নারীর অবদানকে স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ রাষ্ট্র-সমাজ-পরিবার: সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি

সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির র‌্যালী। ছবি: সংগৃহীত

তৈরি পোশাকখাতসহ কর্মক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেখে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে গেলেও নারীর অবদানকে মর্যাদা ও স্বীকৃতি দিতে রাষ্ট্র-সমাজ-পরিবার ব্যর্থ হচ্ছে।

শনিবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ৬৭টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত প্ল্যাটফর্ম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির দেওয়া বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।

সেখানে আরও বলা হয়, নারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন নেতিবাচক, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার করা 'নারীবিরোধী মৌলবাদী গোষ্ঠী'র বিরুদ্ধে কোনো ধরণের ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না।

বিবৃতিতে বলা হয়, 'বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে কাজ করে যাওয়া প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের ৫০ শতাংশের বেশি নারী। মজুরীবৈষম্য থাকা সত্ত্বেও পোশাকখাতের পাশাপাশি কৃষি, নির্মাণ ও পরিচ্ছন্নতা খাতসহ সব চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীরা অবদান রেখে চলেছেন।'

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, '(দেশের) কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ আজ প্রায় ৩৮ শতাংশ। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে আগের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণ কমে আসলেও বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড তৈরি পোশাকখাতের কর্মীদের ৬২ শতাংশ এখনো নারী। এছাড়া খেলাধুলাতেও বাংলাদেশের মেয়েরা ধারাবাহিকভাবে সাফল্য দেখাচ্ছে। বহির্বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের জন্য যত অর্জন, তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশের মেয়েদের খেলাধুলার মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে।'

'অথচ নারীর এই সকল অবদানকে মর্যাদা এবং স্বীকৃতি দিতে রাষ্ট্র-সমাজ পরিবার সকলেই ব্যর্থ হচ্ছে,' যোগ করা হয় বিবৃতিতে।

নারীবিদ্বেষ ও নারীর ওপর সহিংসতা বৃদ্ধি সম্পর্কে বলা হয়, 'নারীবিরোধী একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী প্রতিনিয়ত নানা অযৌক্তিক, অসাংবিধানিক দাবি তুলে নারীর অগ্রযাত্রার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে এবং নারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন নেতিবাচক, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার সমাজে ঘৃণা ছড়ানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে কোনো ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখিনি আমরা।'

নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশ ১৩টি দাবিও জানায় সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি। সেগুলো হচ্ছে—

১. বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন পরিবর্তন করে সব নাগরিকের সমঅধিকার নিশ্চিত করতে অভিন্ন পারিবারিক আইন চালু করা।

২. সম্পদ-সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার ও সম-অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা।

৩. নারীর অবৈতনিক পারিবারিক কাজের স্বীকৃতি দিয়ে তা জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া।

৪. জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করা এবং সংরক্ষিত আসন সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ বাড়ানোর পাশাপাশি জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকা পুনর্নির্ধারণ করা।

৫. নীতি-নির্ধারণীর সবপর্যায়ে নারীর সম-অংশীদারীত্ব নিশ্চিত করা।

৬. গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের ৯০ নম্বর অনুচ্ছেদের পূর্ণ বাস্তবায়ন করা।

৭. নারী গৃহকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া এবং বিষয়টিকে শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা।

৮. উত্ত্যক্তকরণ ও যৌন নিপীড়ন বন্ধে হাইকোর্ট বিভাগের রায় বাস্তবায়ন ও রায়ের আলোকে আইন প্রণয়ন করা।

৯. পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২ এর বাস্তবায়ন করা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় নারীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং নারীকে অবমাননা করে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশ বা প্রচার করা হয় তা নিয়ন্ত্রণ করা।

১০. অভিবাসী নারী শ্রমিকদের সার্বিক নিরাপত্তা, অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

১১. সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী আইন দ্রুত প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

১২. জাতিসংঘের সিডও সনদের অনুচ্ছেদ-২ ও ১৬(১) (গ) এর ওপর থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা।

১৩. বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন ২০১৭-তে মেয়ের বিয়ের বয়স সংক্রান্ত বিশেষ বিধান বাতিল করে আইনের বাস্তবায়ন করা।

১৪. প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক সব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমকাজে সমান মজুরি নিশ্চিত করা।

Comments

The Daily Star  | English

Project stalled amid bureaucratic hurdles

The construction of Jagannath University’s long-awaited second campus in Keraniganj has stalled due to bureaucratic delays.

1h ago