নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ
দেশের বিভিন্ন জেলায় মাঠপর্যায়ের সম্ভাব্য নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত তথ্য এবং রাজনৈতিক মতাদর্শের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিচ্ছে পুলিশ। এতে তাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ভোটের দিন স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত থাকেন। সম্ভাব্য এসব নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলেন, ‘বিগত নির্বাচনগুলোতে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন তারা। কিন্তু কোনবারেই তাদের এবারের মতো যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি।’
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা এবং কুষ্টিয়ার অন্তত কয়েক ডজন শিক্ষক এ ব্যাপারে দ্য ডেইলি স্টারের কাছে তাদের উদ্বেগ জানিয়েছেন।
পুলিশ যেসব তথ্য সংগ্রহ করছে তার মধ্যে রয়েছে, সম্ভাব্য নির্বাচনী কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নাম এবং সবার রাজনীতি সংশ্লিষ্টতার যাবতীয় তথ্য।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়টি উত্থাপন করেছে তার দল। জবাবে নির্বাচন কমিশন জানায়, ফৌজদারি মামলায় সম্ভাব্য কোনো কর্মকর্তা অভিযুক্ত কি না সে ব্যাপারে তদন্ত করছে পুলিশ।’
গত জুলাইয়ের শুরুর দিকে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের একটি সরকারি উদ্যোগ স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দেয়। সে সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের রাজনৈতিক মতাদর্শের তথ্য সংগ্রহ করে পুলিশ। এমনকি এসব কর্মকর্তারা ছাত্রাবস্থায় কোনো রাজনৈতিক দলের অনুসারী ছিলেন কি না, সেসবেরও খোঁজ নেওয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জের ডিএন রোডের শের-ই-বাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা বাবলি বেগম জানান, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সদর থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা তার সঙ্গে দেখা করে সহকর্মীদের যাবতীয় তথ্য নিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, ‘ওই পুলিশ কর্মকর্তা সে সময় কয়েকজন শিক্ষকের রাজনৈতিক মতাদর্শের ব্যাপারেও জানতে চান। কিন্তু ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে পাল্টা প্রশ্ন করলে, নির্বাচনের জন্য এসব তথ্য নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।’
ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘গত ২৪ বছর ধরে তিনি শিক্ষকতা পেশায় আছেন। এ সময়ের মধ্যে অনেকগুলো নির্বাচনে তাকে দায়িত্বপালন করতে হয়েছে। কিন্তু সব শিক্ষকের ব্যাপারে পুলিশকে এভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে কখনও দেখেননি তিনি।’
চাষাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খালেদা পারভীন বলেন, ‘তিনি এবং তার সহকর্মীদের কেউ রাজনীতিতে জড়িত কি না সে ব্যাপারে পুলিশের কর্মকর্তারা জানতে এসেছিলেন।’
নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আসা নির্বাচনী কর্মকর্তাদের একটি তালিকা ধরেই তথ্য সংগ্রহ করছেন তারা। এর বাইরে আর কোনো তথ্য দিতে চাননি তিনি।
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার এক কলেজ শিক্ষক বলেন, ‘সাদা পোশাকের কয়েক ব্যক্তি নিজেদের গোয়েন্দা কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সম্প্রতি আমার একজন রাজনীতি সমর্থক সহকর্মীর কাছে আমার এবং অন্য সহকর্মীদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছে।’ তারা জানতে চেয়েছে, আমি এবং অন্যরা রাজনীতিতে সরাসরি সম্পৃক্ত অথবা সমর্থক কি না।
এছাড়া, পাবনার ফরিদপুর, ঈশ্বরদী এবং সুজানগরের অন্তত দশ জন স্কুল ও কলেজ শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছে দ্য ডেইলি স্টার। তাদের অন্তত ছয় জন জানিয়েছেন যে, তারা এ ধরণের পুলিশি তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন।
Comments