেকর্ড খুঁজে পেতে এবং বোধগম্য তথ্য পেতে একটি চ্যাটভিত্তিক পরিষেবা ব্যবহার করতে পারে।

প্রবন্ধে বিশেষভাবে উল্লেখ করা জিপিটি-৪ এর আরেকটি সম্ভাব্য ব্যবহার হলো 'কার্বসাইড কনসালটেশন'। এই পরিস্থিতিতে একজন চিকিত্সক জিপিটি-৪ এর কাছে জানতে চান, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজে আক্রান্ত একজন ডিসপনোয়িক রোগীর তীব্রতা বুঝতে কী দেখা উচিত? জিপিটি-৪ রোগ নির্ণয় ও ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সংক্ষিপ্ত তথ্য বিবরণী তৈরি করে দেয়। প্রাবন্ধিক মনে করছেন, জিপিটি-৪ এর দেওয়া পরামর্শ সবসময় সর্বোত্তম না-ও হতে পারে। তবে তার পরামর্শ, জটিল রোগীদের সম্পর্কে চিকিত্সক ও জিপিটি-৪ এর মধ্যে দীর্ঘ তথ্য বিনিময় হলে তা উপকারী হতে পারে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা প্রদান করলেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, জিপিটির মতো মডেল সহজাতভাবে পাঠ্য বুঝতে পারে না। এগুলো বিভিন্ন ডেটা বা পাঠ্য বিশ্লেষণ করে যেটা বুঝতে পারে তা দিয়েই 'শূন্যস্থান পূরণ' করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ সঠিক না-ও হতে পারে।

এটা এক ধরনের সম্ভাব্য ঝুঁকি। কারণ জিপিটি ইলেকট্রনিক স্বাস্থ্য রেকর্ড এমনভাবে পুনর্গঠন করতে পারে, যা ক্লিনিকাল বাস্তবতাকেই ভুলভাবে উপস্থাপন করতে পারে। অনেক ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ড সিস্টেম বেশ খারাপভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। সেখানে অপ্রাসঙ্গিক, পুনরাবৃত্তিমূলক, অসংগঠিত বা পুরোনো তথ্য থাকে। সেক্ষেত্রে এটা নিশ্চিত করা জরুরি যে জিপিটিকে ক্লিনিকাল দক্ষতার সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করা হবে, বিকল্প হিসেবে নয়।

স্বাস্থ্যসেবায় জিপিটি ব্যবহারে আইনি ও নৈতিক বিষয় বেশ জটিল। আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক প্রবন্ধে লেখকরা চিকিত্সকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে এআইয়ের সহায়তা নেওয়া এবং সম্পূর্ণভাবে এআইয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরেছেন। প্রথম ক্ষেত্রে চিকিত্সকরা বেশ কিছু বাড়তি তথ্য ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহজ হতে পারে এমন তথ্য পেতে পারেন। তবে, এআই সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তা রোগীর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করে। এ ছাড়া, চিকিৎসা পরামর্শের জন্য রোগীর সঙ্গে জিপিটির মাধ্যমে যোগাযোগ তৈরি হলে তাতে সেবার গুণমান এবং রোগীর সঙ্গে চিকিৎসকের সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরির উদ্বেগ বাড়াতে পারে।

স্বাস্থ্যসেবা সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক রেকর্ড সিস্টেমে চলে গেলে রোগীর পুরো ইতিহাসে অ্যাক্সেস পেয়ে যাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এর অর্থ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল ডিজিটাল ডেটা বিশ্লেষণ করে সেগুলো থেকে সম্ভাব্য যেকোনো ক্লিনিকাল বিষয় পরিবর্তন করতে পারবে। কাজেই, এই প্রযুক্তির সম্ভাব্য সুবিধা ও অসুবিধা বোঝা এবং দায়িত্বশীল ও নৈতিক উপায়ে সেগুলোর ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷

স্বাস্থ্যসেবায় জিপিটি ব্যবহার করার অনেক সম্ভাবনা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জও। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দায়িত্বশীল ও কার্যকর উপায়ে স্বাস্থ্যসেবায় জিপিটি ব্যবহারে প্রতিটি বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অনুবাদ করেছেন জান্নাতুল ফেরদৌস

Comments

The Daily Star  | English

Yunus promises election on time

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday reaffirmed his commitment to holding the 13th national election in the first half of February next year.

8h ago