ডাক্তার নয়, সমস্যা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার

বাংলাদেশে সবচেয়ে মুশকিলের কাজ ডাক্তার এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে ইতিবাচক কিছু লেখা। চারদিক থেকে সবাই হইচই করে ওঠেন। ডাক্তাররা কত খারাপ, এই গল্প-অভিজ্ঞতা সবার জীবনে আছে। কেন ইতিবাচক কিছু লিখলাম, কৈফিয়ত দিতে হয়।
ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থার কথা জানাতে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে প্রেস ব্রিফিং। ফাইল ছবি/প্রবীর দাশ

বাংলাদেশে সবচেয়ে মুশকিলের কাজ ডাক্তার এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে ইতিবাচক কিছু লেখা। চারদিক থেকে সবাই হইচই করে ওঠেন। ডাক্তাররা কত খারাপ, এই গল্প-অভিজ্ঞতা সবার জীবনে আছে। কেন ইতিবাচক কিছু লিখলাম, কৈফিয়ত দিতে হয়। তারপরও বারবার বাংলাদেশের ডাক্তারদের প্রশংসা করে লিখি। আজ আবার লিখছি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অসুস্থতা, বাংলাদেশের ডাক্তারদের চিকিৎসা, সিঙ্গাপুর থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের আগমন, ভারত থেকে বিশেষ বিমানে দেবী শেঠিকে নিয়ে আসা এবং ওবায়দুল কাদেরের সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে কিছু কথা।

১.  ওবায়দুল কাদের সত্যি যদি জানতেন বা বুঝতে পারতেন যে, তার অসুস্থতা এতটা প্রকট, নিশ্চয় তিনি ডাক্তারের কাছে যেতেন। কোন ডাক্তার বা হাসপাতালে যেতেন? বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে যেতেন? যেহেতু তিনি এখন গুরুতর অসুস্থ, ফলে প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে একটু ঘুরিয়ে বলি।

বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ, এমপি-মন্ত্রীরা বাংলাদেশের হাসপাতাল, বাংলাদেশের ডাক্তারদের উপর ভরসা রাখেন না।

তারা ভরসা রাখেন থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইংল্যান্ড বা আমেরিকার ডাক্তার-হাসপাতালের উপর। যদি আকস্মিক অসুস্থতাবোধ করেন, বা হঠাৎ করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, বিদেশে যাওয়ার মতো অবস্থায় থাকেন না, তখন তারা দেশের ডাক্তার-হাসপাতালে যান। একটু উন্নতি হলেই চলে যান বিদেশে।

২. বাংলাদেশে প্রায় সব কয়টি সেক্টরে অত্যন্ত উঁচু মানের ডাক্তার আছেন। সংখ্যায় তারা কম নন। বাংলাদেশে যা একেবারে নেই, তার নাম চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা। ভালো ডাক্তারদের কথা যেমন আলোচনা হয় হয় না, আলোচনা হয়না চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার দিকটি নিয়েও। ব্যবস্থাপনার আলোচনায় পরে আসছি।

ওবায়দুল কাদেরের মতো এত গুরুতর অসুস্থ রোগীকে যেভাবে বাংলাদেশের ডাক্তাররা, বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের ডাক্তাররা চিকিৎসা করলেন, তা এক অনন্য নজীর হয়ে থাকল। এমন কাজ ডাক্তাররা প্রতিনিয়তই করছেন। সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা এসে নিশ্চিত করলেন, দেশের ডাক্তাররা যে চিকিৎসা করছেন তা সম্পূর্ণ ঠিক আছে। দেবী শেঠির সার্টিফিকেটও পেলেন বাংলাদেশের চিকিৎসকরা। ভূয়সী প্রশংসা করলেন তিনি আমাদের ডাক্তারদের। দেবী শেঠি বলেছেন, যে চিকিৎসা ওবায়দুল কাদেরকে দেয়া হয়েছে, এটাই সর্বোচ্চ চিকিৎসা। এতেই ফল পাওয়া যাবে। তিনি বলেননি যে, সিঙ্গাপুরে নিয়ে যেতে হবে। রোগীর শারীরিক অবস্থা সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার মতো কি না, এর উত্তরে তিনি হ্যাঁ বলেছেন।

তাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হলো। সঠিক চিকিৎসা করার পরও দেশের ডাক্তারদের উপর নির্ভর করা গেল না!

