বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে: শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর দরিদ্র জনগণের জীবন মান উন্নয়নে সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, পুনরায় ক্ষমতায় আসলে তার সরকার নগরীর ঘিঞ্জি এলাকা সংস্কারের পাশাপাশি বস্তিবাসীদের বসবাসের জন্য ফ্লাট নির্মাণ করে দেবে।
কামরাঙ্গীরচরে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: বাসস

আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর দরিদ্র জনগণের জীবন মান উন্নয়নে সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, পুনরায় ক্ষমতায় আসলে তার সরকার নগরীর ঘিঞ্জি এলাকা সংস্কারের পাশাপাশি বস্তিবাসীদের বসবাসের জন্য ফ্লাট নির্মাণ করে দেবে।

তিনি বলেন, ‘কেবল বড় লোকেরাই ফ্লাটে থাকবে এবং বহুতল ভবনে থাকার সুবিধা পাবে, তা হবে না। মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষেরাও যাতে দৈনিক, সাপ্তাহিক অথবা মাসিক মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে ফ্লাটে থাকতে পারে আমরা সেই ব্যবস্থাই করে দিচ্ছি, যেখানে সকলে সুন্দরভাবে বাঁচার সুযোগ পাবে।’ এই লক্ষ্যে ‘আমরা ফ্লাট নির্মাণ করে বস্তিবাসীদের থাকার ব্যবস্থা আমরা করে দেব।’

শেখ হাসিনা আজ দুপুরে রাজধানীর ঢাকা-২ আসনের অন্তর্গত কামরাঙ্গীর চরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় একথা বলেন।

হাসিনা বলেন, কামরাঙ্গীর চরের যারা ছিন্নমূল মানুষ, বস্তিবাসী তারা যেমন ভাড়া দিয়ে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এই এলাকায় ১০ হাজার ফ্লাট নির্মাণের পরিকল্পনা আমরা হাতে নিয়েছি। এই ফ্লাটগুলোতে দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং মাসিক নামমাত্র ভাড়ায় থাকতে পারবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, পুরো ঢাকার শহরকে ঘিরে আমরা একটা রিং রোড তৈরি করবো। যেই রিং রোডটি হবে সম্পূর্ণ এলিভেটেড। যাতে দ্রুতগামী সমস্ত যানবাহন চলতে পারে।

তিনি বলেন, ঢাকা শহরকে ঘিরে যে পাঁচটি নদী আছে সেই নদীগুলোকে খনন করে এর নাব্যতা ফিরিয়ে এনে সেটার আরও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হবে। এ সময়ে তিনি কামরাঙ্গীর চর খালটি শুকিয়ে ক্ষীণকায় হয়ে আসার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, জলাধারকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। এই খাল বন্ধ হওয়া উচিত নয়। তিনি জনসভায় উপস্থিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনকে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে এই খালটি উদ্ধার করে খালে যাতে আরও ভালো পানি থাকে সে ব্যবস্থা করতে বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দেখতে পাচ্ছি ময়লা ফেলে ফেলে এই খালটি বন্ধ তরা হচ্ছে এবং ভূমিখেকোরা এখানের অনেক অংশ দখল করে নিয়েছে। আমি মনে করি কোনো জলাধার বন্ধ করা উচিত নয়, বরং এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা, দুই পাড় বাঁধিয়ে দেওয়া- পানিটা যাতে নিষ্কাশন হয় তার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তাহলে পরিবেশটা ভালো হবে, বাতাসটাও স্বাস্থ্যকর থাকবে এবং মানুষের বসবাস আরও আরামদায়ক হবে। আমরা সেই ব্যবস্থাটা করতে চাই। শেখ হাসিনা বলেন, যারা এই খাল দখল করছে, এই দখল করা বন্ধ করতে হবে।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে সমাবেশে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনসহ ঢাকা দক্ষিণের সংসদ সদস্য প্রার্থীগণ বক্তৃতা করেন।

শেখ হাসিনা সমাবেশে ঢাকা দক্ষিণের নৌকা এবং মহাজোটের সকল প্রার্থীদের সঙ্গে জনগণের আনুষ্ঠানিক পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি বলেন, যেহেতু এই ঢাকা-২ আসনের সঙ্গে সাভারের কিছু অংশ আছে, কেরানীগঞ্জের কিছু অংশ আছে তাই সাভারেরও আমরা ব্যাপক উন্নয়ন করেছি এবং সেখানে ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১২টি উচ্চবিদ্যালয় ভবন করে দিয়েছি, কলেজ-মাদ্রাসার উন্নয়ন করা হয়েছে, তেঁতুলঝড়া ডিগ্রী কলেজ এমপিও ভুক্ত করা হয়েছে। আমিনবাজার কবরস্থান সংস্কার করা হয়েছে, ৩৪টি সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। তিনটি সেতু নির্মাণ করা করা হয়েছে। তেমনি কেরানীগঞ্জসহ সমগ্র বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়নের কাজ আমরা করে যাচ্ছি। এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকাটা একান্তভাবে দরকার। কারণ ইতোমধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হয়েছে, মেট্রোরেল নির্মাণ করে যাচ্ছি, যানজট দূর করার জন্য ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছি এবং বিভিন্ন কর্মসূচি নিচ্ছি। ঢাকাকে নিয়ে তার সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ঢাকায় আমরা পাতাল রেল করবো। তার সমীক্ষার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ‘আর নদীগুলো খনন করে এর নৌপথটাও আমরা সচল করে দেব। এই ভাবে ঢাকার যেমন সৌন্দর্য বৃদ্ধি হবে, যোগাযোগ ব্যবস্থাও উন্নত এবং যানজটও মুক্ত হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আর গোটা বাংলাদেশব্যাপী পরিকল্পনাতো আমাদের রয়েছেই,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

ঢাকার অতীত দুরবস্থার কথা স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, পানির জন্য হাহাকার ছিল, ওয়াসার দেড়শ’ টাকার পানির গাড়ি ১৫শ’ করে টাকা দিয়ে কিনতে হত। দিনভর চলতো বিদ্যুতের লোডশেডিং, বিদ্যুতই ছিল না। রাস্তা-ঘাট আরও করুণ অবস্থা ছিল, পয়নিষ্কাষণ ব্যবস্থা বলতে গেলে ছিলই না, একটি অসহনীয় অবস্থা ছিল। যে কারণে বিএনপি’র এমপি’রা জনগণের রুদ্র রোষে পতিত হয়েছিল। এমনকি তাঁদের ধাওয়া খেয়ে বিএনপি’র এমপিরা পালাত। যার জন্য এক এমপি’র নামই হয়ে গেল দৌড় সালাউদ্দিন।

গত ১০ বছরে তার সরকার পানি ও বিদ্যুতের সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেমন উৎপাদন বাড়িয়ে মানুষের খাদ্য সংস্থান করেছি তেমনি সঞ্চালন লাইন তৈরি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে গ্রাম পর্যন্ত আমরা মানুষকে বিদ্যুৎ দিয়েছি এবং দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আমরা করেছি।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus holds brief meeting with Malaysian PM at Dhaka airport

Following the meeting, they boarded the same car to travel to the bilateral venue

2h ago