রম্য রচনার জন্য মেয়র তাপসের ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি: ডেইলি স্টারের বক্তব্য

রম্য রচনাটিকে একটি ‘প্রতিবেদন’ বা ‘কলাম’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা তথ্যগতভাবে ভুল।

গত ১৩ মে দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি রম্য রচনায় মানহানি হয়েছে দাবি করে ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

গত বুধবার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে মেয়র তাপসের আইনজীবী মেজবাহুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ডেইলি স্টার তাদের প্রিন্ট ও অনলাইন সংস্করণে 'কাটিং ট্রিজ টু মেক ওয়ে ফর এয়ার' শিরোনামে একটি 'কলাম' প্রকাশ করেছে।

তিনি বলেন, কলামে ঢাকা সাউথ সিটি করপোরেশনের নাম বিকৃত করে 'ধোকা সাউথ টাউন করপোরেশন' করা হয়েছে। যিনি 'কলাম'টি লিখেছেন, তিনি তার নিজের বক্তব্য উদ্ধৃতি চিহ্ন দিয়ে মেয়রের বক্তব্য বলে চালিয়েছেন, বিকৃত করে উপস্থাপন করেছেন।

তিনি বলেন, 'পেনাল কোডের বিদ্যমান আইনে এমন বক্তব্য মানহানিকর।'

'প্রতিবেদনটি পড়ার পর ডিএসসিসি মেয়র আমাকে আইনি ব্যবস্থা নিতে বলেন এবং প্রাথমিকভাবে সেই অনুযায়ী আমি নোটিশ পাঠিয়েছি। সেখানে আমরা দুটি বিষয় চেয়েছি—২৪ ঘণ্টার মধ্যে অনলাইন থেকে প্রতিবেদনটি সরিয়ে ফেলতে হবে ও পত্রিকায় নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০০ কোটি টাকা দিতে হবে,' বলেন তিনি।

নোটিশটি পাওয়ার পর প্রাপকরা কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন, সেটি দেখে মেয়রের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান আইনজীবী মেজবাহুর রহমান।

শেখ ফজলে নূর তাপসের পক্ষে গত ৫ জুন আইনি নোটিশটি পাঠান মেজবাহুর রহমান। এতে বলা হয়েছে, 'আমাদের মক্কেলকে হেয় ও হয়রানির অপরাধমূলক অভিপ্রায়ে জাতীয় দৈনিক, অনলাইন প্রকাশনা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং নেটওয়ার্কে মানহানিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে মেয়র, তার পরিবার ও তার প্রতিষ্ঠানের কষ্টার্জিত সুনামের ক্ষতি করা হয়েছে।' এ জন্য পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম, নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক এবং লেখক নাজিবা বাশারকে লিগ্যাল নোটিশ প্রাপ্তির দিন থেকে ৭ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়, নিবন্ধটি বিদ্যমান আইনে সাংবাদিকতা নীতিমালার পরিপন্থী।

গতকাল ব্রিফিংয়ে এই আইনজীবী জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে নোটিশ প্রাপকদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আইনি নোটিশের জবাবে আমাদের বক্তব্য

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের পক্ষে ব্যারিস্টার মেজবাহুর রহমানের সই করা আইনি নোটিশটি লেক্স কাউন্সেল গত ৫ জুন পাঠায়। এতে বলা হয়েছে, গত ১৩ মে আমাদের স্যাটায়ারডে'র সংখ্যায় প্রকাশিত 'কাটিং ট্রিস টু মেক ওয়ে ফর এয়ার' শিরোনামে একটি রম্য রচনা নোটিশ প্রদানকারীর জন্য অত্যন্ত আপত্তিজনক এবং মানহানিকর।

নোটিশটি আমরা ৬ জুন বিকেলে পেয়েছি এবং সেখানে আমাদের জবাব দেওয়ার জন্য মাত্র ২ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের প্রতিক্রিয়া জানানোর আগেই লেক্স কাউন্সেল ৭ জুন ২০২৩ একটি প্রেস ব্রিফিং করে। সেখানে লেক্স কাউন্সেল জানায়, মেয়র তাপস দ্য ডেইলি স্টারকে আইনি নোটিশ দিয়ে মানহানির জন্য ১০০ কোটি টাকা চেয়েছেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে রম্য রচনাটিকে একটি 'প্রতিবেদন' বা 'কলাম' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা তথ্যগতভাবে ভুল।

আইনি নোটিশ এবং পরবর্তী ব্রিফিংয়ের প্রতিক্রিয়ায়, আমরা বিনীতভাবে পুনরায় বলতে চাই যে এটি কোনো 'প্রতিবেদন' বা 'কলাম' নয়, বরং একটি রম্য রচনা, যা বেশিরভাগ মূলধারার সাংবাদিকতায় প্যারোডি আকারে প্রকাশিত হয়। কৌতুক ও নির্মোহ হাস্যরস রম্য রচনার ভিত্তি। সারা বিশ্বেই গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষমতাবান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে এমন রম্য রচনা লেখা হয়। রাজনৈতিক নেতা, নোবেলজয়ী, বিখ্যাত লেখক এবং প্রখ্যাত অ্যাক্টিভিস্টরা এমন রম্য রচনার বিষয় হন। এটি প্রমিত সাহিত্য ও সাংবাদিকতার অনুশীলন।

তবে এটি জেনে আমরা খুবই বিস্মিত যে, আমাদের সম্পূর্ণভাবে ভুল বোঝা হয়েছে। আমাদের নিবন্ধটি কোনোভাবেই কাউকে অপমান, হেয় বা আঘাত করার উদ্দেশ্যে ছিল না। এটি কেবল একটি রম্য রচনা ছিল যা আমাদের সাপ্তাহিক স্যাটায়ারডে-তে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রসঙ্গটি নিয়ে জনগণের আগ্রহ থাকায় এবং এ নিয়ে অনেক প্রতিবেদন, নিবন্ধ এবং সম্পাদকীয় প্রকাশ হওয়ায় আমরা বিষয়টি বেছে নেই।

সাংবাদিকতায় এটি দীর্ঘদিন ধরে চর্চিত এবং সারা বিশ্বে বহুল প্রচলিত যে, গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা রম্য রচনার বিষয় হন। এই লেখাটি জনসাধারণের উদ্বেগের একটি বিষয়ে আরও মনোযোগ আকর্ষণ করতে এবং কর্তৃপক্ষকে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা ও পুনরায় মূল্যায়ন করতে সহায়তার জন্য লেখা হয়েছিল। আমরা আবারও বলছি, কোনোভাবেই কাউকে আঘাত করার জন্য এটি লেখা হয়নি। এটি কোনোভাবেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল না।

তবুও, আমাদের রম্য রচনাটি নোটিশ প্রদানকারীর মনে কষ্ট দিয়েছে জেনে আমরা সমবেদনা জানাচ্ছি।

সদিচ্ছার নিদর্শন স্বরূপ, আইনি নোটিশ পাওয়ার পর আমরা অনলাইন থেকে রম্য রচনাটি সরিয়ে নিয়েছি।

—সম্পাদক

Comments