ঢাকায় ১৬ দিনের প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

জ্বালানি তেল ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং ভোলা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে ৩ কর্মী নিহতের প্রতিবাদে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ১৬টি প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি শুরু করেছে বিএনপি।
Mirza Fakhrul Islam Alamgir
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। স্টার ফাইল ছবি

জ্বালানি তেল ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং ভোলা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে ৩ কর্মী নিহতের প্রতিবাদে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ১৬টি প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি শুরু করেছে বিএনপি।

আজ শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হয়, চলবে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

এ ছাড়া, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির আয়োজনে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টা থেকে এক ঘণ্টা মোমবাতি জ্বালিয়ে মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।

আজ শনিবার বিকালে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, 'আন্দোলন আমাদের থেমে নেই। গত মাস থেকে যে আন্দোলন শুরু করেছি সেই আন্দোলন চলছে। আমাদের এই আন্দোলন চলতেই থাকবে। ঢাকা মহানগরীর ১৬ স্পটে বা জোনে এই প্রতিবাদ সমাবেশ আমরা করবো, যা শুরু হয়েছে আজকের এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে।'

'২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন জোনে এই সমাবেশ কর্মসূচি হবে। এরপর আরও বৃহত্তর কর্মসূচি সারাদেশে আমরা দেবো। আসুন আমরা এই কর্মসূচিতে শরিক হই এবং একযোগে আওয়াজ তুলি, ফয়সালা হবে কোন পথে, রাজপথে রাজপথে, টেক ব্যাক, টেক ব্যাক বাংলাদেশ, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, মুক্তি চাই', বলেন তিনি।

এরমধ্যে আগামীকাল ১১ সেপ্টেম্বর উত্তরা পূর্ব জোন, ১২ সেপ্টেম্বর সেগুনবাগিচায়, ১৩ সেপ্টেম্বর উত্তরা পশ্চিম জোন, ১৫ সেপ্টেম্বর পল্লবী জোন, ১৬ সেপ্টেম্বর সূত্রাপুর জোন, ১৮ সেপ্টেম্বর শ্যামপুর-কদমতলী জোন, ১৯ সেপ্টেম্বর গুলশান জোন, ২০ সেপ্টেম্বর বাসাবো বালুর মাঠ জোন, ২১ সেপ্টেম্বর মীরপুর জোন, ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ি-ডেমরা জোন, ২৩ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুর জোন, ২৪ সেপ্টেম্বর লালবাগ-চকবাজার-কামরাঙ্গীরচর জোন, ২৫ সেপ্টেম্বর বাড্ডা জোন, ২৬ সেপ্টেম্বর কলাবাগান এবং ২৭ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও জোনে সমাবেশ হবে।    

এসময় মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা ভাবলাম, প্রধানমন্ত্রী এবার ভারতে গেছেন, আমাদের তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তির সমাধান হবে, অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা আমরা পাবো, সীমান্তে হত্যা বন্ধ হবে। আমাদের যে বাণিজ্যে ব্যবধান আছে, সেই ব্যবধানগুলো কমে আসবে। আমাদের আরও সুযোগ-সুবিধা তারা (প্রধানমন্ত্রী) নিয়ে আসতে পারবেন এবং তারাও সেই আশা করে গিয়েছিলেন যে, ভারত সেগুলো দিয়ে দেবে।'

'ভারত তো এখন তাদের ওপর খুশি নয়। নৃত্যগীতে ভরপুর একটা সফর দিয়েছেন, সফরটা নৃত্যগীতে ভরপুর ছিল। আমার দেশের মানুষ যখন মারা যাচ্ছে, যখন গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে, যখন মাকে তার সন্তান থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, তখন তারা জয়পুর বিমানবন্দরে গিয়ে নাচানাচি করছেন। এই দেশের মানুষ এটা ক্ষমা করবে না', বলেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমরা সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই, অবশ্যই আমরা ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। আমরা মনে করি, ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। আমরা অবশ্যই আশা করি যে, ভারত বাংলাদেশের জনগণকে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে যে সহযোগিতা করেছিল, সেই ভারত অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষের যে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম, যে লড়াই তাতেও তারা সহযোগিতা করবে।'

'কারণ গণতান্ত্রিক দেশগুলো থেকে আমরা সেটাই আশা করি। একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই, বাংলাদেশের ভালোবাসা না নিয়ে, বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন না নিয়ে এখানে কেউ কখনো কিছু করতে পারবে না। তাই যে ভয়াবহ সরকার জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে… তাদেরকে সরাতে হলে আমাদেরকে ইস্পাত দৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সেই ঐক্যে সমস্ত জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে ওদেরকে সরিয়ে এখানে একটা গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে', যোগ করেন তিনি।

বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনাকে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে তুলনা করে সরকারের এ ধরনের কর্মকাণ্ড এবং দেশের আর্থিক খাতে ক্ষমতাসীনদের 'খাস লোকদের' দুর্নীতি ও অর্থপাচারের ঘটনার কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক হারুন উর রশীদের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম-আহ্বায়ক এসকে সিকদার কাদিরের সঞ্চালনায় সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসসহ শাহবাগ-পল্টন-মতিঝিল থানা মহানগরের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

Comments