৪ জিম্মি উদ্ধার অভিযানে ২১০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা ইসরায়েলের

মধ্য গাজার নুসেইরাতে একইসঙ্গে স্থল ও বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। গাজায় সংঘাত শুরুর পর থেকেই এ এলাকাটি নিয়মিত হামলার শিকার হয়েছে।
জিম্মি উদ্ধারে নুসেইরাত শিবিরে অভিযান চালায় ইসরায়েল। ছবি: এএফপি
জিম্মি উদ্ধারে নুসেইরাত শিবিরে অভিযান চালায় ইসরায়েল। ছবি: এএফপি

হামাসের হাতে বন্দি চার জিম্মিকে উদ্ধারের জন্য গাজার আল-নুসেইরাত এলাকায় তীব্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই হামলায় নিহতের সংখ্যা ২১০ ছাড়িয়েছে।

গতকাল শনিবার এই তথ্য জানায় রয়টার্স।

মধ্য গাজার নুসেইরাতে একইসঙ্গে স্থল ও বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। গাজায় সংঘাত শুরুর পর থেকেই এ এলাকাটি নিয়মিত হামলার শিকার হয়েছে।

আইডিএফের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি জানান, নুসেইরাতের এক আবাসিক মহল্লায় এই অভিযান পরিচালিত হয়। দুইটি পৃথক অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে জিম্মিদের লুকিয়ে রেখেছিল হামাস। তাদের উদ্ধার করতে গেলে আইডিএফের সদস্যরা তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়েন। এ সময় সেনাদের সহায়তার জন্য বিমানহামলা চালানো হয়।

হাগারি সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা জানি ১০০ জনের কম ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। তাদের মধ্যে কতজন জঙ্গিবাহিনীর সদস্য, তা আমার জানা নেই।'

পুলিশের বিবৃতিতে জানা গেছে, এক ইসরায়েলি স্পেশাল ফোর্স কমান্ডার এই অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন।

গাজার চিকিৎসাকর্মী ও বাসিন্দারা জানান, এই হামলায় অসংখ্য মানুষ মারা গেছেন। বাজার ও মসজিদের সামনে অসংখ্য নারী, পুরুষ ও শিশুর বিকৃত মরদেহ পড়ে আছে।

ইসরায়েলের দাবি, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের নোভা মিউজিক ফেস্টিভাল থেকে গাজায় জিম্মি করে নেওয়া বন্দিদের মধ্যে চারজনকে এই অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে।

তারা হলেন, নোয়া আরগামানি, আলমগ মেইর জান, আন্দ্রেই কোজলভ এবং শ্লোমি জিভ।

নুসেইরাত শিবিরের অভিযানের পর এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি
নুসেইরাত শিবিরের অভিযানের পর এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি

হামাসের আল-কাশেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবায়দা জানান, এই অভিযানের সময় কয়েকজন জিম্মি নিহত হয়েছে"।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র পিটার লারনার সিএনএনকে এই দাবির জবাবে বলেন, 'এটা একেবারেই মিথ্যা।'

মার্কিন গোয়েন্দা বাহিনী এই অভিযানে সহায়তা করেছে বলে উল্লেখ করেন লারনার। তবে তিনি বিস্তারিত জানাননি।

হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুরুতে ১০০ জন নিহতের কথা জানালেও পরে জানায়, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২১০ হয়েছে এবং আরও অনেক মানুষ আহত হয়েছেন।

নুসেইরাতের বাসিন্দা ও চিকিৎসাকর্মী জিয়াদ (৪৫) রয়টার্সকে বলেন, 'ঘটনাগুলো একেবারে ভয়ের সিনেমার মতো। কিন্তু এটা সিনেমা নয়, বাস্তব জীবনের গণহত্যা। ইসরায়েলি ড্রোন ও যুদ্ধবিমান সারা রাত নির্বিচারে মানুষের বাসার ওপর এবং যারা এই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে চাচ্ছিলেন, তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে।'

তিনি একটি ম্যাসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে রয়টার্সকে জানান, হামলাগুলো মূলত স্থানীয় বাজার ও আল-আওদা মসজিদকে ঘিরে সংঘটিত হয়।

'চারজনকে মুক্ত করতে ইসরায়েলিরা শত শত নিরীহ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে', যোগ করেন তিনি।

জরুরী সেবাদাতারা হতাহতদের নিকটবর্তী শহর দেইর আল-বালাহ'র হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তা সত্ত্বেও অনেক মরদেহ এখনো সড়কের ওপর পড়ে আছে। জিয়াদ ও অন্যান্য বাসিন্দারা এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জিম্মি উদ্ধারে নুসেইরাত শিবিরে অভিযান চালায় ইসরায়েল। ছবি: এএফপি
জিম্মি উদ্ধারে নুসেইরাত শিবিরে অভিযান চালায় ইসরায়েল। ছবি: এএফপি

নুসেইরাত ফিলিস্তিনিদের অনেক পুরনো একটি শরণার্থী শিবির। গত ৯ মাসের এই সংঘাতে বারবার আক্রান্ত হয়েছে এই শিবির।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এএফপির সর্বশেষ হিসাব মতে, এই হামলায় এক হাজার ১৯৪ জন নিহত হন। একইসঙ্গে ২৫০ জনকে জিম্মি করে হামাস। গত নভেম্বরে বন্দি বিনিময়ের সময় মুক্তি পান ১০০ জিম্মি। বাকি জিম্মিদের মধ্যে ১১৬ জন এখনো গাজায় আছেন। ইসরায়েলের দাবি, অন্তত ৪০ জিম্মি নিহত হয়েছেন।

এই হামলার প্রতিশোধ হিসেবে সেদিনই গাজার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ও নির্বিচার বিমানহামলা শুরু করে ইসরায়েল। পরবর্তীতে স্থলবাহিনীও এতে যোগ দেয়। গত ৭ মাসে ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা অন্তত ৩৬ হাজার ৮০১ ছাড়িয়েছে। আহতের সংখ্যা ৮৩ হাজারেরও বেশি। হতাহতের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

শনিবার দিনের শেষে ইসরায়েলি বিমানহামলায় মধ্য গাজার আল-বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে আরও পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হন।

Comments

The Daily Star  | English

Hathurusingha suspended as Bangladesh coach

Chandika Hathurusingha has been suspended as the head coach of the Bangladesh cricket team, the president of the Bangladesh Cricket Board (BCB) Faruque Ahmed announced in Mirpur today.

4h ago