একবার নির্মোহভাবে ভাবেন তো! যদি সিঙ্গাপুরের ডাক্তার ও দেবী শেঠি বাংলাদেশের ডাক্তারদের এমন প্রশংসা না করতেন, তাহলে কতজন মনে করতেন যে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ওবায়দুল কাদেরের সঠিক চিকিৎসা হয়েছে! কিছু একটা ঘটে গেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের চেহারা কেমন হতো! ডাক্তাররা যে সেবা দিয়ে ওবায়দুল কাদেরকে বাঁচিয়ে রাখলেন, তার প্রশংসা কতটা হয়েছে?

ডাক্তারদের গ্রামে না থাকার অভিযোগ নিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সবাই কথা বলেন। কয়েকদিন আগে আলোচনাটা আবারও উঠেছিল। যখন ডাক্তারদের গ্রামে থেকে মানুষের সেবা করার দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, ঠিক তখন মহামান্য রাষ্ট্রপতি শরীর ও চোখের সাধারণ পরীক্ষার জন্যে চলে গেলেন সিঙ্গাপুর।

লন্ডন, ব্যাংকক বা সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্যে যাওয়া যাবে না, তা বলছি না। যারা সচ্ছল, যাদের সামর্থ্য আছে তারা তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী যেকোনো দেশে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন। তা ঠেকানো যাবে না, দরকারও নেই। যতদিন দেশে বিশ্বমানের হাসপাতাল বানানো যাবে না, ততদিন তারা বিদেশে যাবেনই।

ওবায়দুল কাদেরের মতো এমন গুরুতর রোগীর ক্ষেত্রেও না হয় বিদেশে নেওয়ার বিষয়টি মেনে নেওয়া যায়।

প্রশ্ন হলো রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ করে, অতি সাধারণ চিকিৎসার জন্যেও, সাধারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যে কেন বিদেশে যেতে হবে?

যাদের দায়িত্ব দেশে বিশ্বমানের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, তারা নিজেরা যদি বিদেশে চলে যান চিকিৎসার জন্যে, প্রতিষ্ঠান তৈরি করবেন কারা?

৩. ডাক্তারদের সম্পর্কে অত্যন্ত কঠিন শব্দ ব্যবহার করা হয় নির্দয়ভাবে। টাকা ছাড়া অপারেশন করেন না, এই অভিযোগের দায় পুরোটা ডাক্তারদের নিতে হয়।

এখানেই আসে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার প্রসঙ্গ। বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা মালিক পক্ষের হাতে। সেখানে ডাক্তারদের প্রায় কিছুই করার নেই।

সরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে। মন্ত্রী-আমলারা উপর থেকে সিদ্ধান্ত নেন। বড় বড় সকল অনিয়ম-দুর্নীতি হয় মেডিকেল সরঞ্জাম কেনাকাটায়।

গত কয়েক বছরে সাংবাদিক বদরুদ্দোজা বাবু সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনে অনেকগুলো রিপোর্ট করেছেন। অন্যান্য গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। দুই কোটি টাকার মেশিন কেনা হয় ৯ কোটি টাকা দিয়ে। জাপান বা অস্ট্রেলিয়া থেকে যে সরঞ্জাম কেনার কথা, তা কেনা হয় চীন থেকে। যার মান অত্যন্ত নিম্ন। হাসপাতালে যখন আসে, ডাক্তাররা তা বুঝে নিতে বাধ্য থাকেন। কেনাকাটার চাহিদা পত্রে হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তার স্বাক্ষর করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। ঠিকাদার ঠিক করে দেয় কোন হাসপাতালে কী কী যন্ত্রপাতি কিনতে হবে। কেনা হয় ঠিকাদারের ঠিক করে দেওয়া তালিকা অনুযায়ী। প্রায় সব সরকারি হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটে। পাবনা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা সরকারি হাসপাতালসহ কিছু হাসপাতালের ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। ঠিকাদারের দেওয়া তালিকায় স্বাক্ষর না করায় তাৎক্ষণিকভাবে বদলির শিকার হয়েছিলেন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তার। কারণ ঠিকাদারদের শক্তি মন্ত্রণালয়।

ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে এত এত অভিযোগ। এর কারণ কী? ডাক্তাররা হাসপাতালে থাকেন না? ডাক্তাররা খারাপ?

