লুইস ঝড়ে রংপুরকে উড়িয়ে ফাইনালে কুমিল্লা
সঞ্জিত সাহা দীপ আর মেহেদী হাসান চেপে ধরেছিলেন রংপুর রাইডার্সকে। বেনি হাওয়েল আর রাইলি রুশোর ব্যাটে সে চাপ এড়িয়ে লড়াইয়ের পূঁজি পেয়েছিল মাশরাফি মর্তুজার দল। তবে তাদের সবাইকে ছাপিয়ে যান এভিন লুইস। তার ঝড়ো ইনিংসে এনামুল হক বিজয় আর শামসুর রহমান যোগ্য সঙ্গত করায় সহজেই জিতে ফাইনালে উঠেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
সোমবার প্রথম কোয়ালিফায়ারে রংপুরের করা ১৬৫ রান ৭ বল হাতে রেখে পেরিয়ে ৮ উইকেটে জিতেছে কুমিল্লা। প্রথম পর্বে দুবারই রংপুরের সঙ্গে হেরেছিল কুমিল্লা। তবে এবার ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে হাসি তাদেরই।
এই ম্যাচ হারলেও টুর্নামেন্টে এখনো সুযোগ থাকছে রংপুরের। বুধবার ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে ফাইনালের উঠার দ্বিতীয় সুযোগ পাবে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
১৬৬ রানের লক্ষ্য। মিরপুরের উইকেটে বেশ বড়ই। তামিম ইকবাল আর এভিন লুইস শুরুটা পেয়েছিলেন দারুণ। মাশরাফিকে ছক্কা মারার পর তামিম অক্কা পেলে ভাঙে সে জুটি।
তবে ওয়ানডাউনে উঠে লুইসের সঙ্গে জমে যান এনামুল হক বিজয়। ইতিবাচক অ্যাপ্রোচ নিয়ে নামা বিজয় লুইসকে কেবল সঙ্গই দেননি, নিজেও মেরেছেন দারুণ সব শট। লুইস শুরুতে ধুঁকলেও পরে মেলেন ডানা। দ্বিতীয় উইকেটে ৬২ বলে দুজনের ৯০ রানের জুটির পর বিজয়ের আউটে ভাঙে জুটি। এনামুল ফেরেন ৩২ বলে ৩৯ করে।
ওই সময় শফিউল ইসলামের দারুণ বোলিংয়ে কিছুটা শঙ্কা জেগেছিল কুমিল্লার। কিন্তু শেষ চার ওভারে ৩৮ রানের প্রয়োজনীয়তা মেটান শামসুর রহমান শুভ। অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান ছোটখাটো ঝড় তুলেন হিসাব করে দেন সহজ। দলকে জিতিয়ে ৫৩ বলে ৭১ রান করে অপরাজিত থাকেন লুইস। বিস্ফোরক এই ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান পাঁচ চারের সঙ্গে তিনখানা ছক্কায় বল পাঠিয়েছেন গ্যালারিতে।
শেষ দিকে নেমে মাত্র ১৫ বলে ৩৪ রানের ইনিংস খেলেন শামসুর।
ক্রিস্টোফার হেনরি গেইলের ঝলমলে সময় অনেক দেখেছে মিরপুর। এবার তার যেন পড়ন্ত বেলার স্বাক্ষীও এই মাঠ। পুরো টুর্নামেন্টেই তেমন কিছু করতে পারেননি। আগেরবারের মতো এবার ফাইনালে উঠার মঞ্চে সব জমিয়ে রেখেছিলেন কিনা, আগ্রহ ছিল অনেকের। টস জিতে রংপুর ব্যাট করতে নামায় শুরুর এগারো ওভার চোখ ছিল তাই গেইলের দিকেই।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সঙ্গে ব্যাট করতে নেমে অনেক চেষ্টা করলেন। ধুঁকলেন, দ্রুত রান তুলতে পারলেন না। আগে যেসব শট অনায়াসে ছয় হয় এবার তা গেল ফিল্ডারের হাতে। ৪৫ রানে সঞ্জিত সাহা দীপের বলে তার সহজ ক্যাচ ফেলে দেন মেহেদী হাসান। তবু টিকেননি গেইল। এক রান পরই পরের ওভারে মেহেদী নিজেই এসে ছাঁটেন তাকে।
এর আগে তার ভুল কলে নিজেকে রান আউটে সপে বিদায় নেন মিঠুন। মনে হচ্ছিল খেই হারিয়ে ডুবতে যাচ্ছে রংপুর। তবে আবারও ত্রাতা রাইলি রুশো। ওয়াহাব রিয়াজের কাছ থেকে জীবন পেয়ে খেলেছেন প্রায় শেষ পর্যন্ত। তার ৩১ বলে ৪৪ রানের ইনিংসে থই পায় রংপুর। তবে শেষের দিকে আসল কাজ করেন হাওয়েল।
এই ইংলিশ অলরাউন্ডার ঝড় তুলে ২৮ বলে অপরাজিত থাকেন ৫৩ রানে। মেরেছেন ৫ ছক্কা আর তিন চার। তার তান্ডবে শেষ দুই ওভারে ৩৭ রান তুলে রংপুর।
দুই স্পিনার সঞ্জিত আর মেহেদীর দারুণ বোলিংয়ের পাশে বড্ড বেমানান ছিলেন কুমিল্লার পেসাররা। মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন আর ওয়াহাব রিয়াজ দুজনেই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বেধড়ক পিটুনি খেয়েছেন, এলোমেলো বল করে রান বিলিয়েছেন।
শেষ পর্যন্ত লুইসের ব্যাটে আফসোসের কারণ হয়নি তাদের এই রান বিলানো।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর রাইডার্স : ২০ ওভারে ১৬৫/৫ (গেইল ৪৬ , মারুফ ১, মিঠুন ৩, রুশো ৪৪, বোপারা ৩, হাওয়েল ৫৩*, নাহিদুল ৬ ; সাইফুদ্দিন ১/৪২, মেহেদী ১/২৮, ওয়াহাব ১/৪৯, সঞ্জিত ১/১৪ , আফ্রিদি ০/১৯, পেরেরা ০/৭ )
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৮.৫ ওভারে ১৬৬/২ (তামিম ১৭, লুইস ৭১* , এনামুল ৩৯, শামসুর ৩৪; নাহিদুল ০/১৮ , গাজী ০/১৫ , মাশরাফি ১/৪৩, রেজা ০/২৯, হাওয়েল ০/১৯, শফিউল ১/২১ , বোপারা ০/২০)
ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৮ উইকেটে জয়ী।
Comments