ক্রিকেট থেকে রাজিনের আবেগঘন বিদায়
জাতীয় লিগের এই মৌসুম খেলে ব্যাট-প্যাড তুলে রাখবেন, চেনাজানা মহলে আগেই এমন ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন রাজিন সালেহ। কক্সবাজারে শেষ রাউন্ডের ম্যাচটি শুরু হবে ৫ নভেম্বর। সিলেটের অভিষেক টেস্টে তাই আসারই পরিকল্পনা ছিল না তার। কিন্তু মনের টানে অল্প সময়ের মধ্যেও উড়ে এসেছেন সিলেটে। বিদায় বলার জন্য এমন মঞ্চ যেন অপেক্ষায় ছিল রাজিনের জন্যও। সিলেটের প্রেসবক্সেই রাজিন ঘোষণা দিলেন, ৫ নভেম্বর থেকে কক্সবাজারে নামবেন জীবনের শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলতে।
রাজিনের অবসরের পর শেষ হবে একটি অধ্যায়েরও। দেশের অভিষেক টেস্টের স্কোয়াডে ছিলেন তিনি। দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে নেমে নিয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকার, মুরালি কার্তিকের ক্যাচ। সেই টেস্টের স্কোয়াডে থাকা আর কেউই নেই প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে। রাজিনের থামার সঙ্গে বন্ধ হবে তাই এই অধ্যায়।
২০০০ সালে প্রথম শ্রেনীতে অভিষিক্ত রাজিন দেশের সবচেয়ে পুরনো প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটার। তার সঙ্গে খেলা শুরু করা মোহাম্মদ আশরাফুল ও তুষার ইমরানই কেবল আছেন এখনো খেলায়।
সিলেটের অভিষেক টেস্ট উপলক্ষে সিলেটের টেস্ট ক্রিকেটারদের সম্মাননা স্মারক দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ করেছিলেন স্থানীয় আয়োজকরা। তবে কেবল হাসিবুল হোসেন শান্ত, এনামুল হক জুনিয়র আর রাজিনই আসতে পেরেছেন এখানে।
শনিবার অভিষেক টেস্টে সম্মাননা নিয়েই প্রেসবক্সে ছুটে এলেন রাজিন আর এনামুল। পরিচিত সাংবাদিকদের সঙ্গে জমে উঠল আড্ডা। ওখানেই রাজিনের ঘোষণা। কিছুটা আবেগাক্রান্ত, কিছুটা বিষাদময়, ‘ভাই-বন্ধুরা সবাইকে বলতে চাই ৫ তারিখ জীবনের শেষ ম্যাচটি খেলতে নামব। সবাই দোয়া করবেন।’ ৫ নভেম্বর কক্সবাজারে হবে ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে হবে রাজিনের বিদায়ী ম্যাচ।
খেলা শুরু করেছিলেন সেই ১৯৯৮ সালের দিকে। প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে অভিষেক ২০০০-২০০১ মৌসুমে। এরপর খেলে গেছেন টানা। বাংলাদেশের হয়ে ২০০৩ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত খেলেছেন। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিতই খেলেছেন তিনি।
১৪৭টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলে ১৮ সেঞ্চুরিতে ৮৩২৭ রান করেছেন। ২৪ টেস্টের ক্যারিয়ার থেমেছে সেই ২০০৮ সালে। ৭ ফিফটিতে ১১৪১ রান খুব আহামরি কিছু নয়। ৪৩ ওয়ানডেতে এক সেঞ্চুরিতে করেছেন ১০০৫। তবে রাজিন যেসময় বাংলাদেশ দলে খেলেছেন সে সময় এই পরিসংখ্যানই গোনায় ধরার মতো ছিল। ধুঁকতে থাকা দলকে মানসিক দৃঢ়তায় অনেকবারই বাঁচিয়েছেন তিনি। ২০০৩ সালে পাকিস্তান সিরিজ দিয়েই তার অভিষেক। সে সিরিজে সামলাতে হয়েছে শোয়েব আখতারের গোলা। চোয়লবদ্ধ দৃঢ়তায় সে সিরিজে দিয়েছেন চূড়ান্ত নিবেদন।
খেলা ছাড়ার পর নিজের ক্রিকেট একাডেমি আর ক্রিকেট কোচিং নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন ২০০৪ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া রাজিন।
Comments