নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক কতটা জরুরি?
আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে না বলে জানিয়েছে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট (ইপি)।
ইপি’র ডেমোক্রেসি সাপোর্ট অ্যান্ড ইলেকশন কোঅর্ডিনেশন গ্রুপের দুজন সহযোগী চেয়ারপারসন ডেভিড ম্যাকঅ্যালিসটার ও লিন্ডা ম্যাকঅ্যাভান এক বিবৃতিতে জানান, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবে না এবং ফলাফল নিয়েও কোনো মন্তব্য করবে না। এছাড়া, ইইউ মিশনও এবার বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইপি’র কোনো সদস্য যদি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করেন সেটা ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মতামত হিসেবে বিবেচিত হবে না।
গত ১৫ নভেম্বর ইপি তাদের রেজুলেশনে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলে, বাংলাদেশের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলক হবে যেন নাগরিকরা তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে বেছে নেওয়ার সুযোগ পায়।
এর আগে নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষণ আসার বিষয়ে জোর দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জোটের শীর্ষ নেতারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে বৈঠকও করেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ভোটগ্রহণের তারিখ পেছানোর দাবিও জানানো হয়। একইসঙ্গে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
এই প্রসঙ্গে ১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “কোনো বিদেশি পর্যবেক্ষকের ব্যক্তিগত কারণে আসতে বিলম্ব হলে একটি রাষ্ট্র তার নির্বাচন পেছাতে পারে না। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য জাতীয় নির্বাচনের তারিখ পিছাতে হবে এটা হাস্যকর, অবান্তর, অবাস্তব, ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক দাবি।”
ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ১৫ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, “নির্বাচনের তারিখ পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। কেননা, বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে বলা যায় যে সেই দাবি অযৌক্তিক বা বাস্তবসম্মত নয়।”
নির্বাচনে বিদেশী পর্যবেক্ষক বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, “নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক এলে সেটা আমাদের জন্য ভালো। নির্বাচনের ক্রেডিবিলিটি বাড়ে। বিদেশি পর্যবেক্ষক আমাদের জন্য চেক পয়েন্ট হতে পারে। এবার ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসছে না। এটা তাদের সিদ্ধান্ত, তারা না এলে আমাদের কিছু বলার থাকে না। যেহেতু তারা আসছে না, আমার ধারণা তারা নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং ফলাফলের বিষয়েও কোনো মন্তব্য করবে না। তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। কিন্তু তাদের আচরণে মনে হচ্ছে, তারা যেন অফিসিয়ালি বিচ্ছিন্ন থাকতে চাচ্ছে। এর পেছনের কারণ কী সেটা আমি জানি না।”
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “বিদেশি পর্যবেক্ষক তো আর সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে না। তবে চোখ-কান খোলা রাখলে, বিশেষ করে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের খোলা থাকলে আমাদের জন্য ভালো। যতদূর মনে পড়ে, ২০০৮ সালেও বিভিন্ন সংস্থা থেকে বিপুল সংখ্যক বিদেশি পর্যবেক্ষক বাংলাদেশে এসেছিলো। এবারের নির্বাচনে অনেক জটিলতা আছে, অনেকগুলো সমস্যা আছে। সেগুলো দূরীকরণে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা ভূমিকা রাখতে পারতেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, তারা আসছেন না। এটা ভালো সংবাদ না।”
Comments