১ কিলোমিটার খালে ৮ বাঁধ, ৫০০ একর কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা

পানি অপসারণ না হলে আমরা জমিতে আমন চাষ করতে পারব না।
১ কিলোমিটার খালে ৮ বাঁধ, ৫০০ একর কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা
পটুয়াখালীর সদর উপজেলার মাদার বুনিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম হেতালিয়া ও বিরাজলা গ্রামের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ খালে বাঁধ দিয়ে চলছে মাছ চাষ | ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

পটুয়াখালীর সদর উপজেলার মাদার বুনিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম হেতালিয়া ও বিরাজলা গ্রামের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ খালে বাঁধ দেওয়ায় প্রায় ৫০০ একর কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সরকারি এই খালে অবৈধভাবে ৮টি বাঁধ দিয়ে স্থানীয় ৫ জন মাছ চাষ করছেন।

জলাবদ্ধতার কারণে আমন চাষ ব্যাহত হওয়ায় স্থানীয় চাষিরা বাঁধ অপসারণে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বিরাজলা গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই খাল দিয়ে বর্ষায় কৃষি জমির পানি নিষ্কাশন হতো। ১ বছর আগে ওই এলাকার আলামিন খাঁ, হানিফ খান, হালিম খানসহ কয়েকজন স্থানীয় লোক খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। ফলে বর্ষায় কৃষি জমির পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়।'

'এবার প্রায় ৫০০ একর জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এসব জমিতে আমন চাষ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে,' বলেন তিনি।

বাঁধ অপসারণে ১ মাস আগে আব্দুল খালেক পটুয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।

একই গ্রামের আরেক কৃষক মো. ফারুক বিশ্বাসের জমি এই বর্ষায় তলিয়ে গেছে। 

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পানি অপসারণ না হলে আমরা জমিতে আমন চাষ করতে পারব না।'

খালে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ ব্যাহত করায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে মত দেন দক্ষিণ বিরাজলা গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান বিশ্বাস।

পশ্চিম হেতালিয়া গ্রামের এক গৃহবধূ পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, 'পানির প্রবাহ বন্ধ করে মাছ চাষ করায় খালের পানি দূষিত হয়ে গেছে। আগে খালের পানি গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করতাম। এখন আর ব্যবহার করা যায় না। এতে আমরা বিপাকে পড়েছি।'

১ কিলোমিটার খালে ৮ বাঁধ, ৫০০ একর কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা
খালটিতে বাঁধ দিয়ে বিভক্ত করে একাধিক পুকুর তৈরি করা হয়েছে | ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

গতকাল বুধবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, খালটিতে বাঁধ দিয়ে বিভক্ত করে একাধিক পুকুর তৈরি করা হয়েছে। আর তাতেই হচ্ছে মাছ চাষ। 
খালের একাংশ ভরাট করে গোয়াল ঘর তৈরি করতেও দেখা যায়। বিরাজলা গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান বলেন, 'আমার বাড়িতে জায়গা কম। তাই খালের কিছু অংশ ভরাট করে গোয়াল ঘর তৈরি করেছি।'

এই খালে মাছ চাষ করছেন পশ্চিম হেতালিয়া গ্রামের বাসিন্দা আল আমিন খান। তিনি বলেন, 'আমরা খালটির একাংশে মাছ চাষ করছি। আরও অনেকে খালটি নিজেদের দখলে রেখেছেন। তারা দখল ছেড়ে দিলে আমরাও বাঁধ অপসারণ করে দেবো।'

বাকি ৪ জন খাল দখলের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পটুয়াখালী সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ২০ জুলাই উপজেলার মাসিক উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় এ বিষয়টি আমি উপস্থাপন করেছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরেজমিনে তদন্ত করে তাকে অবহিত করতে বলেছেন।'

'আমি ইতোমধ্যেই ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং খালটিতে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। এ ব্যাপারে শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে,' বলেন তিনি।

যোগাযোগ করা হলে পটুয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুর রহমান বলেন, 'প্রবাহমান খালে বাঁধ দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। এটি একটি অপরাধ। স্থানীয় কৃষকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা শিগগির বাঁধগুলো অপসারণ করব।'

Comments

The Daily Star  | English
Islami Bank's former managing director Abdul Mannan

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago