নিয়োগ বাণিজ্যে অভিযুক্ত মাদ্রাসা অধ্যক্ষ অবশেষে বহিষ্কৃত
নিয়োগে অনিয়ম, ঘুষ লেনদেন, প্রশ্ন ফাঁসসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে নরসিংদীর পলাশের ইছাখালী ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আকম রেজাউল করিমকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
আজ শনিবার দুপুরে মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদ তাকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। যাদের নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ আছে তাদের নিয়োগও স্থগিত করা হয়েছে।
ঘোড়াশাল পৌরসভার মেয়র মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আল মোজাহিদ হোসেন তুষার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিয়োগ অনিয়ম, প্রশ্নফাঁসসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় অধ্যক্ষকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিতর্কিত পরীক্ষায় নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে।
উল্লেখ, গত ১৪ ডিসেম্বর তিনটি শূন্য পদের বিপরীতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তিতে ইবতেদায়ী শাখার প্রধান, কম্পিউটার অপারেটর ও ল্যাব সহকারী পদের জন্য আবেদন চাওয়া হয়।
এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন বিকেলে কম্পিউটার অপারেটর পদে পলাশ উপজেলার তানভীর আহমেদ ও ল্যাব সহকারী পদে শিবপুর সাধারচর এলাকার ইতি আক্তারকে নির্বাচিত করা হয়।
নিয়োগ পরীক্ষার দুই দিন আগে ল্যাব সহকারী পদে এক আবেদনকারীর সঙ্গে অভিযুক্ত অধ্যক্ষের ফোনে কথোপকথন ফাঁস হয়, যেখানে অধ্যক্ষ টাকার বিনিময়ে ওই প্রার্থীকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেন।
পরে ২৯ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসন ওই নিয়োগ কমিটির সভাপতি আবু কাউছারকে অভিযুক্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
নোটিশে বলা হয় যে, 'নিয়োগ পরীক্ষায় কম্পিউটার অপারেটর ও ল্যাব সহকারী পদে প্রার্থীকে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের ভিত্তিতে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, যা প্রকাশিত অডিও ক্লিপের কথোপকথনের মধ্যে সুস্পষ্ট।'
একইদিন দ্য ডেইলি স্টার বাংলা অনলাইনে 'নরসিংদীতে মাদ্রাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ' শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর আরও ৪ চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে অধ্যক্ষের ঘুষ লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।
তাদের মধ্যে চাকরিপ্রার্থী মো. আশরাফ আলীকে সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৮ লাখ টাকা নেন অধ্যক্ষ। পরে, চাকরি দিতে না পারায় অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা ফেরতও দেন।
আশরাফ আলীর অগ্রণী ব্যাংকের স্টেটমেন্ট থেকে জানা যায়, তার অ্যাকাউন্টে রেজাউল করিম ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী এক মাসের মধ্যে ৪ ধাপে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেন।
জানতে চাইলে আশরাফ আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অধ্যক্ষ চাকরি দিতে না পারায় আমার দেওয়া ৮ লাখ টাকার মধ্যে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ দেন এবং বাকি ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দিয়েছেন।'
অপর তিন প্রার্থীর কাছ থেকে অধ্যক্ষ নগদ টাকা নিয়েছেন এবং চাকরি না হওয়ায় ফেরত দিয়েছেন বলেও জানান তারা।
Comments