ইভান্সের সেঞ্চুরির জবাব দিতে পারেননি তামিম-পেরেরারা
ম্যাচের শুরুটা ছিল ঢিমেতালে। আভাস ছিল আরেকটি লো স্কোরিং ম্যাচের। সেখান থেকে থিতু হয়ে দারুণ এক সেঞ্চুরিতে দলে বড় সংগ্রহ পাইয়ে দিয়েছিলেন লরি ইভান্স। তার ব্যাটে ফুলে-ফেঁপে উঠা আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফিল্ডিং করতে নেমেছিল রাজশাহী কিংস। মোস্তাফিজুর রহমান, কামরুল ইসলাম রাব্বিদের হটিয়ে তাই বড় রান তাড়া করতে পারেনি তামিম ইকবাল-থিসারা পেরেরার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
সিলেট পর্ব শেষে সোমবার ঢাকায় ফেরার পর প্রথম ম্যাচে বড় জয়ে হেসেছে রাজশাহী। মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রাজশাহীর ১৭৬ রানের জবাবে কুমিল্লা থেমেছে ১৩৮ রানে। সপ্তম ম্যাচে রাজশহীর এটি চতুর্থ জয়। সমান ম্যাচে তৃতীয় হারের দেখা পেল কুমিল্লা।
রাজশাহীকে জেতাতে ব্যাটিংয়ে যেমনি ইভান্স। বল হাতে মূল ভূমিকা রেখেছেন দুই পেসার মোস্তাফিজ ও কামরুল ইসলাম রাব্বি। ৩ ওভার বল করে মাত্র ১০ রানে ৩ উইকেট নেন রাব্বি। ৩.২ ওভারে ৮ রান দিয়ে ১ উইকেট মোস্তাফিজের।
মন্থর শুরুর পর লরি ইভান্সের সেঞ্চুরিতে বিশাল রানই করে ফেলেছিল রাজশাহী কিংস। সেই রান তাড়ায় জুতসই শুরু পেয়েছিলেন তামিম ইকবাল-এনামুল হক বিজয়। তবে দুজনের কেউই থিতু হয়েও ইনিংস আগাতে পারেননি। ২৫ রান করে তামিম আর ২৬ রান করে ফেরেন এনামুল।
ওয়ানডাউনে নেমে পারেননি শামসুর রহমান। ঝড় তুলতে চারে পাঠানো হয়েছিল জিয়াউর রহমানকে। এক ছক্কা মেরেই তিনি তার কাজ থামান। কাইস আহমেদের ফুলটস বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে অধিনায়ক ইমরুলের দৌঁড় থামে ১৫ রানে।
১১০ রানে কুমিল্লা যখন পঞ্চম উইকেট হারায় তখন জিততে দরকার ৩৭ বলে ৬৭ রান। এই অবস্থা থেকে কুমিল্লার নায়ক হতে পারতেন যিনি সেই থিসারা পেরেরা পরেই বলেই কুপোকাত। কাইসের অনেক শর্ট বল অনায়াসে ছক্কা পেটানোর মতো ছিল। সেই বল ডিপ মিড উইকেটের হাতে তুলে দিয়ে হাঁটা ধরেন পেরেরা।
শেষ পাঁচ ওভারে ৬৩ রান তুলার চ্যালেঞ্জে পারেননি শহীদ আফ্রিদি আর লিয়াম ডসন। আফ্রিদিকে একের পর এক ডট বল করিয়ে নাচিয়ে ছাড়েন মোস্তাফিজুর রহমান। শেষটাই তার একের পর এক উইকেট খোয়াতে থাকে কুমিল্লা। জমাতে পারেনি ম্যাচ।
এদিনও রাজশাহী কিংস একাদশে রাখেনি সৌম্য সরকারকে। টস হেরে ব্যাটিং পেয়ে পায়নি ভালো শুরুও। ওপেন করতে নেমে ৫ রান করেই মেহেদী হাসানের বলে বোল্ড হন শাহরিয়ার নাফীস। এবার বিপিএলে অধিনায়কত্ব পেয়ে নিজেকে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান বানিয়ে ফেলা মেহেদী হাসান মিরাজ আবারও ওয়াডাউনে নেমেছিলেন। এবার কোন রান করার আগেই ক্যাচ দেন লিয়ম ডসনের বলে।
আগের ম্যাচে সুযোগ পেয়ে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছিলেন মার্শাল আইয়ুব। এবার চারে নেমে ব্যর্থ তিনি। ২ রান করে ডসনের বলে বোল্ড হিয়ে ফেরেন।
২৮ রানে ৩ উইকেট হারানো রাজশাহীকে পরে দিশা পায় লরি ইভান্স আর রায়ান টেন ডসকেটের ব্যাটে। এই দুজনের মুন্সিয়ানায় আর কোন উইকেটই হারায়নি তারা। চতুর্থ উইকেট জুটিতে আসে ১৪৮ রান।
প্রথম উইকেটে গিয়ে থিতু হতে দুজনে নিয়েছেন সময়। এই কারণে রান তুলার গতি ছিল মন্থর। ১২ ওভারে আসে মাত্র ৬৬ রান। লরি ইভান্স আর রায়ান টেস ডেসকেট সেই রানকে পরে নিয়ে যায় চূড়ায়। শেষ আট ওভারে আসে ১১০ রান। প্রথম ৩৬ বলে ৩৫ করা ইভান্স পরে ৬১ বলে করে ফেলেন আসরের প্রথম সেঞ্চুরি। আগের পাঁচ ম্যাচে মাত্র ১৩ রান করা ইভান্সের দলে জায়গা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। এসব প্রশ্নের মধ্যেই নিজের জাত চেনালেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের তার এটি প্রথম সেঞ্চুরি।
তার ঝড়ে শেষ পাঁচ ওভারে ৭৪ রান তুলে রাজশাহী। ইভান্স ৬২ বলে ৯ চার আর হাফ ডজন ছক্কায় ১০২ রানে অপরাজিত থাকেন। ২ চার আর তিন ছয়ে ৪১ বলে ৫৯ রান করেন টেন ডসকেট।
ম্যাচ শেষে তাদের অবিচ্ছিন্ন ১৪৮ রানের জুটিই গড়ে দেয় ব্যবধান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রাজশাহী কিংস: ২০ ওভারে ১৭৬/৩ ( শাহরিয়ার ৫, ইভান্স ১০২*, মিরাজ ০, মার্শাল ২, টেন ডসকেট ৫৯* ; সাইফুদ্দিন ০/৩১, মেহেদী ১/৪, ডসন ২/২০, ওয়াহাব ০/৪৪, আফ্রিদি ০/৩২, ০/৪৩ )
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৮.২ ওভারে ১৩৮ (তামিম ২৫, এনামুল ২৬ , শামসুর ১৫, জিয়াউর ১২, ইমরুল ১৫, ডসন ,পেরেরা ০ , আফ্রিদি ১৯ , সাইফুদ্দিন ১, ওয়াহাব, মেহেদী ; কামরুল, মিরাজ ০/২৭, কাইস ২/৪৬, মোস্তাফিজ, সানি ১/২৮, টেন ডসকেট ২/১৫)
ফল: রাজশাহী কিংস ৩৮ রানে জয়ী
Comments