শাজাহান খানের নেতৃত্বে কমিটি, সরকারের সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ: টিআইবি
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/shahjahan.jpg?itok=6axzMoYq×tamp=1550505788)
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘‘প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি রোধে কোন কার্যকর উদ্যোগই যখন দেখা যাচ্ছে না, তখন অবশেষে যেভাবে কমিটি গঠিত হলো সেটিও সরকারের সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।”
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে শাজাহান খানকে প্রধান করে পরিবহন ব্যবসায় সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় কমিটি গঠনের নিন্দা জানিয়ে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক আজ তার প্রতিক্রিয়ায় এই কথা বলেন।
কমিটির ব্যাপারে বিবৃতি দিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে বিতর্কিত ও পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকায় লিপ্ত ব্যক্তিবর্গের প্রাধান্য থাকায় স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে এই কমিটি গঠন প্রশ্নবিদ্ধ।
বিশেষ করে এই কমটিতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃস্থানীয়দের একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে বলে তার অভিযোগ।
অবিলম্বে সুখ্যাতিসম্পন্ন ও সংশ্লিষ্ট খাতে বিশেষজ্ঞজনকে প্রধান করে স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি পুনর্গঠনের আহ্বান জানিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রয়োজনে শ্রমিক ও মালিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সুপারিশ কমিটি বিবেচনায় নিতে পারে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কমিটির প্রধানের পূর্বের বিতর্কিত ভূমিকা, পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ এবং একচোখাভাবে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রভাবশালীজনকে কমিটিতে রাখায় এ কমিটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে- এমন আশা করা অসম্ভব। গভীর উদ্বেগের সঙ্গে ইতোপূর্বে আমরা লক্ষ্য করেছি যে, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় প্রাক্তন নৌপরিবহন মন্ত্রীর বিতর্কিত ভূমিকা ও প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে এবং এর প্রেক্ষিতে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের অভূতপূর্ব আন্দোলনের পরও শ্রমিকদের অন্যায্য দাবির পক্ষে তার এবং কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত একাধিক সদস্যের প্রত্যক্ষ অবস্থান তাদের নিরপেক্ষতা ও দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের স্বদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘সবক্ষেত্রে সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা’র যে ঘোষণা দিয়েছেন, এই কমিটি গঠন তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’’
ড. জামান বলেন, “সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার ওপর টিআইবির গবেষণায় দেখা যায়, সড়ক পরিবহন খাতে সীমাহীন অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, বিচারহীনতা,দায়িত্বে অবহেলা ও প্রভাবশালীদের লাগামহীন অসাধু দৌরাত্ম্য বিদ্যমান। প্রভাবশালীদের দৌরাত্মে সড়কজুড়ে ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অদক্ষ চালক ও বেপরোয়া যান চালনা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। পরিবহন খাত প্রভাবশালী শ্রমিক ও মালিক সংগঠনের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা প্রদানের সাংবিধানিক অঙ্গীকার নির্বিকারভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় স্বার্থের দ্বন্দ্বসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত কমিটি আদতে কোনো কার্যকরী ফল আনবে না। সরকারের নিকট আমাদের আহ্বান, অবিলম্বে নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত ব্যক্তি বিশেষ করে সংশ্লিষ্টখাতে সুখ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ; নাগরিক অধিকার ক্ষেত্রের অংশীজন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে এই কমিটি পুনর্গঠন করা।”
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, “আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রভাবশালী কারো অন্যায্য দাবির কাছে মাথানত করবেন না, জনগণ এই প্রত্যাশা করে, বিশেষ করে দেশের তরুণ প্রজন্ম যারা শুধু নিরাপদ সড়ক আন্দোলন করেনি, বরং নিরাপদ সড়ক যে সম্ভব তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তাদেরকে হতাশ করা সরকারের অদূরদর্শিতার পরিচায়ক হবে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পাশ হওয়া সড়ক পরিবহন আইনের কোন ধারা আরও শিথিল করার উদ্যোগ নেওয়া হলে তা হবে আত্মঘাতী ও জনস্বার্থ পরিপন্থী।”
Comments