হামলায় আহতের মেডিকেল সনদ না দেওয়ায় সিভিল সার্জনসহ ৩ জনকে আদালতে তলব
হামলায় আহতের মেডিকেল সনদ না দেওয়ার কারণ জানতে নাটোরের সিভিল সার্জন, সহকারী পরিচালক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত এক চিকিৎসককে তলব করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার নাটোরের সিংড়া আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ এই আদেশ দেন।
সিংড়া আমলী আদালতের স্টেনোগ্রাফার মো. শহীদুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল সিংড়া উপজেলার বাগচী চামারী গ্রামের মো. সাইদুল ইসলাম ও তার অপর দুই ভাই জহুরুল ইসলাম ও আবুল কালামের। এর জেরে গত ২০ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে জহুরুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ ও জহুরুলের ছেলে মো. লিটনের লাঠি আঘাতে হাত ভেঙে যায় মো. সাইদুল ইসলামের। পরে নাটোর সদর হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেন সাইদুল ইসলাম। লাঠির আঘাতে ভেঙে যাওয়া হাতে প্লাস্টার করে দেন জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. মুরাদ উদ-দৌলা।'
'পরবর্তীতে ২৭ মার্চ মো. আবুল কালামসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করেন মো. সাইদুল ইসলাম। এসময় আদালত সিংড়া থানা পুলিশকে মামলা রুজু করে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন।'
তবে মামলার আহতের মেডিকেল সনদ পাওয়ার জন্য আধুনিক সদর হাসপাতালে আবেদন করা হলেও সনদ পাননি তদন্তকারী কর্মকর্তা সিংড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল হাই। পরে তিনি আদালতের কাছে মেডিকেল সনদ তলবের জন্য প্রার্থনা করেছেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত হতে ২২ জুন মেডিকেল সনদ প্রদানের জন্য ডা. মো. মুরাদ- উদ-দ্দৌলাকে নির্দেশ দেন আদালত। সেই আদেশের অনুলিপি নাটোরের সিভিল সার্জন এবং আধুনিক সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক বরাবর পাঠানো হয়।
গত ২০ জুলাই হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. পরিতোষ কুমার রায় জানান, মো. সাইদুল ইসলাম আধুনিক সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে টিকিট সংগ্রহ করেন। কিন্তু তিনি ভর্তির সময় কোনো ব্যক্তির দ্বারা জখম প্রাপ্ত হয়েছেন মর্মে পুলিশ কেস রেজিস্ট্রারে নাম ও জখমের বিবরণ লিপিবদ্ধ করেননি। সেজন্য তার মেডিকেল সনদ প্রদান করা সম্ভব হয়নি।
এর প্রেক্ষিতে আদালত থেকে আরেকটি আদেশ পাঠানো হয় যাতে আদালত উল্লেখ করেন যে, 'ভিকটিম কোনো ব্যক্তির দ্বারা জখম প্রাপ্ত হয়েছে কিনা তা বিবেচ্য বিষয় নয়। ভিকটিম আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করছে কিনা সেটা বিবেচ্য বিষয়। ভিকটিম আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকলে তিনি মেডিকেল সনদ পেতে হকদার।'
এরপরে মেডিকেল সনদের পরিবর্তে ডা. মো. মুরাদ-উদ-দ্দৌলা একটি অবগতি পত্র আদালতে পাঠান। এর আগে একই অবগতি পত্র তিনি তদন্ত কর্মকর্তাকেও দিয়েছিলেন।
অবগতি পত্রের প্রেক্ষিতে মো. সাইদুল ইসলামকে সশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি আদালতে উপস্থিত হলে তার চিকিৎসাপত্র ও ক্ষতস্থান পর্যবেক্ষণ করে দেখা হয়। সাইদুলের বক্তব্য অনুযায়ী, তার ডান হাতের হাড় ভেঙে গিয়েছে। তিনি একটি এক্স-রে রিপোর্টও আদালতে দেখান।
এ সংক্রান্ত আদেশে ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, 'ভিকটিমের মেডিকেল সনদ কেন দেওয়া হচ্ছে না তা আদালতের কাছে বোধগম্য নয়। খুন, যখন সংক্রান্ত ফৌজাদারি মামলার সময়ে মেডিকেল সার্টিফিকেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।'
একাধিকবার আদেশ পাঠানো সত্ত্বেও আহতের মেডিকেল সনদ না দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না এবং কর্তব্য অবহেলার বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানাতে আগামী ৩ অক্টোবর সশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. রোজী আরা খাতুন, আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সহকারী পরিচালক ডা. পরিতোষ কুমার রায় এবং একই হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. মুরাদ- উদ-দ্দৌলাকে আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে আহতের মেডিকেল সনদ ও জখমের বিবরণ সংক্রান্ত রেজিস্ট্রারসহ হাজির থাকার জন্য সহকারী পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. রোজী আরা খাতুন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মেডিকেল সার্টিফিকেট না দেওয়ার বিষয়টি আমি জানি না। আদালতের কোন আদেশের বিষয়েও কিছু জানিনা। আদালতের আদেশ পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
অন্যদিকে আদালতের কপি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সহকারে পরিচালক ডা. পরিতোষ কুমার রায়।
Comments