বিলিভ ইট অর নট

৮৯ বছরে যে ধাঁধার সমাধান করতে পেরেছেন মাত্র ৩ জন!

৮৯ বছরে যে ধাঁধার সমাধান করতে পেরেছেন মাত্র ৩ জন!
২০১৯ সালের আবার প্রকাশিত হয় ‘কেইন’স জবোন’ । ছবি: সংগৃহীত

গোয়েন্দা কাহিনীতে সাধারণত একটি রহস্যের সমাধান করেন কোনো গোয়েন্দা। কিন্তু যদি এমন হয়, কাহিনীটিই একটি আস্ত ধাঁধা! এলোমেলো ভাবে সাজানো পৃষ্ঠাগুলো সঠিক ক্রমে সাজিয়ে তবেই আপনি পাবেন কে কাকে খুন করেছেন সেই প্রশ্নের জবাব- তবে কেমন হয়?

১৯৩৪ সালে এমনই এক ধাঁধাময় কাহিনী লেখেন ইংরেজ কবি ও ধাঁধাবিদ এডওয়ার্ড পওইস ম্যাথারস। তিনি লিখতেন 'তোরক্যুমাডা' নামে। 'দ্য তোরক্যুমাডা পাজল বুক' নামের বইটিতে ১০০ পৃষ্ঠা জুড়ে ছিল এই ধাঁধা। ম্যাথারস বলেছিলেন, বইটির পৃষ্ঠাগুলো একেবারেই এলোমেলো করে সাজানো।

কাজেই, পাঠকের কাজ হবে বইটি পুরোটা পড়া। তারপর পাতাগুলো ছিঁড়ে সাজিয়ে নেওয়া!  তাহলেই বোঝা যাবে, খুন হলেন কে আর খুন করলেনই বা কে!

বইয়ে খুনের ঘটনা আছে ৬টি। এক্ষেত্রে খুনি কি একজনই? নাকি ৬ জন আলাদা আলাদা খুনি? এটিই বের করতে হবে পাঠকদের। নিজেদেরই হয়ে উঠতে হবে গোয়েন্দা।

আর পুরোটা ঠিকভাবে সাজিয়ে যদি ধাঁধার সমাধান করতে পারেন, তবে পাবেন ১ হাজার ৩৩৫ ডলার পুরস্কার।

প্রথম যে ২ জন এটির সম্পূর্ণ সমাধান করেছিলেন তারা হলেন এস.সিডনি টার্নার ও ডব্লিউ.এস কেনেডি। তারা তাদের করা সমাধান পাঠিয়েছিলেন দ্য অবজার্ভারে। সমাধান সঠিক ঘোষিত হলে তারা পেয়েছিলেন নগদ অর্থ পুরস্কার, পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল নাম-পরিচয়।

পরবর্তীতে সংরক্ষণ না করায় ধাঁধার সমাধান চিরতরে হারিয়ে গেছে বলে মনে করেছিলেন অনেকেই। তবে আশার প্রদীপ যখন একেবারেই নিভুনিভু, তখন জেনেভার ঐতিহাসিক জাদুঘর শ্যান্ডি হলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা লরেন্স স্টের্নি ট্রাস্টের এর হাতে আসে বইটির একটি কপি। এরপর কিউরেটর প্যাট্রিক ওয়াইল্ডগাস্ট শুরু করেন সমাধানের চেষ্টা। পূর্বের ২ সমাধানকারীর একজনকে খুঁজে পান তারা। তার সাহায্যে পেয়ে যান কাঙ্ক্ষিত সমাধান। এরপর প্রকাশনা সংস্থা 'আনবাউন্ড' এর শরণাপন্ন হন তারা। সেখান থেকে ২০১৯ সালের হেমন্তে আবার প্রকাশিত হয় 'কেইন'স জবোন'। সমাধানের গোপনীয়তা খুব ভালোভাবেই রক্ষা করে জাদুঘরটি।

এরপর আবার আহ্বান জানানো হয় সমাধানের জন্য। ১২ জন চেষ্টা করেছেন, সম্পূর্ণ সঠিক সমাধান করতে পেরেছেন মাত্র একজন। তিনি ব্রিটিশ রম্য লেখক জন ফিনেমোর। কোভিডের সময়টায় ঘরবন্দি থাকতে থাকতে ভেবেছিলেন কিছুটা সময় এতে ব্যয় করলে মন্দ হয় না। এজন্য উপন্যাসটির প্লট নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি তো করেছেনই, বিভিন্ন রেফারেন্সও খুঁজেছেন; কিন্তু পাননি কিছুই। তারপর ৪ মাসের ধারাবাহিক চেষ্টায় তিনি পেয়ে যান কাঙ্ক্ষিত সেই সমাধান।

তিনিও এখন পর্যন্ত খুব ভালোভাবেই রক্ষা করছেন এর গোপনীয়তা। জাদুঘরের কেউ বা ওয়াইল্ডগাস্ট নিজেও এ নিয়ে কখনো মুখ খোলেননি। কাজেই পৃথিবীতে এখন জীবিতদের ভেতর এর সমাধান জানেন মাত্র ৩ জন। আর এই প্রায় অভেদ্য ধাঁধার পরবর্তী সমাধান কে কবে করতে পারবেন তা নিয়েও কিছু বলা সম্ভব নয়। ততদিন পর্যন্ত না হয় আমরা অপেক্ষাতেই থাকলাম।

তথ্যসূত্র: রিপলি'স বিলিভ ইট অর নট

গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়

Comments

The Daily Star  | English

Pakistan says it has launched military offensive against India

Locked in a longstanding dispute over Kashmir, the two countries have engaged in daily clashes since Wednesday

3h ago