নতুন করে ডাকসু নির্বাচন চান পর্যবেক্ষণকারী শিক্ষকরা

এই বহুল প্রতীক্ষিত ডাকসু নির্বাচনের অনিয়মের ঘটনাগুলো আমাদের খুবই লজ্জিত করেছে। এই ঘটনা জনগণের করের টাকায় পরিচালিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে বিনষ্ট করেছে। এ কারণে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে অবিলম্বে নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার দাবি জানাই আমরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত মৈত্রী হলে উদ্ধার করা ব্যালটে ছাত্রলীগ সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দেওয়া ছিল। ছবি: পলাশ খান

ডাকসু নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ জন শিক্ষক এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, এই বহুল প্রতীক্ষিত ডাকসু নির্বাচনের অনিয়মের ঘটনাগুলো আমাদের খুবই লজ্জিত করেছে। এই ঘটনা জনগণের করের টাকায় পরিচালিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে বিনষ্ট করেছে।

এ কারণে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে অবিলম্বে নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আটটি আবাসিক হলের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে তারা বলেছেন, এই ভোট-গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সঙ্গে শিক্ষকরা যুক্ত থাকায় এতে শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে যা সার্বিকভাবে একাডেমিক পরিবেশ বিঘ্নিত করবে।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী শিক্ষকরা হলেন, গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ; কামরুল হাসান, অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ; ফাহমিদুল হক, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ; মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, সহযোগী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ; রুশাদ ফরিদী, সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ; কাজী মারুফুল ইসলাম, অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ; ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাহমিনা খানম ও অতনু রব্বানী, সহযোগী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ শেষে আজ সোমবার সন্ধ্যায় দেওয়া বিবৃতিতে এই শিক্ষকরা বলেন, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে তফসিল ঘোষণার সাথে সাথে এই নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আমাদের সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহের সঞ্চার হয়। আমরা কয়েকজন শিক্ষক  নিজস্ব উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবামূলক পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চিফ রিটার্নিং অফিসার মৌখিকভাবে অনুমতি দেন এই বলে যে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে এই দায়িত্ব চাইলেই পালন করতে পারবো। আমরা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ২টা পর্যন্ত ছাত্রদের হল এসএম হল, সূর্যসেন হল, মহসিন হল, এফ রহমান হল, শহীদুল্লাহ্ হল এবং ছাত্রীদের হল রোকেয়া হল এবং কুয়েত মৈত্রী হল পরিদর্শন করি।

আমরা কুয়েত মৈত্রী হল থেকে আমাদের পর্যবেক্ষণ শুরু করি কারণ, আমরা শুরুতেই জানতে পারি এই হলে ভোটদানে অনিয়মের কথা। আমরা জানতে পারি, ভোটগ্রহণ শুরু হবার আগে ছাত্রীরা নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা শিক্ষিকাদের কাছে ভোটদানের পূর্বে শূন্য ব্যালট বাক্স দেখতে চান কিন্তু তাদের এই ন্যায্য দাবি অগ্রাহ্য করা হয়। এতে ছাত্রীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং এক পর্যায়ে কেন্দ্রের পাশের কক্ষ থেকে একটি বিশেষ ছাত্র সংগঠনের পক্ষে পূরণ করা প্রচুর ব্যালটপেপার উদ্ধার করে। সেগুলোর বেশ কিছু আমরা শিক্ষকরাও দেখতে পেয়েছি। এরকম অবস্থায় স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়ে যায়। এই ঘটনায় প্রভোস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সমর্থ না হলেও আমরা রিটার্নিং অফিসারদের লজ্জিত ও মর্মাহত দেখতে পাই।

এক পর্যায়ে রোকেয়া হলে গোলযোগের খবর পাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি, সকালের কুয়েত মৈত্রী হলের অভিজ্ঞতার পর, সরকারি ছাত্রসংগঠনের বাইরের নানান প্যানেলের শিক্ষার্থীরা ভোটকেন্দ্রের পাশের ‍রুমে ব্যালট পেপারের সন্ধান পান এবং সেগুলোকে দেখানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করেন। কিন্তু সেগুলো ছিল সাদা ব্যালট পেপার। এরপর পরিস্থিতির অবনতি ঘটে এবং সরকারি ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিরোধীদের ওপর চড়াও হয়। বিরোধীপক্ষের কয়েকজন আহত হন। উভয় পক্ষের উত্তেজনায় এরকম অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে রোকেয়া হলে, যারা নিন্দা জানাই আমরা।

ছাত্রদের হলের ভেতরে মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়। তবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে কতকগুলো অনিয়ম চোখে পড়ে –

ক. ভোটারের আইডি চেক করার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের সদস্যরাই বেশিমাত্রায় ভূমিকা রেখেছেন এবং অনাবাসিক ছাত্রদের ভোট দিতে বাধাপ্রদান ও নিরুৎসাহিত করেন তারা

খ. ছাত্রলীগের কর্মীরা নির্বিঘ্নে চলাফেরা করলেও, অন্য প্যানেলের প্রার্থী ও কর্মীরা ভোটকেন্দ্রের বাইরে বা ভোটারের সারির আশেপাশে অবস্থানগ্রহণ করতে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন

গ. ভোটকেন্দ্রের অব্যবহিত বাইরে কৃত্রিম জটলা করে রেখেছেন ছাত্রলীগের কর্মীরা যাতে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া স্লথ হয় এবং বাকিরা ভোটদানে নিরুৎসাহিত হয়

ঘ. অনেকক্ষেত্রে বুথের ভেতরে আমরা সময় গণনা করে দেখেছি ৫ থেকে ২৩ মিনিট পর্যন্ত সময় ব্যয় করেছে কোনো কোনো ভোটার যা ইচ্ছাকৃত মনে হবার কারণ রয়েছে

ঙ. ভোট চলাকালেই রোকেয়া হলের সামনে একটি সংগঠনের ২০/২৫ জন কর্মীকে বাইকের হর্ন বাজিয়ে শোডাউন করতে দেখা গেছে যা আচরণবিধির লঙ্ঘন। 

একটি বড় অসঙ্গতি মনে হয়েছে, ব্যালট পেপারে কোন সিরিয়াল নাম্বার ছিল না। ৪৩ হাজার ভোটারের একটি নির্বাচনের ব্যালটপেপারে সিরিয়াল নাম্বার না থাকাটা আমাদের কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে। কারণ এতে নির্বাচনের ফলাফলে গুরুতর অনিয়ম ঘটানো অনেক সহজ হয়ে যায়। কোন হলে কোন সিরিয়াল গেল, তাও ট্র্যাক রাখার উপায় থাকার কথা না।

এত বছর পরে অনুষ্ঠিত এই ডাকসু নির্বাচন সফলভাবে না করতে পারার ব্যর্থতার দায়ভার প্রশাসন থেকে শুরু করে সাধারণ শিক্ষক সবার এবং এই ব্যর্থতা সমগ্র শিক্ষক সম্প্রদায়ের নৈতিকতার মানদণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমরা চাই এই ব্যর্থতার একটি সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হোক। সেই সাথে এই নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে অবিলম্বে নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হউক।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago