‘ধানের শীষে ভোট দেওয়ায়’ গ্রাম ‘অবরুদ্ধ’

গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী বিএনপি’র ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে ভোট দেওয়ায় বেশ খেসারত দিতে হচ্ছে রাজশাহীর তানোর উপজেলার একটি গ্রামকে।

গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী বিএনপি’র ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে ভোট দেওয়ায় বেশ খেসারত দিতে হচ্ছে রাজশাহীর তানোর উপজেলার একটি গ্রামকে।

রাজশাহী-১ আসনের কলমা গ্রামটিতে রয়েছেন ২ হাজার ৪৩৫ জন ভোটার। কলমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট পড়েছিলো ১ হাজার ৯১৪টি। এর মধ্যে ১ হাজার ২৪৯ ভোট পেয়েছিলেন বিএনপি’র প্রার্থী আমিনুল হক এবং ৬৫৩টি ভোট পেয়েছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ভোটের পরদিনই লাঠিসোটা নিয়ে আওয়ামী লীগের লোকেরা অবস্থান নেন গ্রামের প্রবেশ পথ দুটিতে। বিল্লি এবং দরগাডাঙ্গা মোড়ে অবস্থান নিয়ে তারা গ্রামের দিকে সব ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। এমনকি, বাইসাইকেল ও রিকশা-ভ্যানের চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তারা বলেন, আওয়ামী লীগের লোকেরা গ্রামের সেচকাজে ব্যবহৃত গভীর নলকূপটিও দখল করে নিয়েছেন। এছাড়াও, বন্ধ করে দিয়েছেন টেলিভিশনের স্যাটেলাইট সংযোগ।

নাম না বলার শর্তে একজন গ্রামবাসী বলেন, “তারা গ্রামের আওয়ামী লীগ সমর্থকদেরও ছাড় দিচ্ছেন না। সবাইকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন।”

এমন পরিস্থিতির জন্যে গ্রামের জ্যেষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতাসহ অন্যান্য গ্রামবাসীদের অভিযোগের তির কলমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ এবং দলের তরুণ সদস্যদের দিকে।

তবে এই অবরোধের জন্যে লুৎফর তার সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, বিএনপি’র লোকদের আক্রমণের ভয়ে লোকজন গ্রামের বাইরে আসছেন না।

একই কারণে বাসগুলো সেই রাস্তা এড়িয়ে চলছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

নির্বাচনের আগের দিন থেকেই আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে স্থানীয়রা জানান।

গতকাল (৫ জানুয়ারি) বিকালে হকিস্টিক দিয়ে বিএনপি’র লোক হিসেবে পরিচিত ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য শফিকুল ইসলামের টিনের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

এর ফলে বিএনপি’র সমর্থকরা চেয়ারম্যান লুৎফরকে ধাওয়া দেয়। সন্ধ্যায় তার সমর্থকদের মারধর করা হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব ঘটনায় লুৎফরের লোকেরা তাদের “শাস্তি” দিচ্ছেন। এই অবরোধের কারণে গ্রামের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো যাচ্ছে না বলেও তারা অভিযোগ করেন।

গত ২ জানুয়ারি মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি আসার সময় স্কুল শিক্ষক দুই ভাইকে পেটানো হয়।

তাদের একজনের সঙ্গে কথা হয় গতকাল সন্ধ্যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, “এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে অভিযোগ করার কিছু নেই।”

গতকাল বিকাল ৫টার দিকে একটি যাত্রীবাহী বাসকে সেই গ্রামের পথ এড়িয়ে চলতে দেখা যায়। বাসটি পার্শ্ববর্তী করচর গ্রামের ভেতর দিয়ে চলে যায়।

আওয়ামী লীগের একজন কর্মী আতাউর রহমানের দাবি, “পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।”

তিনি বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেই গ্রামটি ঘুরে যাওয়ার পর গতকাল সকাল থেকেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। গ্রামের নিরাপত্তার বিষয়ে কর্মকর্তাদের নিশ্চয়তা দেওয়া ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

কিন্তু, গ্রামবাসীদের বক্তব্য, তারা এমন নিশ্চয়তার ওপর ভরসা পাচ্ছেন না।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে একজন ব্যবসায়ী বলেন, “সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। তারা (আওয়ামী লীগের লোকেরা) এখনো ডিপ টিউবওয়েল দখল করে রেখেছেন।”

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মতিউর রহমান সিদ্দিকী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “আসলে শনিবারের হামলা ও প্রতি-হামলার প্রেক্ষিতে” স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকেরা লোকজনদের আটকে রেখেছে।

“গ্রামের অধিকাংশ মানুষ বিএনপিপন্থি। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ- এই দুই দলের মধ্যে উত্তেজনা রয়েছে,” উল্লেখ করে তিনি সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ করেন।

সংসদ সদস্য ওমর ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান যে এই অবরোধের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র কিছু নেই। “এটি কলমা ও এর আশপাশের গ্রামের বিষয়,” দাবি ফারুকের।

গ্রামের কোনো রক্তারক্তি হয়নি বলে তিনি এর জন্যে কৃতিত্বের দাবি করেন। এছাড়াও, আওয়ামী লীগ কর্মীদের ওপর হামলাকারীদের আটক না করার জন্যে তিনি পুলিশের সমালোচনা করেন। তবে আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলার বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেননি।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago