বাংলাদেশ

জাবিতে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকারীদের বহিষ্কারাদেশ বাতিল চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের বিবৃতি

'বহিষ্কারাদেশটি যে প্রক্রিয়ায় কার্যকর করা হলো সেটিও বিস্ময়কর'
নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের খোলা চিঠি
ছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকারীদের মধ্যে দুই শিক্ষার্থীকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে জানিয়ে এর নিন্দা ও অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

আজ রোববার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৮ জন শিক্ষক সাক্ষর করেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান ঘটনাপ্রবাহ বিষয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। একের পর এক সংকটের জেরে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিদ্যায়তনিক কার্যক্রম ক্রমাগত সংকুচিত হয়ে পড়েছে, যার প্রধান কারণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলা, অদূরদর্শিতা ও অপতৎপরতা এবং ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দুর্দমনীয় স্বেচ্ছাচারিতা।'

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি অমর্ত্য রায় ও সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের দেয়ালের একটি পুরোনো দেয়ালচিত্র মুছে ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি অঙ্কনের অভিযোগে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শিক্ষকেরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে এমন অনানুষ্ঠানিক দেয়ালচিত্র অঙ্কন, তা মুছে ফেলে নতুন চিত্র অঙ্কন, পুরোনো বা ছেঁড়া পোস্টারের উপরে নতুন পোস্টার সাঁটানো একটি নিত্য ঘটমান বাস্তবতা। সেই বাস্তবতায় এই দুই ছাত্রনেতার একটি গ্রাফিতি অঙ্কনে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে এক বছরের বহিষ্কারাদেশের মতো দণ্ড যুক্তিসঙ্গত ও বোধগম্য নয়। বিস্ময় ও পরিতাপের বিষয় হলো, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উদ্দেশ্যমূলকভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো সম্মানীয় ব্যক্তিত্বের ইমেজকে এই ইস্যুতে ঢাল হিসেবে 'ব্যবহার' করার চেষ্টা করছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক, বিব্রতকর ও নিন্দনীয়।'

'অন্যদিকে, বহিষ্কারাদেশটি যে প্রক্রিয়ায় কার্যকর করা হলো সেটিও বিস্ময়কর। কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই এই দুই ছাত্রনেতাকে তদন্ত কমিটিতে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ডাকা হয়।'

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, এই তদন্ত কমিটির প্রধান যে শিক্ষক, তিনি নিজেও নিজের বিভাগের সহকর্মীকে যৌন নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে পদাবনতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। এমন একজন ব্যক্তিকে এ ধরনের গুরুতর তদন্ত কমিটির প্রধান করায়, তদন্ত কমিটির নৈতিক অবস্থান নিয়েও স্বভাবতই প্রশ্ন এসে যায়। …অথচ, সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই দুই ছাত্রনেতাকে এক বছরের বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয়েছে।'

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক জানায়, 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলন দমাতে চিরাচরিত প্রশাসনিক কায়দায় সাজা দেবার এ ঘটনাটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলেই প্রতীয়মান হয়। একই সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে যৌন নিপীড়নের দায়ে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত হওয়া শিক্ষকের ঘটনাটিতেও আমরা পূর্ণ সমাধান দেখতে পাই না।'

বিবৃতিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এরূপ নিপীড়নমূলক পদক্ষেপের নিন্দা এবং যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিহিংসামূলক আচরণ না করার আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে সই করেছেন- কামরুল হাসান মামুন, অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অলিউর সান, প্রভাষক, ইংরেজি এবং মানবিক বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, কাজী মারুফুল ইসলাম, অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তাসনীম সিরাজ মাহবুব সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আ-আল মামুন, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, মোশাহিদা সুলতানা, সহযোগী অধ্যাপক, একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফর্মেশন সিস্টেমস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সৈয়দ মইনুল আলম নিজার, সহযোগী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মো. মাসউদ ইমরান, অধ‍্যাপক, প্রত্নতত্ত্ব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ‍্যালয়, মানস চৌধুরী, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ,  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ‍্যালয়, রায়হান রাইন, অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সৌমিত জয়দ্বীপ, সহকারী অধ্যাপক, স্কুল অব জেনারেল এডুকেশন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ নাহিদ নিয়াজী, সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজী, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, মিম আরাফাত মানব, প্রভাষক, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইমরান কামাল, সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়; সামজীর আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক, বাংলা, উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়; ইসমাইল সাদী, সিনিয়র লেকচারার, স্কুল অব জেনারেল এডুকেশন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়; কাব্য কৃত্তিকা, প্রভাষক, সেন্টার ফর আর্কিওলজিকাল স্টাডিজ, ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ; আরাফাত রহমান, সহকারী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; সামিনা লুৎফা, সহযোগী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; মাহমুদুল সুমন, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ‍্যালয়; আর এ এম হাসান তালুকদার, প্রভাষক, স্কুল অফ জেনারেল এডুকেশন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়; ফাহমিদুল হক, ভিজিটিং প্রফেসর, সেন্টার ফর এক্সপেরিমেন্টাল হিউম্যানিটিজ, বার্ড কলেজ, যুক্তরাষ্ট্র; সুমন সাজ্জাদ, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; আব্দুর রাজ্জাক খান, সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; মাহমুদা আকন্দ, সহযোগী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; সাবিকুন নাহার, সহযোগী অধ্যাপক, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; রুশাদ ফরিদী, সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; মোঃ মাহফুজ হাসান ভূঁইয়া, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য, ইংরেজি বিভাগ, উত্তরা ইউনিভার্সিটি; মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; আইনুন নাহার, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান, জাহাংগীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; সায়েমা খাতুন, সাবেক সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; স্বাধীন সেন, অধ্যাপক, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা; আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত), অর্থনীতি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; মো. মনিরুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; তৈমুর রেজা, পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো, সাউথ এশিয়ান ল‍্যাঙ্গুয়েজেস অ‍্যান্ড সিভিলাইজেশনস, ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো, যুক্তরাষ্ট্র; শরৎ চৌধুরী, সহকারী অধ্যাপক, ইএসএস, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়; মোশরেকা অদিতি হক, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; জি এইচ হাবীব, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, সাংবাদিকতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; জি এইচ হাবীব, সরকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; মোহাম্মদ আজম, অধ্যাপক, বাংলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; জোবাইদা নাসরীন, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; সৌভিক রেজা, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; মাইদুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; মিজানুর রহমান খান, সিনিয়র লেকচারার, বাংলা, উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়; সৌম্য সরকার, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়; অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক, অণুজীব বিজ্ঞান, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; কাজলী সেহরীন ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; জাকিয়া সুলতানা মুক্তা, সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ, শাকিলা আলম, সহকারী অধ্যাপক, বাংলা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়; জীবন কৃষ্ণ মোদক, সহকারী অধ্যাপক, পর্দাথ বিজ্ঞান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ; পারভীন জলী, অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; খাদিজা মিতু, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; সায়মা আলম, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, চট্টগ্রাম বিশ্বিবদ্যালয়।

Comments

The Daily Star  | English

Informal Sector Workers: Their rights glossed over, always

Of the over 7 crore people employed in Bangladesh, 85 percent (nearly 6 crore) are vulnerable as they work in the informal sector, which lacks basic social and legal protection, and employment benefits.

2h ago