‘নিজের প্রতিষ্ঠানেই সম্মান-সম্মানী ও স্বীকৃতিবঞ্চিত আলোকচিত্র সাংবাদিকরা’

গাইবান্ধা শহরের পৌরপার্কে শুরু হয়েছে আলোকচিত্র সাংবাদিক কুদ্দুস আলমের তিন দিনব্যাপী একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী।
আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে 'চর ও জীবন' শীর্ষক প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত আলোকচিত্র সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, দৃক ফটো গ্যালারি এবং পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা ড. শহিদুল আলম।

প্রদর্শনীটি চলবে আগামী ১৪ এপ্রিল বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
মফস্বল সাংবাদিকদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তার প্রসঙ্গ টেনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শহিদুল আলম বলেন, 'সম্পাদকদের অনেকে বলেন, একটা ছবি হাজার শব্দের কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে তারা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানেই আলোকচিত্র শিল্পীদের যথেষ্ট সম্মান, সম্মানী ও স্বীকৃতি দিতে চান না।'

'এমন একটা প্রচলন শুরু হয়েছে, যারা লেখালেখি করেন, তারা ব্রাহ্মণ আর আলোকচিত্রীরা যেন নমশুদ্র। যত যাই বলি না কেন, তারা (সম্পদকরা) আসলে ছবির ভাষাকে মূল্য দিতে জানে না,' যোগ করেন তিনি।'

জুলাই বিপ্লবে আলোকচিত্রের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমরা কিছু দিন আগে যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নতুন দেশ পেয়েছি, তার পেছনে ছবির ভূমিকা অন্যতম। এই ছবি-ভিডিওগুলোই মানুষকে উজ্জীবিত করেছে। আপনারা হয়তো জানেন, আমরা অনেক চেষ্টার পর আলোকচিত্রীদের নামটা পত্রিকায় লেখকের (প্রতিবেদক) সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশের ক্ষেত্রে সফল হয়েছি।'
'আমরা প্রযুক্তি ও আলোকচিত্রের মাধ্যমে আবু সাঈদের মৃত্যুটাকে জীবন্ত করার চেষ্টা করছি। গণভবনে যে নতুন জাদুঘর করা হচ্ছে, সেখানে জুলাই বিপ্লবের জাদুঘরে যে প্রধান কাজটা থাকবে, সেটা হবে আবু সাঈদকে কেন্দ্র করে,' যোগ করেন শহিদুল আলম।
অনুষ্ঠান শেষে তিনি আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।

আলোকচিত্রী কুদ্দুস আলমের ছবি সম্পর্কে শহিদুল আলম বলেন, 'এসব অসাধারণ ছবি নিয়ে আমি যদি দেশের ভেতরে বা অন্য কোনো জায়গায় (বিদেশে) প্রদর্শনী করতে পারি, তাহলে নিজেকে ধন্য মনে করব।'

ফোকাস বাংলার গাইবান্ধা প্রতিনিধি কুদ্দুস আলম প্রায় ৫০ বছর ধরে প্রান্তিক জনপদে আলোকচিত্র সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছেন। পেশাগত জীবনে তিনি দেশে-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক সম্মাননা পেয়েছেন।

গাইবাবান্ধা অবস্থিত ১৬৫টি চরে প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষের বসবাস। 'চর ও জীবন' শিরোনামে এই প্রদর্শনীতে সেই চরাঞ্চলের মানুষের জীবন-সংগ্রাম, সম্ভাবনা এবং সংস্কৃতি উঠে এসেছে।

২০২৪ সালে দৃক আয়োজিত বাংলাদেশ ফটো কন্টেস্টে কুদ্দুস আলমের একটি ছবি পিকচার অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হয়।

কুদ্দুস আলম বলেন, 'চর মূলত দুর্গম এলাকা। যেখানে চিকিৎসার অভাবে একজন প্রসূতি মা মারা গেলেও প্রতিবেশীদের দেখা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না (কারণ সেখানে যোগাযোগ ও চিকিৎসা সেবা একেবারে অপ্রতুল)। সেখানে গিয়ে ছবি তোলাও অনেক কষ্টের। তবে তাদের কষ্টের গল্পগুলো ছবির মধ্যে দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারাটা বেশ আনন্দের।'

আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সৃজনশীল গাইবান্ধা-এর উপদেষ্টা মো. আবুল হোসেন মৃধা সোহাগ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন গণউন্নয়ন কেন্দ্রের (জিইউক) প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী প্রধান এম. আব্দুস সালাম এবং দ্য ডেইলি স্টারের বগুড়া সংবাদদাতা মোস্তফা সবুজ।

প্রদর্শনীটির আয়োজন করেছে গাইবান্ধার স্বেচ্ছসেবী প্রতিষ্ঠান সৃজনশীল গাইবান্ধা এবং সহযোগিতা করেছে সু-প্যালেস ও ফ্যাশন প্যালেস।
অনুষ্ঠান শেষে শহিদুল আলম স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে একটি আলোচনা সভায় অংশ নেন। এ সময় সাংবাদিকদের নিজেদের অধিকার আদায়ে তিনি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পরামর্শ দেন।
Comments