নোয়াখালী-৪ আসনে প্রচারণায় শুধু আওয়ামী লীগ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর বেশি দিন বাকি নেই। দেশের অন্যান্য আসনে নির্বাচনী প্রচারণা জমে উঠলেও নোয়াখালী-৪ আসনের পরিস্থিতি দেখা গেছে অন্যরকম। সদর উপজেলা ও সুবর্ণচর এলাকা নিয়ে গঠিত এই আসনে কেবল আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষেই প্রচারণা চলছে। অন্যদলের প্রার্থীদের কেউ এখন পর্যন্ত জনসংযোগে না নামলেও, মাঠে দাঁড়াতে না দেওয়ার অভিযোগ এসেছে বিএনপির কাছ থেকে।
৫ লাখ ৪৪ হাজার ৩২৯ ভোটারের এই আসনে এবারও আওয়ামী লীগের (নৌকা) হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন বর্তমান সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী। তার বিপরীতে আছেন বিএনপির (ধানের শীষ) মো. শাহজাহান, জাতীয় পার্টির (লাঙল) মোবারক হোসেন আজাদ, খেলাফত মজলিসের (দেয়াল ঘড়ি) আবদুল আলী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের (হাতপাখা) আবদুল হান্নান, খেলাফত আন্দোলনের (বটগাছ) ফরিদ মিয়া, সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের (মই) মহিন উদ্দিন চৌধুরী, ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফের (টেলিভিশন) সামসুন নাহার।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন সকালে দলীয় কার্যালয় থেকে ৩/৪টি অটোরিকশা নিয়ে মাইকিং করতে বেরিয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এর ফাঁকে ফাঁকে মহাসমারোহে জনসংযোগ করতে বের হন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী একরামুল করিম চৌধুরী। প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাউকে না পেয়ে তিনি একাই যেন ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে যাচ্ছেন।
অপরদিকে, বিএনপি নেতাদের অভিযোগ- ভয়ে তারা প্রচারণায় নামতে পারছেন না। নামলেই তাদের উপর হামলা করছে আওয়ামী লীগের লোকজন। গত ১১ ডিসেম্বর নোয়াখালীর পশ্চিম ইসমাইল নগরে নির্বাচনী সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী হানিফ নিহতের পর থেকেই বিএনপির নেতা-কর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে জানান তারা।
গতকাল বিএনপির প্রার্থী মো. শাহজাহান বলেন, “নেতা-কর্মীরা তো দূরে থাক, আমি নিজেই ভোটারদের কাছে যেতে পারছি না। প্রচারণা করতে গেলেই বিরোধীপক্ষের হামলার মুখে পড়ি। আওয়ামী লীগের লোকজন সবসময় রাস্তায় ঘুরছে। আর আমরা ঘরে একরকম বন্দি হয়ে আছি। এলাকায় কোনো শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেখছি না। জনসংযোগ করার মতো সাহসও পাচ্ছি না। তার উপর আবার যুবলীগ কর্মী হত্যা মামলায় আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।”
এ বিষয়ে সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, “এখানে পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। কারো পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে না।”
স্থানীয় ভোটার নূরুল আমীন হাওলাদার (৫৫) বলেন, “জীবনে অনেক নির্বাচন দেখেছি। কিন্তু, এবারের মতো ভয়ার্ত পরিবেশ কখনও দেখিনি। কোনো প্রার্থীকেই ভোটারদের বাড়ি যেতে দেখলাম না। শুধু আওয়ামী লীগের লোকজন মাইকিং করে প্রচারণা চালাচ্ছে।”
নোয়াখালী-৪ আসনের ২০/৩০ কিলোমিটার এলাকায় গত দুইদিনে ভ্রমণ করে দেখা গেলো, প্রায় সবখানেই একরামুল করিম চৌধুরীর পোস্টার টানানো রয়েছে। শহরাঞ্চলে বিএনপি প্রার্থী শাহজাহানের কিছু পোস্টার থাকলেও, গ্রামাঞ্চলে একেবারেই চোখে পড়েনি। এছাড়াও, দুই-এক জায়গায় জাতীয় পার্টি এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর পোস্টার পাওয়া গেলেও, এসব দলের প্রার্থীদের কোথাও জনসংযোগ করতে দেখা যায়নি।
তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা বলেন, “পরিস্থিতি যাই হোক, আগামী চার-পাঁচদিনের মধ্যে আমরা মাঠে শক্ত অবস্থান নেবো। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করবো।”
Comments