ডিজিটাল সিলেট সিটি: হটস্পটে নেই ইন্টারনেট, সিসি ক্যামেরা অকার্যকর

সিলেট নগরীকে দেশের প্রথম ডিজিটাল নগরী হিসেবে উন্নত করতে নেওয়া উদ্যোগ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা ও নিরাপত্তার জন্য অত্যাধুনিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো দেশব্যাপী ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছিল।
সিসি ক্যামেরা অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে। ছবি: শেখ নাসির/স্টার

সিলেট নগরীকে দেশের প্রথম ডিজিটাল নগরী হিসেবে উন্নত করতে নেওয়া উদ্যোগ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা ও নিরাপত্তার জন্য অত্যাধুনিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো দেশব্যাপী ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছিল।

তবে 'ডিজিটাল সিলেট সিটি' প্রকল্পের আওতায় নেওয়া এ দুটি উদ্যোগই এখন বিপর্যস্ত। তা চালু রাখতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সিলেট নগরীর যে ১২৬টি ওয়াইফাই হটস্পটের মাধ্যমে বিনামূল্যের ইন্টারনেট সংযোগ 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' চালু হয়েছিল, তার প্রায় সবকয়টি এখনো 'জয়বাংলা' পাসওয়ার্ড দিলে মোবাইলের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। কিন্তু, এর কোনোটিতেই নেই ইন্টারনেট সংযোগ।

নিরাপত্তার জন্য বসানো ১১০টি ক্লোজ-সার্কিট ক্যামেরার মধ্যে ৮০টি ক্যামেরাই ২০১৯ সালে উদ্বোধনের আগেই নষ্ট কিংবা অকার্যকর হয়ে যায়। এখন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) সেসব ক্যামেরা চালু রাখতে ভোগান্তি পোহাচ্ছে।

এসএমপি নিজস্ব অর্থায়নে বেশ কিছু ক্যামেরা ও সংযোগ মেরামত করে ৮০টির মতো ক্যামেরা চালু রেখেছে। তবে ফেস ডিটেকশন ও ভেহিকল নম্বর প্লেট রিকগনিশন সফটওয়্যারের মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে এবং অর্থাভাবে তা নবায়ন করা হয়নি।

এ প্রকল্পের আওতায় থাকা আরেকটি প্রকল্প সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থাপনা এখনো সফটওয়্যার নির্মাণের পর্যায়ে রয়ে গেছে, যা ২০২৪ সালের জুন নাগাদ শেষ হবে।

২০১৭ সালে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ৩০ কোটি ২০ লাখ টাকা বাজেটে 'ডিজিটাল সিলেট সিটি' প্রকল্পের পরিকল্পনা করে, যাতে মোট ১১টি উদ্যোগের প্রাথমিক প্রস্তাবনা ছিল। পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেশিরভাগ উদ্যোগ বাদ দিয়ে কেবল ৩টি উদ্যোগ প্রকল্পের মধ্যে রাখা হয়।

এগুলো হলো— এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থাপনা, আইপি ক্যামেরা বেসড সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট এবং সিলেট ও কক্সবাজারে ওয়াইফাই হটস্পট।

এ প্রকল্পের অধীনে বিসিসি সিলেট নগরীর ৬৪টি এলাকায় ১২৬টি ওয়াইফাই হটস্পট বসানো হয়, যার প্রতিটিতে ১০ এমবিপিএস ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়।

২০২১ সালের ২১ মার্চ এসব ওয়াইফাই হটস্পট সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করে বিসিসি। প্রথম থেকেই এসব সংযোগে ধীরগতির ইন্টারনেট বা প্রায়ই সংযোগ না পাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিয়েছিল।

ওয়াইফাই কানেক্ট করা গেলেও ইন্টারনেট সংযোগ নেই। (বামে) অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে সিসি ক্যামেরা।

সর্বশেষ গত ২ মাস ধরে সবকটি ওয়াইফাই হটস্পটের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সিসিক কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়মিতভাবে ইন্টারনেটের বিল দিতে না পারায় সংযোগগুলো বন্ধ রয়েছে।

সিসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আলম বলেন, 'সিসিকের বাজেট স্বল্পতার কারণে এ খাতে কোনো বরাদ্দ না থাকায় ইন্টারনেটের বিল দেওয়া যাচ্ছে না। তাই ওয়াইফাই হটস্পটে ইন্টারনেট সংযোগ নেই।'

বিভিন্ন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের কাছে দর চাওয়া হলে তারা মাসিক ২ লাখ ৫২ হাজার টাকা থেকে ৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা পর্যন্ত দর দিয়েছেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বিষয়টি মেয়রসহ কাউন্সিলরকে জানানো হয়েছে। পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাওয়া গেলে আবারও ইন্টারনেট সংযোগ চালু করা হবে।'

'ডিজিটাল সিলেট সিটি' প্রকল্পের অধীনে বিসিসি নগরীতে ১১০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছিল, যার মধ্যে ফেস ডিটেকশন ও গাড়ির নাম্বার প্লেট রিকগনিশনের ব্যবস্থা ছিল।

২০১৯ সালের জুনে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের উপস্থিতিতে এ সার্ভেইল্যান্স সিস্টেমের উদ্বোধন করা হয়, যার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ বসানো হয় সিলেটের কোতোয়ালী থানায়।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ বলেন, 'তখন অনানুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যবস্থা এসএমপির কাছে হস্তান্তর করা হয়। কারণ উদ্বোধনের আগেই সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন কাজের জন্য ৮০টির মতো ক্যামেরা কিংবা ক্যামেরার ফাইবার অপটিকস সংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।'

তিনি বলেন, 'আমরা নিজস্ব বাজেটে প্রায় ৫০টির মতো ক্যামেরা ও সংযোগ চালু করেছি। কিন্তু নবায়ন ফি পরিশোধ না করায় ফেস ও নম্বর প্লেট রিকগনিশন সফটওয়্যার মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে।'

এসএমপি কমিশনার আরও বলেন, 'আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এখাতে বিশেষ বরাদ্দের আহ্বান জানিয়েছি। সিটি করপোরেশনকেও তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ফাইবার অপটিকস সংযোগ ও ক্যামেরা মেরামত করে দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছি।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আলম বলেন, 'সিসিকের সড়ক সম্প্রসারণ কাজের সময় বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণ করতে গিয়ে ক্যামেরা ও ক্যাবলের ক্ষতি হয়েছে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ না থাকায় আমরা চাইলেও এর ক্ষতিপূরণ করতে পারছি না।'

'ডিজিটাল সিলেট সিটি' প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) ম্যানেজার (সিকিউরিটি অপারেশনস) মোহাম্মদ মহিদুর রহমান খান বলেন, 'প্রকল্পের এই ২টি অংশের কাজ সমাপ্তের পর তা যথাযথ দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের (সিলেট সিটি করপোরেশন ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'চুক্তি অনুযায়ী প্রথম ১ বছর বিসিসি মেইনটেইন্যান্সের কাজ করেছে। এরপর থেকে প্রকল্পের এ ২টি অংশের সম্পূর্ণ দায়িত্ব যথাযথ কর্তৃপক্ষের।'

Comments

The Daily Star  | English
Raushan Ershad

Raushan Ershad says she won’t participate in polls

Leader of the Opposition and JP Chief Patron Raushan Ershad today said she will not participate in the upcoming election

5h ago