‘আপনারা কি চান- র‌্যাবের মতো পুলিশের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আসুক’

পুলিশকে জনগণের প্রতিপক্ষ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আপনারা কি চান- পুলিশের ওপর এভাবে স্যাংশন আসুক, বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের ওপর স্যাংশন জারি করুক?
গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশকে জনগণের প্রতিপক্ষ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আপনারা কি চান- পুলিশের ওপর এভাবে স্যাংশন আসুক, বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের ওপর স্যাংশন জারি করুক?

আজ শুক্রবার বিকেলে গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'পুলিশকে আমরা কখনো প্রতিপক্ষ বানাতে চাই না। জনগণের যে ন্যায্য অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার সেজন্য পুলিশ সহযোগীতা করবে এবং যারা অন্যায় করছে, অবিচার করছে, যারা গুলি করে হত্যা করছে, যারা জোর করে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর মতো জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে তাদের বিরুদ্ধে জনগণ জেগে উঠেছে, লড়াই শুরু করেছে, সেই লড়াইয়ে পুলিশ সদস্যরাও শরিক হবেন।'

'আমরা কোনো বাহিনীর বিরুদ্ধে নই। আমাদের ট্যাক্সের পয়সায় তাদের বেতন হয়, তাদের সংসার চলে, তাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখে, তাদের বউ-বাচ্চাদের কাপড় দেয়। তারা আমাদের লোকজনকে গুলি করে মেরে ফেললে আমরা কি মেনে নেব', বলেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'যখন বিএনপি আন্দোলন শুরু করেছে মানুষের সমস্যাগুলো নিয়ে, জ্বালানি তেল, চাল-ডাল-তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে, তখনই তারা সেই আগের মতো গুলি করে হত্যা করছে আমাদের সহযোদ্ধাদের-সহকর্মীদের।'

'গতকাল গুলি করে হত্যা করেছে আমাদের নারায়ণগঞ্জের যুবদলের কর্মী শাওনকে। কী লজ্জার-ধিক্কারের বিষয়, কাল একজন এসপি বলছেন যে, শাওন যুবদলের কর্মী নয়। আমি আজ সকালে গিয়েছিলাম নারায়ণগঞ্জে। আমাদের দলের প্রত্যেক নেতা-কর্মী, যুবদলের সব নেতা-কর্মী, শাওনের পরিবার, মা, তার আত্মীয়স্বজন সবাই বলেছেন যে, অবশ্যই শাওন যুবদল করতো। সে গতকাল মিছিলের অগ্রভাগে ছিল। সেই ছবি গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছে', যোগ করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'ওরা (পুলিশ) কত নোংরা হতে পারে। কী করেছে জানেন- গতকাল রাতে শাওনের মরদেহ তার আত্মীয়স্বজনকে দেয়নি, আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের দেয়নি। শাওনের মরদেহ তারা গোপনে পুলিশ পাহারায় নিয়ে গিয়ে দাফন করেছে।'

'শুধু তাই নয়, শাওনের ইমিডিয়েট বড় ভাইকে দিয়ে জোর করে বন্দুকের ভয় দেখিয়ে তারা একটা মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। আমি হুশিয়ার করতে চাই, যারা এই ধরনের মিথ্যা মামলা করাবেন, যারা এভাবে গুলি করে আমাদের নেতা-কর্মীদের হত্যা করবেন, গণতন্ত্রের নেতা-কর্মীদেরকে হত্যা করবেন তাদের প্রত্যেকের সমস্ত হিসাব কড়ায়-গণ্ডায় নেওয়া হবে', বলেন তিনি।

তিনি বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যে ভোলায় মামলা করেছি। ভোলায় নুরে আলম ও আব্দুর রহিমের হত্যা মামলা করেছি। আমরা অবশ্যই শাওনের হত্যা মামলা করব। আপনারা যারা জেলায় জেলায় আমাদের কর্মীদের আহত করছেন, তার প্রত্যেকটির হিসাব নেওয়া হবে।'

সরকার হটানোর এবারের আন্দোলনই 'শেষ লড়াই' বলে নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, 'আমাদের এবারের লড়াই হচ্ছে শেষ লড়াই। এবার আমাদের জীবনমরণ লড়াই করতে হবে। এবার সেই কথার সুরে বলতে চাই, হয় জীবন না হয় মরণ।'

মহানগর নাট্যমঞ্চে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভার শুরুতে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ওপর জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) আয়োজনে 'হরিলুটের রাজা' শীর্ষক পথ নাটক মঞ্চস্থ হয়।

বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শামসুজ্জামান ‍দুদু, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, যুবদলের সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন ও কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন।

Comments