রাজনীতি

বিনিয়োগে আগ্রহী দেশকে আমাদের সমুদ্রের তেল-গ্যাস উত্তোলনের আহ্বান করব: প্রধানমন্ত্রী

‘আমাদের এই অঞ্চলে যে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে সেটা যেন সংঘাতপূর্ণ না হয়।’
এই অঞ্চলে সমুদ্রপথে ব্যবসা-বাণিজ্য যেন সংঘাতপূর্ণ না হয়: প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সমুদ্রপথে ব্যবসা-বাণিজ্য যেন সংঘাতপূর্ণ না হয় সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র বঙ্গবন্ধুর টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪ প্রণয়নের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু আমাদের একটি রাষ্ট্রই দিয়ে যাননি, তিনি স্বাধীন-সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সঙ্গে সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন বাণিজ্যিক যোগাযোগ এবং সমুদ্র অর্থনীতির গুরুত্ব নিশ্চিত করার জন্য ১৯৭৪ সালে 'টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪' প্রণয়ন করে দিয়ে যান। তখনো জাতিসংঘ কিন্তু এ ধরনের কোনো আইন বা নীতিমালা গ্রহণ করেনি। তার আট বছর পর, ১৯৮২ সালে জাতিসংঘ আনক্লজ প্রণয়ন করে। আনক্লজ প্রণয়নের পর বাংলাদেশের সমুদ্র সীমা নির্ধারণের জন্য ১৯৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো আসলে কোনো পদক্ষেপ আর করেনি। জাতির পিতা যেখানে রেখে গিয়েছিলেন, সেখানেই পড়ে ছিল।

'বিশাল সমুদ্রসীমা যে আমাদের রয়েছে, সেখানে আমাদের কোনো অধিকারই ছিল না। আর এই অধিকারের কথা ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পরে সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে যারা ক্ষমতায় এসেছে, ২১টা বছর এ ব্যাপারে কেউ কোনো রকম উদ্যোগ নেয়নি,' বলেন তিনি।

সংবিধান সংশোধন করে আমাদের স্থলসীমাটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব করে দিয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'পরবর্তীতে সেটা আর কার্যকর করা হয়নি। ২১ বছর পরে আমরা যখন সরকারে আসি, তখন এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ শুরু করি। খুব স্বাভাবিকভাবে কাজগুলো শুরু করতে হয়েছিল খুব গোপনীয়তার সাথে। পাশাপাশি আমি আনক্লজেও সই করে আসি জাতিসংঘে। সমুদ্রসীমায় আমাদের অধিকার যে আছে, সেটা যাতে নিশ্চিত হয়, সেই ব্যবস্থাটা আমি করি।'

তিনি বলেন, 'আমরা এই যে সম্ভাবনাময় সুবিশাল একটা অর্থনৈতিক এলাকা পেলাম, যা আমাদের দেশের অর্থনীতিতে অনেক অবদান রাখতে পারবে। কাজেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দূরদর্শিতা এবং বর্তমান আওয়ামী লীগের সরকারের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টার ফল স্বরূপ জাতীয় উন্নয়নের সূচকে আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, আজকের এই দিনব্যাপী সেমিনার সামুদ্রিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার এবং সমুদ্রকে নিরাপদ ও কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে 'টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪' এর মূলনীতি দেশের সমুদ্রকেন্দ্রীক সকল সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'ভারত মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত আমাদের বঙ্গপোসাগর। প্রাচীনকাল থেকে এই অঞ্চল দিয়ে বিশ্বের সকল ব্যবসা-বাণিজ্য চলমান কিন্তু ভারত মহাসাগরের সাথে সম্পৃক্ত সকল দেশগুলো এবং বাংলাদেশ ও আমাদের প্রতিবেশী দেশ; একটি কথা আমাদের সব সময় স্মরণ রাখতে হবে, এই অঞ্চলটা কিন্তু সব সময় খুব নিরাপদ। এখানে কারও সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। সেই প্রাচীনকাল থেকে বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথ। এই সামুদ্রিক পথ আমাদের সব দেশ সমানভাবে ব্যবহার করছে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যও চলছে। কোনো দিন কোনো রকম দ্বন্দ্ব এই অঞ্চলে কিন্তু তৈরি হয়নি।

'কাজেই আমরা সব সময় এটাই চাইবো যে, আমাদের এই অঞ্চলে যে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে সেটা যেন সংঘাতপূর্ণ না হয়। কোনো দ্বন্দ্ব সৃষ্টি না হয়। এটা যেমন শান্তিপূর্ণ বাণিজ্যপথ, সেই শান্তিপূর্ণ বাণিজ্যপথ হিসেবেই চলমান থাকবে,' যোগ করেন তিনি।

সমুদ্র সম্পদ আহরণের তাগিদ জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের অঞ্চল যেটুকু আমরা অর্জন করেছি, সেখানে সমুদ্র সম্পদ আহরণ করা এবং আমাদের অর্থনীতিতে, অর্থাৎ যে ব্লু ইকোনমি আমরা ঘোষণা দিয়েছি, সেখানে তা অত্যন্ত কার্যকর হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ইতোমধ্যে একটি ইনস্টিটিউট করা হয়েছে গবেষণার জন্য এবং এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।'

বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, 'এ জন্য যথাযথ বিনিয়োগও প্রয়োজন। কাজেই আমি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দেশ, যারা বিদেশে বিনিয়োগ করতে চায়। তাদেরকে আমরা আহ্বান করব যে, আমাদের সমুদ্রের তেল-গ্যাস উত্তোলনের জন্য। আমরা ইতোমধ্যে আলাপ-আলোচনা করছি, আমরা আন্তর্জাতিক টেন্ডারও দিয়েছি। সেগুলো আমরা যেন ভালোভাবে উত্তোলন করতে পারি এবং অর্থনীতিতে কাজে লাগাতে পারি।'

তিনি বলেন, 'জাতির পিতা যখন এই আইনটা করেন, সমুদ্রের দূষণ যাতে না হয়, সেই ব্যবস্থাটাও কিন্তু তিনি রেখেছিলেন। এখন তো এই বিষয় নিয়ে অনেক আলোচনা হয়, তখন কিন্তু এত আলোচনা ছিল না। সে ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি।'

বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে আমরা মাথা উঁচু করে চলবো—মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'আমরা ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন করেছি। কারণ আমাদের এই বদ্বীপটাতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম নিরাপদে, সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারে, জলবায়ু অভিঘাত থেকে তারা যেন রক্ষা পায় এবং সুন্দরভাবে তারা যেন বাস করতে পারে সেভাবেই আমরা কাজ করতে চাই।

'বর্তমানে অনেক জায়গায় সংঘাতপূর্ণ অবস্থা আছে কিন্তু বাংলাদেশ শান্তিতে বিশ্বাস করে। আমরা যুদ্ধ চাই না, আমরা শান্তি চাই। শান্তি প্রগতির পথ দেখায়, উন্নতির পথ দেখায় আর জাতিতে অগ্রসর করে, উন্নত জীবন দান করে। আমরা সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Strong dollar spillover: How Bangladesh manages it

Strong dollar spillover: How Bangladesh manages it

The crawling peg system for the taka is a delayed response to reserve erosion

1h ago