মোটেই বিষয়টি তা নয়। গ্রাম থেকে আসা অসংখ্য রোগীর চিকিৎসা সুবিধার নেয়ার সরাসরি অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল, ঢাকা মেডিকেল, হৃদরোগ ইনস্টিটিউটসহ সকল হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে তিন থেকে চার গুণ রোগী বেশি থাকেন প্রতিদিন। বহির্বিভাগে সামর্থ্যরে চেয়ে তিন চার গুণ বেশি রোগী দেখতে হয় ডাক্তারদের। স্বাভাবিকভাবেই সব রোগীর প্রতি যথাযথ মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। কোনো কোনো ডাক্তারের আচরণগত সমস্যা আছে, তা বিবেচনায় নিয়েই বলছি। ডাক্তাররা প্রতিদিন তার সামর্থ্যরে বাইরে পরিশ্রম করছেন।

সমস্যা হাসপাতাল বা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার। সরকারি হাসপাতালগুলোর ব্যবস্থাপনা প্রায় সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সংগঠনের নেতারা। এবং তারা সরাসরি দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। যখন যারা ক্ষমতায় থাকেন, তাদের পক্ষের সংগঠন হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণ করেন। মন্ত্রী, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতারা তাদের ক্ষমতার উৎস।

এই ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা কাটানোর জন্য মনিটরিং, নীতিমালা প্রণয়ণের দায়িত্ব সরকারের। বেসরকারি হাসপাতালগুলো স্বাস্থ্যসেবার মান বজায় রাখতে পারছে কি না সেটিও দেখতে হবে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে।

৪. ডাক্তারদেরও সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম দলীয় রাজনীতি। অন্য পেশাজীবীদের মতো ডাক্তাররাও সরাসরি দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন। ডাক্তার নেতাদের অনেকে নিজের প্রভাব বৃদ্ধির জন্যে তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পক্ষে রাখার নীতি অনুসরণ করেন। দলীয় আনুগত্যের কারণে মন্ত্রণালয়ের কোনো অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন না ডাক্তার নেতারা। ক্ষমতাসীনরা যখন ডাক্তারদের নিয়ে ঢালাও অভিযোগ করেন, যার মধ্যে সত্যতা থাকে না, তখনও ডাক্তার নেতারা সত্যটা বলেন না বা বলতে পারেন না। দলীয় আনুগত্যের কারণে ডাক্তার নেতারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডাক্তারদের স্বার্থ দেখছেন না বা দেখতে পারছেন না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কেনাকাটা  নিয়ে ভয়াবহ অনিয়ম, তার দায় ডাক্তারদের নিতে হয়। এই দায় যে সব ডাক্তারের নয়, নেতারা সে কথা বলতে পারেন না। মনে করেন, এসব কথা বললে দলীয় রাজনীতিতে তার অবস্থান দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

একটি উদাহরণ দিয়ে বলি।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বললেন, “ওবায়দুল কাদেরকে প্রথম দিকে দেশেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যখন তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়েছে, তখন তাঁকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।” (প্রথম আলো, ৬ মার্চ ২০১৯)

আসলে কী তাই?

প্রায় আশাহীন, চরম সংকটাপন্ন অবস্থায় ওবায়দুল কাদেরকে শতভাগ সঠিক চিকিৎসা করেছেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের অধ্যাপক নাজমুল আহসান ও অন্যান্য ডাক্তাররা। তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তার আগে ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুর কেন, কোথাও নেওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। সত্য এটাই।

“দেশে চিকিৎসা করা হয়েছে... যখন তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়েছে, তখন তাঁকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে”-হানিফের কথার অর্থ দাঁড়ায়, বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে বাংলাদেশের ডাক্তারদের চিকিৎসায় কাদেরের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ার পরে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে। তথ্য হিসেবে যা সত্য তো নয়ই, বাংলাদেশের ডাক্তারদের জন্যে এই বক্তব্য অত্যন্ত অসম্মানজনক। দলীয় রাজনীতির প্রতি শতভাগ আনুগত্য পোষণকারী ডাক্তার নেতারা কি এই অসম্মানজনক- অসত্য বক্তব্যের প্রতিবাদ করবেন, করতে পারবেন!?

