১০ দিনে কাপাসিয়ায় ৩ খুন

স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় গত ১০ দিনের ব্যবধানে অন্তত তিনটি পৃথক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে।

সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কাপাসিয়া উপজেলার সনমানিয়া ইউনিয়নের আড়াল মধ্যপাড়া গ্রামে এক প্রবাসীকে কুপিয়ে হত্যা ঘটনা ঘটেছে।

নিহত জাহিদুল ইসলাম (২৮) সনমানিয়া বরকান্দা গ্রামের মৃত হাদিস উদ্দিনের ছেলে। তার মা রোকেয়া বেগম স্থানীয় ইউপি সদস্য (ওয়ার্ড ৭, ৮ ও ৯)।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, গতকাল রাতে বাড়ির পাশে মুদি দোকানে বসা অবস্থায় ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত তাকে ডেকে নিয়ে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। স্থানীয়রা মুমূর্ষু অবস্থায় জাহিদুলকে উদ্ধার করে প্রথমে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

নিহতের ভাইয়ের মেয়ে সাথী বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কাকা সৌদি প্রবাসী ছিলেন। কিছুদিন আগে দেশে ফিরেছেন। তার পাঁচ বছরের একটা মেয়ে আছে।'

কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, 'নেশার টাকার ভাগাভাগি নিয়ে বন্ধুদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

এর আগে গত ১ জুলাই দুপুরে উপজেলার কড়িহাতা ইউনিয়নের বেহাইদুয়ার গ্রামে নাঈম (২৪) নামে এক যুবককে হত্যা করা হয়। তিনি ওই গ্রামের রাজু মিয়ার ছেলে।

ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, 'পূর্ব বিরোধের জেরে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।'

এর আগে গত ২৫ জুন সকাল ১০টার দিকে উপজেলার ধরপাড়া গ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে নার্গিস আক্তার (৪৫) নামে এক গৃহবধূকে হত্যা করা হয়। তিনি ওই গ্রামের আওলাদ হোসেনের স্ত্রী ছিলেন।

পুলিশ জানায়, পারিবারিক কলহে স্বামী, ননদ ও ভাসুরপুত্রের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে তার ভাসুরের ছেলে নাজমুল শেখ ছুরিকাঘাত করলে নার্গিস গুরুতর আহত হন। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আতিকুর রহমান বলেন, 'রমজানে নার্গিসের স্বর্ণালংকার চুরি নিয়ে নাজমুলের সঙ্গে বিরোধ শুরু হয়। এ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে কয়েক দফা সালিশ হয়েছিল। এ ঘটনার জেরে নার্গিসকে হত্যা করা হয়।'

স্থানীয় বাসিন্দা সালাউদ্দিন আইয়ুবী বলেন, 'অল্প সময়ের মধ্যে তিনটি খুন হলো। প্রশাসনের আরও কঠোর হওয়া দরকার। আমরা সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছি, কার কখন কি হয়ে যায় সেটা নিয়ে।

কাপাসিয়া উপজেলার দিগধা গ্রামের বাসিন্দা শেফাউল হক (৬০) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কাপাসিয়ায় একের পর এক খুনের ঘটনা উদ্বেগজনক। কাপাসিয়ার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে প্রতিনিয়ত খুন হলে তো আমরা কেউই নিরাপদ না। দ্রুত এসব ঘটনা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে। প্রশাসনের ভূমিকা এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি। প্রশাসন যদি কঠোর হয়, তাহলে এসব অপরাধ দমন সম্ভব।'

গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কাপাসিয়া-কালিগঞ্জ) আসাদুজ্জামানের ভাষ্য, 'এই তিনটি ঘটনার একটি পারিবারিক কলহের জেরে এবং বাকি দুটি ঘটনা পূর্ব বিরোধের কারণে। তাই আমি বলবো, হঠাৎ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো বিষয় নেই। এতে সাধারণ মানুষের আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু নেই।'

এসব ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
monetary policy

Can monetary policy rescue the economy?

The question remains whether this policy can rescue the economy from the doldrums and place it firmly on the path of vibrancy.

7h ago