‘ভোট শেষ হলে হামদের খবর আর কেউ নায় রাখে’

চা বাগানের রাস্তাগুলোর দুপাশের গাছগুলোতে লাগানো হয়েছে দড়ি। সেই দড়িতে ঝুলছে পোস্টার। কোথাও নৌকা, কোথাও ধানের শীষ। রাস্তাঘাট এখন ছেয়ে গেছে এসব পোস্টারে। সকাল পেড়িয়ে দুপুর গড়াতেই বাগানের অলি-গলি থেকে ভেসে আসে মাইকের শব্দ।
Tea labourers
মৌলভীবাজার-৪ আসনে প্রায় লক্ষাধিক চা শ্রমিক ভোটার রয়েছেন যারাই আসলে এই আসনে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে দেন। তাদের অনেকের অভিযোগ, শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মানের কোনো উন্নয়ন হয়নি। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা

চা বাগানের রাস্তাগুলোর দুপাশের গাছগুলোতে লাগানো হয়েছে দড়ি। সেই দড়িতে ঝুলছে পোস্টার। কোথাও নৌকা, কোথাও ধানের শীষ। রাস্তাঘাট এখন ছেয়ে গেছে এসব পোস্টারে। সকাল পেড়িয়ে দুপুর গড়াতেই বাগানের অলি-গলি থেকে ভেসে আসে মাইকের শব্দ।

শ্লোগান ও গানের তালে তালে ভোট উৎসবের রঙ লাগতে শুরু করেছে সিলেটের চা বাগানগুলোতে। নির্বাচনের জয়-পরাজয়ে বড় ভূমিকা রাখা এই চা শ্রমিকদের ভোট টানতে প্রার্থীরাও শুরু করেছেন দৌড়ঝাঁপ।

মৌলভীবাজার-৪ আসনে শ্রীমঙ্গল এবং কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, এই আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৮৩০ জন। এই ভোটারদের মধ্যে প্রায় লক্ষাধিক চা শ্রমিক ভোটার রয়েছেন যারাই আসলে এই আসনে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে দেন।

কথা হয় শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগানের নারী চা শ্রমিক ঊষা বাউড়ির সঙ্গে। তিনি বলেন, “ভোটের আগে কতো নেতা বাগানে আসে আর যায়। হামদের (আমাদের) চাচি ডাকে, মাসি ডাকে, ভোট দেওয়ার কথা বলে। হেরা ভোটের সময় হামাদের বিভিন্ন কথা দেয়, স্বপন (স্বপ্ন) দেখায়। ভোট শেষ হলে হামদের খবর আর কেউ নায় রাখে। সবার জীবনে ভালা দিন আইলেও আমরার সুদিন আসে না।”

ভূরভুরিয়া চা বাগানের রাজেস ভৌমিক বলেন, “চা শ্রমিকরা আগের মতো পিছিয়ে নেই। আমরা বাগানের তরুণ ভোটাররা যোগ্য প্রার্থী দেখে ভোট দিবো। তরুণরা মার্কা দেখে নয় প্রার্থীর গুরুত্ব দেখবে।”

রাজঘাট চা বাগানের প্রকাশ তাঁতি নামের এক বৃদ্ধ চা শ্রমিক বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকেই ভোট দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু আমাদের জীবনমানের কোনো উন্নয়ন হয়নি, এবার যে প্রার্থী আমাদের ভূমির অধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিবে তাকেই এবার ভোট দিবো।”

চা বাগানে ভোটের প্রচারণা। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা

শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালীঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা বলেন, “চা শ্রমিকরা বংশপরম্পরায় স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তির পক্ষেই ভোট দিয়ে থাকে। আমরা আশা করবো বর্তমান সরকার যদি আবারও ক্ষমতায় আসে তাহলে এই চা শ্রমিকের ভাগ্য পরিবর্তনে তারা যেনো কাজ করে। আমরা জীবন পরিবর্তনের স্বপ্ন এখনো দেখি।”

এই আসনে আওয়ামী লীগের ‘নৌকা প্রতীক’ নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন ১৯৯১ সাল থেকে টানা পাঁচবার নির্বাচিত বর্তমান সাংসদ আব্দুস শহীদ। ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে বিএনপি’র প্রার্থী মুজিবুর রহমান, উদীয়মান সূর্য প্রতীক নিয়ে গণফোরাম প্রার্থী হয়েছেন শান্তিপদ ঘোষ আর ‘হাতপাখা’ প্রতীক নিয়ে মাঠে নেমেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা সালাউদ্দিন।

নৌকার প্রার্থী আব্দুস শহীদ বলেন, “এই সরকারের আমলে চা বাগানগুলোতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছে। সব চা বাগানে সরকারি স্কুল তৈরি করে দেওয়া হবে। চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করতে যা যা করণীয় তার পক্ষ থেকে তিনি করবেন। চা শ্রমিকের জীবন মান উন্নয়নে তিনি কাজ করে যাবেন।”

বিএনপির প্রার্থী হাজী মুজিব বলেন, “আমি যদি বিজয়ী হতে পারি তাহলে চা শ্রমিকের আবাসন মজুরি, শিক্ষা, চিকিৎসার উন্নয়নে কাজ করবো। শ্রমিকদের মধ্যে যারা এখনো বেকার রয়েছেন তাদের জন্য শ্রম বাজার তৈরি করে, কলকারখানা তৈরি করে শ্রমিকদের বেকারত্ব দুর করবো, চা বাগানের শ্রমিকদের বসবাসের সমস্যা নিয়ে আমি কাজ করবো।”

চা ছাত্র সংসদের সভাপতি রাজু কুর্মী বলেন, “কোনো বাগান তার মুনাফার অংশ শ্রমিককে দেয় না, যদিও তা আইনে আছে। কোনো বাগানে গোষ্ঠী বীমা নাই। তিন মাস শিক্ষানবিস থাকার পর স্থায়ী করার নিয়ম থাকলেও কোনো বাগানেই তা মানা হয় না। কোনো বাগানেই নিয়োগপত্র নাই, আবার ৯৩ শতাংশ বাগানে শ্রমিকদের নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো নথিই দেওয়া হয় না।”

তিনি জানান, বেশিরভাগ বাগানে কাজের সময় শ্রমিকদের ছড়া, কুয়া বা খালের পানি পান করতে দেওয়া হয়। বাগানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শৌচাগার নাই। বেশিরভাগ বাগানে চিকিৎসাকেন্দ্র নাই। নামেমাত্র কিছু কিছু ডিসপেনসারি আছে। শ্রমিকদের ঘর মেরামত করতে হয় নিজেদের টাকায়, যদিও তা মালিকদের দেওয়ার কথা। শ্রমিকদের অঙ্গহানি হলে আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণও ঠিকমতো দেওয়া হয় না।

অতীতে এসব ক্ষেত্রে সাংসদগণ তেমন কোনো ভূমিকা রাখেননি। যদিও ভোটের আগে অনেক বড় বড় কথা বলছেন, যোগ করেন কুর্মী।

Comments

The Daily Star  | English

Govt to form commissions to reform 6 key sectors: Yunus

The commissions are expected to start their functions from October 1 and they are expected to complete their work within the next three months, said Chief Adviser Prof Muhammad Yunus in his televised address to the nation

52m ago