গণতন্ত্র ছিল, আ. লীগ তা কেড়ে নিয়েছে: মির্জা ফখরুল

‘জনসমর্থনহীন’ সরকার বলেই ভারতের সঙ্গে অভিন্ন সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। স্টার ফাইল ফটো

'জনসমর্থনহীন' সরকার বলেই ভারতের সঙ্গে অভিন্ন সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে শেরে বাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'ভারতের সঙ্গে যে আমাদের অভিন্ন সমস্যাগুলো আছে, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সমস্যা, সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যা করা এবং অন্যান্য যে সমস্যাগুলো আছে, এই সমস্যাগুলোর সমাধান বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত করতে পারেনি। পারেনি কারণ যে, ওদের পেছনে জনগণের সমর্থন নেই। সেটাই হচ্ছে বড় কারণ। সেজন্য এখন পর্যন্ত সেই শক্তি নিয়ে এই সরকার কোনো কাজ করতে পারেনি।'

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, 'আমি গতকালও বলেছি, উনি (শেখ হাসিনা) তো প্রত্যেকবার গেছেন। আমাদেরকে অনেক আশা দিয়ে গেছেন। এই তিস্তা চুক্তি সই হবে, ওমুক হবে, তমুক হবে, এখন পর্যন্ত কোনোটাই হয় নাই।'

'আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, ১০০ বিলিয়ন ডলার সাহায্য দিয়েছিল, সেটারও ৩০ শতাংশ মাত্র কাজ হয়েছে। আর কোনো কাজ হয়নি। এই বিষয়গুলো নির্ভর করে জনগণের শক্তির ওপরে। জনগণ যদি এই সরকারকে সমর্থন দিত, তাহলে প্রত্যেকটি কাজই ইতোমধ্যে হয়ে যেত। আমি আবারও বলছি, উনি ফিরে আসুক, কী কী আনছেন বাংলাদেশের মানুষের জন্য, সেটাই হবে এই সফরের সাফল্য।'

আজ বেলা ১২টায় জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন সভাপতি এসএম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীদের নিয়ে শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন এবং প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন।

সেসময়ে বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, আজিজুল বারী হেলাল, মীর সরফত আলী সপু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আকরামুল হাসান, মহানগর বিএনপির আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটির সহসভাপতি ইয়াছিন আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, সাবেক সভাপতি  মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

গত ৪ সেপ্টেম্বর এসএম জিলানী ও রাজীব আহসানের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের আংশিক কমিটি অনুমোদন দেয় বিএনপি।

সর্বশেষ কমিটি ছিল মোস্তাফিজুর রহমান ও আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলের নেতৃত্বে।

'যেভাবেই রিসিভ করুক, ওরা যাবে'

ভারতের পালাম বিমানবন্দরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে একজন প্রতিমন্ত্রী থাকার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এটা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। কারণ এখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আগের যে বক্তব্যগুলো এবং এই সরকারের বেশিরভাগ মন্ত্রীদের যে বক্তব্যগুলো, সেই বক্তব্য তো খুব স্পষ্ট যে, ওরা যেভাবেই রিসিভ করুক, তারা যাবে এবং সেটা নিয়ে তাদের খুব একটা বড় রকমের সমস্যা থাকবে না।'

'আমি আগেই বলেছি যে, এই সরকার একেবারে একটা নতজানু সরকার। এই সরকারের জন্য তার বন্ধুদের সমর্থন ছাড়া টিকে থাকা কঠিন আছে এবং বন্দুক-পিস্তল নিয়ে তাদের টিকে থাকা কঠিন হবে। তারা চাইবে যে, সামনে নির্বাচনের আগে সেইটাকে যদি কোনো রকম আরও শক্তিশালী করতে পারে।'

'গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছে প্রত্যাশা'

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি গোটা গণতান্ত্রিক বিশ্ব বাংলাদেশের জনগণের যেটা মূল চাহিদা একটা গণতান্ত্রিক সরকার, একটা সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচন, সেই ব্যাপারে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশের সরকারগুলো তাদের ভূমিকা পালন করবে।'

'আমরা বরাবরই বলে এসেছি যে, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রকামী মানুষ। বাংলাদেশের মানুষের কাছে গণতন্ত্র ছিল, এই আওয়ামী লীগ সরকার সেই গণতন্ত্র কেড়ে নিয়েছে এবং প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে এখানে গণতন্ত্রকে হত্যা, মানুষের অধিকারকে হত্যা করছে, তারা বিরোধী পক্ষকে হত্যা করছে। সেই সরকারের সমর্থনে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আসবে, এটা আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি যে, সব গণতান্ত্রিক বিশ্ব জনগণের যে সংগ্রাম, মহান ঐতিহ্যবাহী যে সংগ্রাম গণতন্ত্রের পক্ষের যে সংগ্রাম তাকেই সমর্থন করবে।'

'মিয়ানমার প্রসঙ্গে'

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের দীর্ঘ ১৫ বছরের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি যে, এই সরকার যেহেতু জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার নয়, যেহেতু জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে তারা সরকারে আসে নাই, সুতরাং তাদের পক্ষে বহির্বিশ্বে কোনো চুক্তি করা, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের স্বার্থকে রক্ষা করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ। এটা আমরা লক্ষ্য করেছি মিয়ানমারের ক্ষেত্রে। এখন পর্যন্ত মিয়ানমারে এই সরকার কোনো ব্রেক থ্রো করতে পারে নাই।"

'আরও ভয়াবহ কাণ্ড হচ্ছে যে, মিয়ানমার বারবার বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে বিনষ্ট করে তারা মর্টার মারছে, গোলা মারছে। কিন্তু, সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণে একটি প্রতিক্রিয়া ছাড়া কোনো কিছু করার সাধ্য তাদের নেই।'

'বর্তমান ইসিকে মানি না'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। কারণ এই নির্বাচন কমিশনকে আমরা মানি না। আমরা বলেছি যে, এই কমিশনটাও ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি ও অনৈতিক। কারণ আমরা বারবার বলে এসেছি যে, নির্বাচন কমিশন দিয়ে নির্বাচন হবে না।'

'নির্বাচন করতে হলে এখানে একটা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হবে। নির্বাচনকালীন যদি নির্দলীয় সরকার না হয়, তাহলে অতীতে যেসব নির্বাচন কমিশন কাজ করছে, তাদের যে হাল হয়েছে, এদের সেই একই হাল হবে। তারা কখনোই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। সেই কারণে এই নির্বাচন কমিশন কী বলল না বলল, তাতে আমাদের জাতির খুব একটা যায় আসে না।'

'আমাদের লক্ষ্য একটাই, এই ফ্যাসিবাদী বেআইনি জবরদখলকারী সরকারকে সরিয়ে একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর, সংসদ বিলোপ করা এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা', বলেন তিনি।

Comments