দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় যেতে হবে, বঙ্গবন্ধুর মেয়ে সেই দৈন্যতায় ভোগে না: প্রধানমন্ত্রী
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2023/11/12/2023-11-12-11-36-eb2dd4ff3f04bcc848321f4925b1e014.jpg?itok=5TlNcVVZ×tamp=1699794687)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেকোনো পরিস্থিতি সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশকে অগ্নিসংযোগের মতো সব বাধা মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো অগ্নিসন্ত্রাস বা মানবসৃষ্ট সকল দুর্যোগ অতিক্রম করেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। দেশবাসীকে শুধু সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রোববার বিকেলে নরসিংদীতে নবনির্মিত ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা (জিপিইউএফএফ) উদ্বোধন পরবর্তী নাগরিক সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
এর আগে তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম এবং বার্ষিক ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন সার উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পরিবেশবান্ধব, জ্বালানি সাশ্রয়ী ও আধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা উদ্বোধন করেন।
তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে কৃষকরা সারের জন্য আন্দোলন করেছিল। সার চাওয়ার কারণে তাদের গুলি করে হত্যা করা হয় গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জ এবং টাঙ্গাইলের ঘাটাইলসহ বিভিন্ন অঞ্চলে। তখনই কথা দিয়েছিলাম, কৃষকদের সারের জন্য ছুটতে হবে না। সার কৃষকের ঘরে পৌঁছে যাবে। এ জন্য ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর যত কষ্টই হোক সারের কোনো ঘাটতি আমরা হতে দেইনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসার্টে বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনরতদের ওপর গুলি চালিয়ে ২০ জনকে হত্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, তার সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেখানে বেসরকারি খাতে একটি এবং সরকারিভাবেও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করে দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ২০১৩ সালে বিএনপি আজকের মতো অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়। কর্মরত প্রকৌশলী সেই আগুনে পুড়ে মারা যায়। এভাবেই দেশের সম্পদ সে সময় একে একে তারা ধ্বংস করেছে। এখন আবারও তখনকার মতো অগ্নিসন্ত্রাস তারা শুরু করেছে।
তিনি বলেন, 'আমি জানি না তাদের চেতনা কবে ফিরবে বা দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ আসবে?'
প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, 'আমরা যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করি, তেমনি অগ্নিসন্ত্রাস বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগ নিশ্চই অতিক্রম করেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। দেশবাসীকে বলবো সাহসের সাথে যে কোনো অবস্থা মোকাবিলা করতে।'
দেশি-বিদেশি চক্রান্তে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'তখন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল।'
আর তিনি (শেখ হাসিনা) তা না করে বলেছিলেন, আমাদের কী পরিমাণ গ্যাসের রিজার্ভ আছে তার অ্যাসেসমেন্ট করে দিতে, তারপর তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। কেননা দেশের সম্পদ আগে দেশের মানুষের কাজে লাগাতে হবে। সেদিন সেই চক্রান্তে সায় দিলে আজকে এই সার কারখানা করতে পারতেন না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, 'দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় যেতে হবে, বঙ্গবন্ধুর মেয়ে সেই দৈন্যতায় ভোগে না।'
তিনি আরও বলেন, ক্ষমতা তার জন্য বড় কিছু নয়, দেশের মানুষের কল্যাণই বড়।
তিনি বিএনপির মানসিক দৈন্যতার আরেকটি উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, যখন ৯৬ পরবর্তী তার সরকার জাতীয় সংসদে দেশকে বিএনপির রেখে যাওয়া খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশে পরিণত করার ঘোষণা করে, তখন খালেদা জিয়া ও তার সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বলেছিলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো নয়, তাহলে বিদেশি সাহায্য পাওয়া যাবে না।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খান ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা।
প্রধানমন্ত্রী ঋণ সহায়তা প্রদানের জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত জাপান ও চীনের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে তাদের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এই ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পটি জাপানের মিতসুবিশি হেভি ইন্ডাষ্ট্রিজ সিসি সেভেন চায়না কনসোর্টিয়াম বাস্তবায়ন করেছে।
তিনি বলেন, 'সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়', আমাদের এই পররাষ্ট্রনীতির আরেকটি ফসল হচ্ছে আমাদের এই সার কারখানা। আমাদের বন্ধু প্রতীম দেশ আমাদেরকে সহযোগিতা করেছে। এটি অত্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর। যেখানে পরিবেশের কোনো দূষণ হবে না। পরিবেশ দূষণকারী কার্বন ডাই অক্সাইডকেও কাজে লাগিয়ে ১০ শতাংশ বেশি ইউরিয়া সার উৎপাদন করা হবে। এটি বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের পাশাপাশি সার আমদানি হ্রাস করবে এবং কর্মসংস্থানও বাড়াবে।
তিনি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা, মন্ত্রণালয়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, শ্রমিকসহ সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। কারণ এটি নির্মাণে করোনাকালীন জীবনের ঝুঁকি নিয়েও কাজ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সার্বিক খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, 'দেশবাসীকে বলবো এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। খাদ্যের জন্য যেন কারো কাছে হাত পাততে না হয়।'
শেখ হাসিনা দেশের আর্থসামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, 'যা কিছু করেছি তা জনগণের স্বার্থে এবং কল্যাণেই করেছি। আর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন একটা সুন্দর জীবন পায় সেই লক্ষ্য নিয়েই করেছি।'
তার সরকার দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছে এবং যার বাস্তবায়নে তার সরকার পরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আগামীর বাংলাদেশ হবে স্মার্ট। যা আর কখনো পিছিয়ে যাবে না।'
জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানায় বার্ষিক ৯ লাখ ২৪ হাজার টন সার উৎপাদন হবে। যা দেশের মোট ইউরিয়া চাহিদার ৩৫ শতাংশ।
এর মাধ্যমে ইউরিয়া সার আমদানিতে বছরে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বাংলাদেশের। দেশে খাদ্য উৎপাদনে ইউরিয়া সারের চাহিদা বেশি থাকায় খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবে এ সার কারখানা। পলাশ ও ঘোড়াশালের পুরনো দুটি কারখানায় যে পরিমাণ গ্যাস লাগত, একই পরিমাণ গ্যাস দিয়ে নতুন কারখানায় আগের দুটি কারখানার চেয়ে বেশি ইউরিয়া উৎপাদন করা যাবে।
এ সার কারখানা প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে ১০ হাজার ৯২০ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ, যা পরিশোধ করতে ১০ বছর সময় লাগবে। এতে দৈনিক ২ হাজার ৮০০ টন সার উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।
Comments