৫.  দেবী শেঠি ভারতে বিশাল প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, নিজেই প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন। প্রতিষ্ঠান চালানোর মানুষ তৈরি করেছেন। বছরখানেক আগে ব্যাঙ্গালুরুতে সরাসরি দেবী শেঠির কথা শোনার সুযোগ হয়েছিল। ড. ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা দিবসের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। বললেন, এখনো বহু মানুষ চিকিৎসা সেবার বাইরে রয়ে গেছেন। সামাজিক ব্যবসার ধারণাকে চিকিৎসা সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে, প্রযুক্তিগত সুবিধা দিয়ে বহু মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়, বিস্তারিত পরিকল্পনার কথা বললেন। সেভাবে তিনি কাজ করবেন, তাও বললেন।

একটি বিশেষ ক্ষেত্রে দেবী শেঠিকে নিয়ে আসা হয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষ দেবী শেঠিদের কাছে প্রতিনিয়ত যাচ্ছেন। দেবী শেঠি কাজে লাগাতে চাইছেন ড.ইউনূসের ধারণা।

সরকারের সুযোগ আছে দেবী শেঠির অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় কাজে লাগানোর। তাহলে দু’একজন নয়, দেশে থেকেই বহু মানুষ উপকৃত হতে পারেন।

৬. তুলনামূলক অল্প সময়ে বাংলাদেশে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি বিস্তৃত হয়েছে। দেশের ১৭ কোটি মানুষের চাহিদা পূরণ করে, বাংলাদেশের ওষুধ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির বিস্তৃতি বিষয়ে কথাটা বলেছিলেন ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মুক্তাদির। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসি বিভাগ অনেক আগে থেকে ছিল। সেখান থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীরা পাশ করে বের হতেন। দেশে কর্মক্ষেত্রের সুযোগ না থাকায় অনেকে বিদেশে চলে যেতেন। অনেকে দেশে থেকে অন্য পেশায় নিযুক্ত হতেন। অর্থাৎ দেশে বহু সংখ্যক ফার্মাসিস্ট ছিলেন। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির জন্যে অপরিহার্য ফার্মাসিস্ট। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো শুরুতেই ফার্মাসিস্ট পেয়ে গেছেন খুব সহজে। বিদেশ থেকেও অনেক ফার্মাসিস্ট ফিরে এসেছেন।

যে কারণে এই প্রসঙ্গের অবতারণা, বাংলাদেশে ডাক্তার আছেন। ভালো ডাক্তার আছেন, সংখ্যায় অনেক আছেন। ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা গেলে, দেশে উন্নত বিশ্বমানের হাসপাতাল গড়ে তোলা মোটেই কঠিন কাজ নয়। কারণ চিকিৎসা ব্যবস্থার মূল উপাদান ডাক্তার, যা বাংলাদেশে আছে।

৭. একটা দৃষ্টান্ত বলে লেখা শেষ করছি। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহবুব জামিল তার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে ঘটনাটি বলেছিলেন। তিনি তখন সিঙ্গারে। তার একটা অপারেশনের প্রয়োজন হয়েছিল। সিঙ্গারের আন্তর্জাতিক ম্যানেজমেন্ট তার অপারেশনের জন্যে সিঙ্গাপুর বা আমেরিকায় যাওয়ার ব্যবস্থা করছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমার যে অপারেশন তা বাংলাদেশেই হয়। আমি সিঙ্গাপুর বা আমেরিকায় যাব না, বাংলাদেশেই অপারেশন করব। তার এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনের অনুপ্রেরণা ছিলেন মাহাথীর মোহাম্মদ।

১৯৮৯ সালে মাহাথীর মোহাম্মদের বাইপাস অপারেশনের প্রয়োজন হয়, তখন মালয়েশিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থা বাংলাদেশের চেয়ে উন্নত ছিল না। মালয়েশিয়ার মন্ত্রী, আমলারা সবাই চিকিৎসার জন্যে ইংল্যান্ড বা আমেরিকায় চলে যেতেন। মাহাথীরকেও লন্ডন বা নিউইয়র্কে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছিল। পরিবার এবং মন্ত্রী-আমলাদের সকল যুক্তি-বাধা উপেক্ষা করে, মাহাথীর বাইপাস অপারেশন করিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায়। মাহাথীর নিজের অপারেশন করিয়ে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন। আত্মজীবনীতে তিনি বিষয়টি বিস্তারিত লিখেছেন। মালয়েশিয়ায় চিকিৎসার বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

সারা পৃথিবী থেকে মানুষ এখন মালয়েশিয়ায় চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। কারণ দুটি। উন্নত সেবা, তুলনামূলক কম খরচ। কয়েক বছর আগে ঢাকা শহরে বিলবোর্ড ছিল, চিকিৎসা সেবায় মালয়েশিয়া পৃথিবীর মধ্যে তৃতীয়। সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষা অনুযায়ী চিকিৎসা সেবায় মালয়েশিয়া এখন পৃথিবীতে সেরা।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago