মিয়ানমারে এখনো গণহত্যা চলছে: জাতিসংঘ

মিয়ানমারে জাতিগত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর এখনো গণহত্যা চলছে বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ। দেশটিকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের কোনো আগ্রহ নেই বলেও মন্তব্য করে এই বিশ্বসংস্থা।
rohingya refugees
মিয়ানমারে নির্যাতন থেকে বাঁচতে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গাদের ঢল। স্টার ফাইল ছবি

মিয়ানমারে জাতিগত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর এখনো গণহত্যা চলছে বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ। দেশটিকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের কোনো আগ্রহ নেই বলেও মন্তব্য করে এই বিশ্বসংস্থা।

গতকাল (২৪ অক্টোবর) জাতিসংঘে এক সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমারে সংস্থাটির তদন্ত দলের প্রধান মারজুকি দারুসমান বলেন, “বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সামরিক বাহিনীর নির্যাতন এখনো চলছে। তারা এখনো বিভিন্ন রকমের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।”

“এটি একটি চলমান গণহত্যা- যা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এখনো চলছে,” মন্তব্য বিশ্বসংস্থার এই শীর্ষ কর্তার। দেশটিতে রোহিঙ্গাদের সন্তান জন্ম দেওয়ার ওপর রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

জাতিসংঘে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত হাউ দু সুয়ান বিশ্বসংস্থার তদন্তদলের প্রতিবেদনকে “ভুলে ভরা, পক্ষপাতদুষ্ট এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” হিসেবে অভিহিত করেছেন।

মিয়ানমারে মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ তদন্তকারী ইয়াংহি লি বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকের মতো আমিও আশা করি অং সান সুচির নেতৃত্বে মিয়ানমার তার অতীতের নির্যাতনমূলক কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসবে। কিন্তু, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে দেশটি আগের অবস্থাতেই রয়ে গেছে।”

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এবং মিয়ানমারের রাজনৈতিক নেত্রী সুচি দেশটির রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান হত্যা ও নির্যাতনকে মুখ মুছে অস্বীকার করে যাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন জাতিসংঘের এই বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা।

তিনি জানান, সুচির সরকার মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত ঘটনাগুলোর আন্তর্জাতিক তদন্তের অনুমতি তো দিচ্ছেই না সেই সঙ্গে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনকেও খারিজ করে দিচ্ছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

তার মতে, দেশের সব মানুষের স্বাধীনতা এবং অধিকার মেনে নিয়ে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কোনো আগ্রহই দেখাচ্ছে না মিয়ানমার।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের প্রাক্কালে দারুসমান এবং লি এমন বক্তব্য দিলেন।

মিয়ানমার নিয়ে কথা বলতে বাধা দিয়ে ব্যর্থ চীন

নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে মিয়ানমারে জাতিসংঘের তদন্তদলের প্রতিবেদন তুলে ধরার বিষয়ে বাধা দিয়ে ব্যর্থ হয়েছে চীন। মহাপ্রচীরের দেশটির এমন প্রচেষ্টাকে পেছন থেকে সমর্থন দেয় অপর পরাশক্তি রাশিয়া।

পরিষদের স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে মোট ১৫ সদস্যের মধ্যে নয় সদস্য রাজি হওয়ায় ভেস্তে যায় চীন-রাশিয়ার বাধা।

রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের আচরণ সংক্রান্ত জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন নিরাপত্তা পরিষদে তুলে ধরার পক্ষে ভোট দেয় যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, দ্য নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, আইভরি কোস্ট, কুয়েত, পেরু এবং পোল্যান্ড। আর বিপক্ষে ভোট দেয় চীন, রাশিয়া এবং বলিভিয়া। তবে ভোটদানে বিরত ছিলো ইকুয়েডরাল গিনি, ইথিওপিয়া এবং কাজাখস্তান।

Comments