খেয়া নৌকার বৈঠায় চলে আকলিমার জীবন

পঞ্চাষোর্ধ্ব আকলিমার জীবন চলে খেয়া নৌকার বৈঠা বেয়ে। ২০ বছর ধরে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার বকুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের দোয়ানী গ্রামের রৌনার খেয়াঘাটে খেয়া নৌকা চালান তিনি। বয়সের ভারে শরীরে ক্লান্তি এলেও জীবিকার তাগিদে চালাতে হয় নৌকা।
খেয়া নৌকা চালাচ্ছেন আকলিমা। ছবি: স্টার

পঞ্চাষোর্ধ্ব আকলিমার জীবন চলে খেয়া নৌকার বৈঠা বেয়ে। ২০ বছর ধরে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার বকুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের দোয়ানী গ্রামের রৌনার খেয়াঘাটে খেয়া নৌকা চালান তিনি। বয়সের ভারে শরীরে ক্লান্তি এলেও জীবিকার তাগিদে চালাতে হয় নৌকা।

স্থানীয়রা জানান, ২১ বছর আগে আকলিমা বেগমের স্বামী ফুল খান মারা যান। ছোট তিন মেয়ে নিয়ে কীভাবে সংসার চলবে সেই দুশ্চিন্তায় পড়েন তিনি। মেয়েদের মুখে দু মুঠো খাবার তুলে দিতে অন্যের বাড়িতে কাজ শুরু করেন। আবার কখনও করেন দিনমজুরি।

আকলিমার গ্রামের সুতাবাড়িয়া নদী। নদীর পশ্চিম পাড়ে গলাচিপা উপজেলার দোয়ানী গ্রাম আর অন্য পাড়ে দশমিনা উপজেলার মীরমদন গ্রাম। এ দু গ্রামের মাঝখানে আকলিমার বাড়ির পাশে দিয়ে প্রবাহিত সুতাবাড়িয়া নদীতে খেয়াঘাট। এ খেয়াঘাটের এলেম গাজী মারা যান। খেয়া চালানোর জন্য যখন কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না। নৌকার মাঝি হতে এগিয়ে আসেন আকলিমা। হাতে তুলে নেন বৈঠা। তারপর কেটে গেছে ২০ বছর।

সম্প্রতি খেয়াঘাটে গিয়ে দেখা যায়, আকলিমা বেগম খেয়ানৌকায় যাত্রী পারাপার করছেন। বিনিময়ে যাত্রীদের কাছ থেকে জনপ্রতি পাঁচ টাকা আদায় করছেন। ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কখনও বচসা হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা লতিফ সিকদার বলেন, আকলিমা বেগম নারী হয়েও খেয়াঘাটটি সচল রেখেছেন । জীবিকার তাগিদে নৌকায় যাত্রী পারাপার করছেন। এলাকার লোকজনও সংগ্রামী ও সাহসী আকলিমার প্রশংসা করেন।

আকলিমা বেগম বলেন, কৃষক স্বামী ফুল খাঁ মারা যাওয়ার পর অন্যের বাড়িতে কাজ করতাম। এরপর দিনমজুরি। ফলে কাজের জন্য বিভিন্ন এলাকায় যেতে হতো। সন্তানদের ঘরে একলা রেখে যাওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বাড়ির পাশের খেয়াঘাটের একমাত্র নৌকাটির মাঝি এলেম গাজী মারা যাওয়ার পর খেয়া পারাপারের মাঝি পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপর ভেবেচিন্তে ওই খেয়াঘাটের মাঝি হই।

কিন্তু নিজের নৌকা না থাকায় আকলিমার ভাই আবদুল মন্নান মৃধা একটি পুরোনো নৌকা কিনে দেন। খেয়া ঘাট থেকে যা আয় হয় তাই দিয়ে চলে যায় তার সংসার। প্রতিদিন আয় হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।

তিনি বলেন, এভাবে খেয়া পারাপার করে তিন মেয়েকেই বিয়ে দিয়েছেন। তবে বছর খানেক আগে ছোট মেয়েকে এক সন্তানসহ স্বামী তার কাছে রেখে গেছেন। খেয়া পারাপার আর বিধবা ভাতা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে।

শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন সংগ্রামী এই নারী। এখন আর সেভাবে বৈঠা চালাতে পারেন না তিনি। তাই আকলিমা চান কেউ তাকে আর্থিক সহযোগিতা করলে খেয়াঘাটে ছোট একটি দোকান বা হাঁসমুরগির খামার করবেন।

Comments

The Daily Star  | English
DHL Daily Star Bangladesh Business Awards 2023

DHL, Daily Star honour five business luminaries for outstanding achievements

The theme of this year's event is "Bangladesh on the rebound".

7h ago