প্রতিষ্ঠানগুলোকে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সংস্কারের পর নির্বাচনে যেতে হবে: সারজিস

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, শুধু নির্বাচনের জন্য ২ হাজার মানুষ জীবন দেয়নি আর এই অভ্যুত্থানও হয়নি। দুর্নীতিগ্রস্ত সিস্টেমগুলোর জন্য এই মানুষগুলো বিগত ১৬ বছরে বিরক্ত হতে হতে দেয়ালে পিঠ লেগে গিয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের ১৬ বছরে সবচেয়ে বড় দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচন কমিশন সংস্কার না করলে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যাবে না।

আজ শনিবার সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, 'সবকিছু সংস্কার করে নির্বাচনে যেতে হবে এমন নয়, নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোকে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সংস্কার করে নির্বাচনে যেতে হবে। তা না হলে আমরা আগের জায়গাতেই থেকে যাব।'

সারজিস আলম বলেন, 'আমরা বলছি না রাষ্ট্রের সবকিছু সংস্কার করে নির্বাচনে যান। আমরা এটাও বলছি না আগামী ৫-৬ বছর সংস্কার করেন। কিন্তু সংস্কারের জন্য ন্যূনতম একটা যৌক্তিক সময় লাগবে। কোনো বিবেকবান মানুষ তার জায়গা থেকে চিন্তা করতে পারবে না যে এক বছরের মধ্যে সবকিছু সংস্কার হয়ে যাবে। ১৬ বছর ধরে যে সিস্টেমগুলোকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করা হয়েছে, সেই সিস্টেমগুলোকে সংস্কার করতে একটা যৌক্তিক সময় প্রয়োজন।'

সারজিস আলম আরও বলেন, 'বিগত ১৬ বছর এমনকি ৫৩ বছর ধরে বাংলাদেশের সংবিধান পাঁচ বছরের জন্য দেশের মানুষকে একটি জনতার সরকার উপহার দিতে পারেনি। আমাদের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করতে পারেনি। সেই সাংবিধানিক সংস্কারও প্রয়োজন। প্রত্যেক পাঁচ বছরের জন্য বড় বড় ইশতেহার দিয়ে প্রতিটি সরকার ক্ষমতায় আসে। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরপরই তারা ইশতেহার ভুলে যায়। তারা ভুলে যায় তারা যে জনতার সরকার।'

'শুধু একটা নির্বাচন কমিশনও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারে না। এর পাশাপাশি অনেকগুলা প্রতিষ্ঠান জড়িত। এরমধ্যে অন্যতম হলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে একটা সিস্টেমের মধ্যে আনতে হবে। তা না হলে নির্বাচন দিলে আবার জবরদখলের ঘটনা ঘটতে পারে। ক্ষমতার অপব্যবহার হতে পারে। আবার এই নির্বাচন ঘিরে কোনো সমস্যা দেখা দিলে সে জন্য একটা বিচারিক প্রক্রিয়া প্রয়োজন। তাই বিচার ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন', যোগ করেন তিনি।

সারজিস আলম বলেন, 'হাইকোর্টে এখনও আওয়ামী লীগের কিছু দোসর-ফ্যাসিস্ট বসে আছে। যারা তাদের যোগ্যতার বলে সেখানে যায়নি। তোষামোদি আর তেলবাজি করে তারা সেখানে গিয়েছিল। তাদেরকে এই জায়গা থেকে অপসারণ করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে যারা এই জায়গাগুলোর জন্য যোগ্য তাদেরকে সেখানে বসাতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'এই অভ্যুত্থান কিছু লোক দিয়ে হয়নি। যেই ফ্যাসিস্ট সরকারকে ১৬ বছরে বাংলাদেশের নামিদামি রাজনৈতিক সংগঠন এক টনক নড়াতে পারেনি, সেই শেখ হাসিনা কিছু লোকের জন্য এই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়নি। পুরো বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছিল বলে অভ্যুত্থান ঘটেছিল এবং শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়েছিলেন।'

শহীদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে চেক বিতরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'সারাদেশ থেকে প্রায় ১৬০০ জনের বেশি শহীদ পরিবারের তালিকা আমাদের কাছে এসেছে। আপাতত যাচাই-বাছাই করে নির্বাচিতদের পরিবারের হাতে আর্থিক অনুদানের চেক দেওয়া হচ্ছে। আমরা প্রতিটি বিভাগীয় পর্যায়ে গিয়ে শহীদের পরিবারের হাতে অনুদানের চেক তুলে দিচ্ছি। এটা আমাদের দায়িত্ব। বাকি যারা রয়েছেন তাদের কাগজপত্র সংগ্রহের কাজ চলছে। সেগুলো হাতে পেলে অনুদানের চেক তুলে দেওয়া হবে।'

চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধসহ ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

Comments

The Daily Star  | English
enforced disappearance in Bangladesh

Enforced disappearance: Anti-terror law abused most to frame victims

The fallen Sheikh Hasina government abused the Anti-Terrorism Act, 2009 the most to prosecute victims of enforced disappearance, found the commission investigating enforced disappearances.

8h ago