‘শর্তে কোণঠাসা ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ’

সিলেটে সমাবেশের পর আজ (২৭ অক্টোবর) চট্টগ্রামে দ্বিতীয় রাজনৈতিক সমাবেশ করতে যাচ্ছে নবগঠিত বিরোধী রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকায় বিএনপির দলীয় কার্যালয় নসিমন ভবনের সামনের নূর আহম্মদ সড়কে দুপুর দুটায় এই সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে।
chottagram rally
২৭ অক্টোবর ২০১৮, বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কাজীর দেউরী এলাকায় নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় রাজনৈতিক সমাবেশে যোগ দিতে সমবেত হচ্ছেন জোটের নেতাকর্মীরা। ছবি: স্টার

সিলেটে সমাবেশের পর আজ (২৭ অক্টোবর) চট্টগ্রামে দ্বিতীয় রাজনৈতিক সমাবেশ করতে যাচ্ছে নবগঠিত বিরোধী রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকায় বিএনপির দলীয় কার্যালয় নসিমন ভবনের সামনের নূর আহম্মদ সড়কে দুপুর দুটায় এই সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে।

সব প্রস্তুতি সম্পন্ন থাকলেও সমাবেশ করা নিয়ে এক গাদা অভিযোগ করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘‘চট্টগ্রামে সমাবেশ করতে যাওয়ার জন্য আমরা পূর্বে যেসব হোটেল বুক করে রেখেছিলাম, সেগুলো সব বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। আগে এসে কেউ যাতে কোথাও থাকতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভালো ও মাঝারি মানের হোটেল তো দূরের কথা, নিচু মানের হোটেলগুলোতেও কোনো জায়গা নেই। তারা যতোভাবে পারে আমাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে।’’

‘‘অনেক বাধা-বিপত্তি, নানারকম শর্তে আমরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছি। কী আর বলবো। সিলেটের মতো এখানেও আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে,’’ যোগ করেন মওদুদ।

তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি কার্যালয়ের সামনের সংকীর্ণ রাস্তায় মঞ্চ তৈরি করার অনুমতি দিয়েছে। এছাড়াও পুলিশ বলেছে যে, মঞ্চের দৈর্ঘ্য যেন কোনোভাবেই ১৮ ফুটের বেশি না হয়। এমনকি গতরাত ১২টা পর্যন্ত মঞ্চ তৈরিই করতে দেয়নি তারা। কোনো ডেকোরেটরই আসতে চায়নি। সবাইকে হুমকিসহ মানা করে দেওয়া হয়েছে।”

তার মতে, “এক ডেকোরেটর ঝুঁকি নিয়ে মঞ্চ তৈরি করতে আসলেও তাকে মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রেখেছে। শেষে পুলিশকে অনেক অনুনয়ের পর ছোট্ট একটি মঞ্চ তৈরি করতে পেরেছে তারা। এখন আমরা কোথায় যে বসবো আর সমাবেশই বা হবে কেমন করে, তা আসলেই বুঝতে পারছিনা।’’

‘‘কিন্তু সরকার ঠিকই বলে যাচ্ছে, আমরা তো তাদের সমাবেশ করতে দিচ্ছি। দেশের জনগণকে এভাবেই বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আমাদের লালদীঘি ময়দানে সমাবেশের অনুমতি দিলে কি হতো? তাতে কি সরকারের পতন হতো?’’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার কণ্ঠেও একই অভিযোগের সুর। তিনি বলেন, ‘‘নানা শর্ত সাপেক্ষে সমাবেশ করতে দেওয়াকে পুলিশ ‘পুনর্মিলনী’র মতো করে ফেলেছে। বিকাল পাঁচটার মধ্যে সমাবেশ শেষ করতে বলেছে। এমনিতেই সরু রাস্তা, তার উপর পুলিশ বলছে এর একপাশ ব্যবহার করে অন্যপাশে যানবাহন চলতে দিতে হবে।’’

তারপরও সমাবেশ সফল হবে, এমন আশা জানিয়ে মান্না বলেন, ‘‘এখন সরকার বাধা দিয়ে আসলে কিছু করতে পারবে না। স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এতো বেশি মানুষ আসছে যে, তাদের বাধা দিয়ে আর ঠেকিয়ে রাখতে পারছে না তারা। এখানেও শান্তিপূর্ণভাবে সফল সমাবেশ হবে।”

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পরবর্তী সমাবেশ আগামী ২ নভেম্বর রাজশাহীতে হওয়ার কথা থাকলেও, তা করতে পারছেন না বলে জানান মান্না। তিনি বলেন, ‘‘সম্ভবত সেখানে ধর্মীয় কোনো সমাবেশের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী থাকার কারণে তা আর হচ্ছে না।”

তবে চট্টগ্রাম থেকে ফিরে ঐক্যফ্রন্টের সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসবেন বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘‘অনেকেই বলছেন ঢাকায় বড় কোনো কর্মসূচী দেওয়া যায় কি না। বিষয়টি নিয়ে আমিও ভাবছি।’’

আমাদের চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান, গতরাতে নেতা-কর্মীদের বাসায় বাসায় গিয়ে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতারা। এছাড়াও, গতরাতেই চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু সুফিয়ান।

তবে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম বলেন, ‘‘রাতে বাসায় বাসায় গিয়ে অভিযানের বিষয়ে বিএনপির অভিযোগ সঠিক নয়। এই ধরণের পেট্রল ডিউটি প্রতি রাতেই পালন করে পুলিশ। প্রায় ৭০ লাখ মানুষের শহর চট্টগ্রামে ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটি তো স্বাভাবিক ঘটনা।’’

সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালিত হয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সমাবেশস্থলে ১৫ প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলে জানান তিনি।

Comments