এখনো উদ্ধার হয়নি থানা থেকে লুট হওয়া ২ হাজার অস্ত্র, ৩ লাখ গুলি
লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি নিকটস্থ থানায় জমা দেওয়ার জন্য সরকারের বারবার আহ্বান জানালেও এখনো তিন লাখেরও বেশি গুলি এবং প্রায় দুই হাজার অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
সরকার আজ বুধবার থেকে অস্ত্র উদ্ধারে দেশব্যাপী যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে। এই যৌথ অভিযানে অংশ নেবে সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যরা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম বৈঠকের পর গতকাল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, যাদের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে তাদের অস্ত্রসহ সব অস্ত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত।
গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বিক্ষুব্ধ জনতা দেশের বিভিন্ন থানা ও প্রতিষ্ঠান থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি লুট করে।
১২ আগস্ট থেকে পুলিশ সদর দপ্তর একাধিকবার অস্ত্র ও গুলি জমা দেওয়ার আহ্বান জানায় এবং গতকাল এগুলো জমা দেওয়ার সময়সীমা শেষ হয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পুলিশ, বিভিন্ন থানা ও প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ হাজার ৮২৯টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ছয় লাখ ছয় হাজার ৭৪২টি গুলি লুট হয়েছে।
এর মধ্যে তিন হাজার ৭৬৩টি অস্ত্র এবং দুই লাখ ৮৬ হাজার ৮২টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। অর্থাৎ দুই হাজার ৬৬টি অস্ত্র এবং তিন লাখ ২০ হাজার ৬৬০টি গুলি নিখোঁজ রয়েছে।
অস্ত্রের মধ্যে রাইফেল (চীনা), এসএমজি, পিস্তল, শটগান, টিয়ারগ্যাস লঞ্চার এবং সিগন্যাল পিস্তল।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৩১ হাজার ৪৪টি টিয়ারশেল, এক হাজার ৪৫৫টি টিয়ারগ্যাস গ্রেনেড, চার হাজার ৬৯২টি সাউন্ড গ্রেনেড, ২৯১টি স্মোক গ্রেনেড, ৫৫টি স্টান গ্রেনেড, ৮৯৩টি মাল্টিপল ব্যাং স্টান গ্রেনেড এবং ১৭৭টি টিয়ারগ্যাস স্প্রে লুট করা হয়েছিল।
এর মধ্যে ২২ হাজার ১৩৯টি টিয়ারশেল, ৭০৪টি টিয়ারগ্যাস গ্রেনেড, দুই হাজার ১১৬টি সাউন্ড গ্রেনেড, ২১৩টি কালার স্মোক গ্রেনেড, ১৮টি স্টান গ্রেনেড, ৫৩৩টি মাল্টিপল ব্যাং স্টান গ্রেনেড এবং ৯৪টি টিয়ারগ্যাস স্প্রে উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক মো. রেজাউল করিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যৌথ অভিযানে সময় আমরা লুট হওয়া অস্ত্রসহ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করব।'
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেসামরিক নাগরিকদের দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করেছে বর্তমান সরকার। গত ২৫ আগস্ট এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়।
পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনকে দমন করতে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নির্বিচারে গুলি চালানোর কারণে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, এসব আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেওয়ার সময়ও শেষ হয়েছে গতকাল। ফলে এসব অস্ত্র অবৈধ বলে বিবেচিত হবে এবং যাদের কাছে এসব অস্ত্র রয়েছে তাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ডেটাবেজে প্রায় ৫০ হাজার ৩১০ বৈধ অস্ত্র লাইসেন্সধারী রয়েছেন। তবে এর মধ্যে কতগুলো লাইসেন্স আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত করতে পারেননি কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদর দপ্তরের আরেকজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, 'আমরা ডেটাবেজে জমা হওয়া অস্ত্রের তথ্য যোগ করে তারপর বলতে পারব যে এখনো কত অস্ত্র পাওয়া যায়নি।'
Comments