২৫ শতাংশ রাইস ব্রান তেল নিম্নমানের

দেশে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের মধ্যে ধানের কুঁড়া থেকে তৈরি ভোজ্যতেলের (রাইস ব্রান অয়েল) চাহিদা বাড়ছে। সয়াবিন তেলের পাশাপাশি মানুষ এখন এই তেলের দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে রাইস ব্রান ওয়েলের নামে বাজারে যেসব তেল পাওয়া যাচ্ছে তার মধ্যে ২৫ শতাংশ ব্র্যান্ডের তেলই নিম্নমানের।

দেশে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের মধ্যে ধানের কুঁড়া থেকে তৈরি ভোজ্যতেলের (রাইস ব্রান অয়েল) চাহিদা বাড়ছে। সয়াবিন তেলের পাশাপাশি মানুষ এখন এই তেলের দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে রাইস ব্রান ওয়েলের নামে বাজারে যেসব তেল পাওয়া যাচ্ছে তার মধ্যে ২৫ শতাংশ ব্র্যান্ডের তেলই নিম্নমানের।

বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে ১২টি ব্র্যান্ডের রাইস ব্রান ওয়েল পাওয়া যাচ্ছে। এসব তেলের মান যাচাইয়ে সরকারি ভাবেই একটি গবেষণা চালানো হয়েছে। গবেষণার ফলাফল বলছে, এই তেলে যে মাত্রায় ওমেগা প্রোটিন থাকার কথা তিনটি ব্র্যান্ডের তেলে সেই মাত্রায় তা পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) এই গবেষণা চালিয়েছে।

গবেষণার ফল সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বিএআরসি’র পুষ্টি বিভাগের পরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, অনেক ধরনের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা থাকায় রাইস ব্রান ওয়েল জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখেছি যে ২৫ শতাংশ তেলে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ এর মতো উপকারী উপাদানগুলো প্রয়োজনীয় মাত্রায় নেই।

দ্য ডেইলি স্টারকে মনিরুল বলেন, দেশের ১২টি ব্র্যান্ডেরই নমুনা সংগ্রহ করে তারা ভারতের আহমেদাবাদে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে গুণগত মান যাচাই করে দেখা গেছে তেলের বোতলের গায়ে যেসব পুষ্টি উপাদানের কথা লেখা রয়েছে তার একটির সঙ্গেও ফলাফলের পুরোপুরি মিল পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ ভোজ্য তেলের বাজার আমদানি করা সয়াবিন ও পাম তেলের ওপর পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল। ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো বাজারে রাইস ব্রান ওয়েল আসার পর স্বাস্থ্যগত উপকারিতার দিকটি বিবেচনা করে অনেকেই একে সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে রান্নাঘরে ঠাঁই দিয়েছিলেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর জনপ্রিয়তাও বেড়েছে বাংলাদেশে।

ধানের তুষ আলাদা করে ফেললে যে চাল পাওয়া যায় তার ওপর একটি খোসা থাকে। ওই খোসাই কুঁড়া বা রাইস ব্রান। বিশেষ উপায়ে এই কুঁড়া পিষে তেল পাওয়া যায়। এই তেলে ভিটামিন, এন্টিঅক্সিডেন্টসহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান থাকার পাশাপাশি এতে ক্ষতিকর ফ্যাট নেই। ২০০৫ সালে আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী রাইস ব্রান তেল প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই তেলে প্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরনের ফ্যাটি এসিড থাকে। আর স্থূলতার জন্য যেসব উপাদানকে সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয় তার মধ্যে অন্যতম মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট থাকে না রাইস ব্রান ওয়েলে।

এই অবস্থায় উপকারী এই তেলের গুণগত মান উন্নয়নে ও বাজার রক্ষায় উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে পরিবেশক ও মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তদারকি বাড়ানোর দিকে জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) একজন কর্মকর্তা জানান, পরীক্ষায় নিম্নমানের রাইস ব্রান ওয়েল পাওয়া যাওয়ার ব্যাপারে তারা অবগত ছিলেন না। তবে তিনি এটাও বলেছেন যে, বিএসটিআই নিয়মিত রাইস ব্রান ওয়েলের মান পরীক্ষা করে থাকে।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তিনি বলেন, ‘কোনো কোম্পানি তার পণ্য বাজারজাত করার আগে আমরা মান যাচাই করে দেখি। একটি নজরদারী দল ও ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়মিত তেলের মান যাচাই করে।’

রাইস ব্রান তেল শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উৎপাদনের পর প্রত্যেক ক্ষেত্রেই তেলের মধ্যে ওমেগা-৩ প্রোটিনের উপস্থিতির মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা সম্ভব নয়। কারণ এই পরীক্ষার যেমন খরচ অনেক তেমনি ফলাফল পেতেও বেশ কিছুদিন সময় চলে যায়। তাদের মতে, এটি একটি কৃষিপণ্য। তাই পণ্য ভেদে এর মান ভিন্ন হতেই পারে।

Comments