ঢাকা ও বেইজিং জলবিদ্যুৎ-পূর্বাভাস এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ সহযোগিতা জোরদার করবে

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ছবি: পিআইডি

বাংলাদেশ ও চীন জলবিদ্যুৎ, পূর্বাভাস, বন্যা প্রতিরোধ ও দুর্যোগ হ্রাস, নদী খনন, পানি সম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, পানি সম্পদ উন্নয়ন এবং সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি বিনিময়ের ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে।

আজ শুক্রবার উভয় পক্ষ ইয়ারলুং জাংবো-যমুনা নদীর জলবিদ্যুৎ তথ্য বিনিময় সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক (এমনওইউ) বাস্তবায়ন পরিকল্পনা স্বাক্ষরকে ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীনে সরকারি সফরে রয়েছেন।

বাংলাদেশ ও চীনের পক্ষ থেকে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তিস্তা নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনঃসংস্কার প্রকল্পে চীনা কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণকে বাংলাদেশ স্বাগত জানিয়েছে। উভয় পক্ষ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং নীল অর্থনীতিতে সহযোগিতার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সম্মত হয়েছে।

বাংলাদেশ ও চীন সমুদ্র সংক্রান্ত বিষয়ে বিনিময় জোরদার করতে এবং উপযুক্ত সময়ে সামুদ্রিক সহযোগিতা সংক্রান্ত নতুন সংলাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

এশিয়ার বোয়াও ফোরামের মহাসচিবের আমন্ত্রণে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত ২৬ ও ২৭ মার্চ চীনের হাইনান প্রদেশে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেন।

এরপর, চীন সরকারের আমন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টা ২৭ থেকে ২৯ মার্চ বেইজিং সফরে রয়েছেন।

আজ শুক্রবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বেইজিংয়ে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং শ্যুয়েশিয়াং বোয়াও ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের সাইডলাইনে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এছাড়া চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হান ঝেং বেইজিংয়ে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

সৌহার্দ্যপূর্ণ ও উষ্ণ পরিবেশে দুই পক্ষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে গভীর আলোচনা করে এবং ব্যাপক সমঝোতায় পৌঁছায়।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন।

প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চীন স্বাগত জানিয়ে গত বছরের আগস্ট থেকে সরকারের নেওয়া সংস্কার কর্মসূচি ও অগ্রগতির প্রশংসা করেছে।

একইসঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করতে গভীর আগ্রহী চীন।

উভয় পক্ষ সমগ্র কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব আরও সুসংহত ও গভীর করার জন্য সমান প্রতিশ্রুতি পুনরায় নিশ্চিত করেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

বিবৃতিতে দাবি করা হয়, উভয় দেশ একমত হয়েছে যে, বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছরে, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তিত হলেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সবসময় শক্তিশালী ও স্থিতিশীলভাবে এগিয়ে গেছে।

উভয় পক্ষ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচ নীতির প্রতি অটল থাকার, ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব এগিয়ে নেওয়ার, রাজনৈতিক পারস্পরিক বিশ্বাস দৃঢ় করার, উন্নয়ন কৌশলের সমন্বয় গভীর করার এবং বাংলাদেশ-চীন কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও সমৃদ্ধ করার বিষয়ে একমত হয়েছে।

এতে উভয় দেশের জনগণের জন্য আরও বেশি সুফল নিশ্চিত করা যাবে বলে তারা আশাবাদী।

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের ঐতিহাসিক সময়ে উভয় পক্ষ পরস্পরের প্রধানতম স্বার্থ ও উদ্বেগের বিষয়ে পারস্পরিক সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চীন অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি মেনে চলে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে শ্রদ্ধা করে এবং বাংলাদেশের জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষায় সমর্থন প্রদান করে।

চীন বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনভাবে নির্ধারিত উন্নয়ন পথকে সম্মান করে এবং বাংলাদেশের নিজস্ব বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন পথ অনুসন্ধানের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে বলে জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, চীন সবসময়ই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সুপ্রতিবেশীসুলভ নীতির অনুসারী এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যকর শাসন পরিচালনা, জাতীয় ঐক্য ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং দেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সমর্থন দিয়ে আসছে।

উভয় পক্ষ জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং বাস্তবিক বহুপাক্ষিকতা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বৃহত্তর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছে।

উভয় দেশ সমতার ভিত্তিতে শৃঙ্খলাপূর্ণ বহুপক্ষীয় বিশ্ব ও সর্বজনীনভাবে উপকারী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন প্রতিষ্ঠায় একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

উভয় পক্ষ জাতিসংঘ ও অন্যান্য বহুপাক্ষিক কাঠামোর আওতায় সমন্বয় আরও জোরদার করার, উন্নয়নশীল দেশগুলোর যৌথ স্বার্থ রক্ষার এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার ও ন্যায্যতা সমুন্নত রাখার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।

মিয়ানমার সংকট ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের ভূমিকা বাংলাদেশ মিয়ানমারের শান্তি আলোচনায় চীনের গঠনমূলক ভূমিকা এবং রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত শরণার্থীদের সমস্যা সমাধানে চীনের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছে।

চীন রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যুত জনগণকে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে এবং বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করতে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

চীন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় তার সামর্থ্যের সর্বোচ্চ সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং চীনের জনগণকে তার ও বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের প্রতি উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি উভয় পক্ষের সুবিধাজনক সময়ে চীনা নেতৃত্বকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

Comments

The Daily Star  | English
Unhealthy election controversy must be resolved

Unhealthy election controversy must be resolved

Just as the fundamental reforms are necessary for the country, so is an elected government.

12h ago