শিশু শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় মাদ্রাসা শিক্ষক বরখাস্ত

শিশু শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় মাদ্রাসা শিক্ষক বরখাস্ত
আবাসিক সুবিধা থাকা এই মাদ্রাসায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে বলে জানিয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। ছবি: সৌরভ হোসেন/স্টার

নারায়ণগঞ্জে ১১ বছর বয়সী শিশু শিক্ষার্থীকে বেত দিয়ে পেটানোর ঘটনায় হাফেজ মাওলানা সাইফুল ইসলাম নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষককে বরখাস্ত করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

গত রোববার ভোরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানীনগর মাদ্রাসায় এই ঘটনা ঘটে। বেত্রাঘাতের এই ঘটনা পরিবারের কাউকে জানাতে ওই শিক্ষার্থীকে নিষেধ করেছিলেন তিনি।

ঘটনার ৩দিন পর বিষয়টি জানাজানি হলে আজ বুধবার দুপুরে ওই শিক্ষককে বরখাস্ত করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উত্তর পাশে অবস্থিত এই ক্বওমী মাদ্রাসাটি 'মাদানীনগর মাদ্রাসা' নামে পরিচিত। আবাসিক সুবিধা থাকা এই মাদ্রাসায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে বলে জানিয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

নির্যাতনের শিকার ১১ বছর বয়সী ওই শিক্ষার্থী গত ১৩ মাস ধরে মাদ্রাসাটির আবাসিক বোর্ডিংয়ে থেকে মাদ্রাসার হেফজ বিভাগে পড়াশোনা করছেন।

শিশুটির বাবা আব্দুল হালিম অপু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত রোববার ফজর নামাজের পর পড়া ভুলে যাওয়ায় হেফজ বিভাগের শিক্ষক হাফেজ মাওলানা সাইফুল ইসলাম আমার ছেলেকে বেত দিয়ে বেধরক পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন। আমার ছেলের পশ্চাদ্দেশে রক্ত জমাট বেঁধে কালোসিরা পড়ে গেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'নির্মমভাবে এই নির্যাতনের পর মাদ্রাসা থেকে আমাদের কাউকে জানানো হয়নি। নির্যাতনের ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য আমাদের ছেলেকে ভয় দিয়েছেন ওই শিক্ষক। তাই সে ভয়ে আমাদের কিছু বলেনি।'

'সপ্তাহে একবার ছেলের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ থাকে। গত মঙ্গলবার বিকেলে তার মা মাদ্রাসায় ছেলেকে দেখতে গেলে সে কান্নাকাটি করে সব কথা জানায়। পরে আমরা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছে এই ঘটনার কারণ জানতে চাই। তখন তারা ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন,' বলেন তিনি।

নির্যাতনের শিকার শিশুটি ডেইলি স্টারকে জানায়, 'ফজরের নামাজের পর হুজুর পড়া ধরেন। সেদিন শরীরটা একটু অসুস্থ ছিল। পড়া পারি নাই দেখে আমাকে উপুড় করে শুইয়ে মোটা বেত দিয়ে অনেকগুলো বাড়ি মারে।'

'এর আগেও পড়া না পারায় উনি মেরেছেন। মারধরের কথা কাউকে বলতে নিষেধ করে দেন।'

শিশুটির বাবা আব্দুল হালিম বলেন, 'আমি ছেলেকে আর মাদ্রাসায় রাখছি না। বাসায় নিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষকরা যদি দায়িত্ব নেন তাহলে মাদ্রাসায় আবার পাঠাবো।'

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মাদ্রাসায় গিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক সাইফুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। তাকে মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ফোনও ধরেননি।

মাদ্রাসার পক্ষ থেকে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হাফেজ মাওলানা আবুল ফাতাহ সাংবাদিকদের জানান, ঘটনাটি রোববার ঘটলেও বিষয়টি মাদ্রাসার কেউ জানতেন না। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিশুটির অভিভাবক মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালে বুধবার দুপুরে এক জরুরি সভার সিদ্ধান্তে অভিযুক্ত শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে।

একইসঙ্গে এই ধরনের নির্যাতনের ঘটনা যাতে আগামীতে কেউ না করেন সেই ব্যাপারে মাদ্রাসার সকল বিভাগীয় প্রধানকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

জানতে চাইলে আবুল ফাতাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই ধরনের কাজের প্রতি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কোনো সমর্থন নেই। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই ঘটনায় যদি অভিভাবকরা আইনগত ব্যবস্থা নেন তাহলে আমরা সহযোগিতা করবো।'

এ বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। তারা অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

JnU students vow to stay on streets until demands met

Jagannath University (JnU) students tonight declared that they would not leave the streets until their three-point demand is fulfilled

1h ago