চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএসএফের গুলিতে ২ বাংলাদেশি নিহত

Chapainawabganj Killing
২ এপ্রিল ২০১৯, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় মাসুদপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশি দুই যুবক নিহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছবিতে লাশ দেখতে গ্রামবাসীদের ভিড় করতে দেখা যাচ্ছে। ছবি: স্টার

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় মাসুদপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশি দুই যুবক নিহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, নিহতরা হলেন- মিলন আলী (১৭) ও সেনারুল হক (২৪)। মিলন আলী এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শিবগঞ্জের মড়লপাড়া গ্রামের বেলাল উদ্দিনের ছেলে। সেনারুল একই উপজেলার ঠুঠাপাড়া গ্রামের আফসার আলীর ছেলে।

মিলনের দুলাভাই আব্দুর রহিম এবং গ্রামবাসীর অভিযোগ, কয়েকজন লোকের সঙ্গে মিলন মাসুদপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরার সময় তাদের ওপর গুলি চালায় বিএসএসএফ। এসময় মিলন গুরুতর আহত হন।

সঙ্গীরা মিলনকে উদ্ধার করে তার গ্রাম মড়লপাড়ায় নিয়ে আসলে ভোর পাঁচটার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে জানান আব্দুর রহিম।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫৩ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাজ্জাদ সারওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “বিএসএফ কেনো মিলনকে গুলি করে হত্যা করলো, সে বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি।”

তিনি আরও বলেন, “কয়েকদিন আগে ফেনসিডিল ও ইয়াবাসহ কয়েকজন ব্যক্তি বিজিবির হাতে আটক হয়, সম্ভবত তাদের সঙ্গে মিলনের যোগসূত্র থাকতে পারে।”

অপরদিকে, সেনারুলের ভাই এনামুল হক জানান, সেনারুল রাত ৩টার দিকে ভারতে গরু আনতে যাচ্ছিলো। এসময় সে বিএসএফের গুলিতে আহত হয়। ভোর ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

তিনি আরও জানান, সেনারুলের লাশ চানশিকারী গ্রামে তার দুলাইভাইয়ের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে বেলা সোয়া ১২টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।

শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম রেজা জানান, সীমান্তে একটি ঘটনা ঘটেছে। সেনারুলের মৃত্যুর বিষয়টি পরিষ্কার নয়। আমরা তদন্ত করছি।

এর আগে, গত জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মাসের মধ্যে মাত্র ১৭ দিনে ৬ বাংলাদেশিকে হত্যা করে বিএসএফ।

গত ১৫ জানুয়ারি নীলফামারীর ডিমলায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে খলিলুর রহমান (২৫) নামের এক বাংলাদেশি নিহত হন।

ওইদিন ভোরে সীমান্তের ভারতীয় অংশে ভুজারীপাড়া বিএসএফ ক্যাম্প এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তিনি উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের খালপাড়া গ্রামের মকছেদ আলীর ছেলে। এলাকাবাসী জানায়, ওইদিন ভোরে ওই এলাকায় হঠাৎ করে গুলির আওয়াজ পাওয়া যায়। পরে ভারতীয় অংশের ৪৯১ মূল সীমান্ত পিলারের কাছে খলিলুর রহমান নিহত হওয়ার খবর আসে।

ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজ উদ্দিন শেখ বলেন, ‘ওই ব্যক্তি অবৈধপথে ভারতে প্রবেশ করার সময় বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছে বলে শুনেছি।’

গত ১৮ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে জাহাঙ্গীর আলম রাজু (২১) নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হন। তিনি রানীশংকৈল উপজেলার শাহানাবাদ গ্রামের বাদশা মিয়ার ছেলে।

ঠাকুরগাঁওয়ের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ব্যাটেলিয়ন-৫০ এর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, “ওইদিন ভোর ৪টার দিকে কয়েকজন গরু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাজু ধর্মগড় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতীয় সীমানায় প্রবেশ করেন। ধর্মগড় সীমান্তের ৩৭২ পিলার সংলগ্ন এলাকা দিয়ে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার শ্রীপুর ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এ সময় অন্যরা পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও রাজু গোলাগুলির মাঝখানে পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন।”

এর চারদিন পর গত ২১ জানুয়ারি হরিপুর উপজেলার মিনাপুর সীমান্তে মো. জেনারুল হক (২২) নামে আরেক বাংলাদেশি যুবক বিএসএফ’র গুলিতে প্রাণ হারান। নিহত জেনারুল হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া ইউপির তালডাঙ্গী গ্রামের আব্দুল তোয়াফের ছেলে।

হরিপুর থানা পুলিশের ওসি আমিরুজ্জামান বলেন, “ওইদিন ভোরে জেনারুলসহ কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী হরিপুর উপজেলার মিনাপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকে। এ সময় মালদ্বখন্ড ক্যাম্পের বিএসএফের সদস্যরা গুলি ছোড়েন। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই জেনারুল নিহত হন। তবে বাকি গরু ব্যবসায়ীরা পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন।”

এ নিয়ে সেসময় মাত্র ১০ দিনে ঠাকুরগাঁও সীমান্তে ৩ জন বাংলাদেশি নিহত হবার খবর পাওয়া যায়।

এছাড়াও, গত ২৪ জানুয়ারি রাজশাহীর গোদাগাড়ী সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে জামাল উদ্দিন (৪৫) নামে এক অপর এক বাংলাদেশি রাখাল নিহত হয়েছেন।

ওইদিন ভোরে গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে। জামাল চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের ধবেরমাঠ গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে।

রাজশাহী বিজিবি-১ ব্যাটালিয়নের সাহেবনগর ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার সুলতান মোল্লা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “গত ২৩ জানুয়ারি রাতে জামালসহ কয়েকজন সাহেবনগর সীমান্তের ১ নম্বর পিলার সংলগ্ন এলাকায় ভারতীয় গরু আনতে যান। এসময় ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলা থানার ৩৫ বিএসএফের চর আষাড়িয়াদহ বিওপি ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই জামাল নিহত হন। এসময় তার সঙ্গে থাকা অন্য রাখালরা মরদেহ নিয়ে পালিয়ে আসেন।”

গত ২৮ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার জগদল সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে সোহেল রানা বাবু (১৪) নামে এক বাংলাদেশি কিশোর নিহত হন। ওইদিন বিকাল ৫টার দিকে জগদল ক্যাম্পের কাছে সীমান্ত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান ধর্মগড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মুকুল।

নিহত সোহেল রানা বাবু হরিপুর উপজেলার গেদুড়া ইউনিয়নের মারাধার গ্রামের একরামুল হকের ছেলে।

এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে মুকুল বলেন, “দাওয়াত খাওয়ার জন্য কিছুদিন আগে মামার সঙ্গে সোহেল রানা বাবু অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে। সোমবার বিকালে তারা জগদল সীমান্তের ৩৭৩/২ এস পিলার এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে আসছিল। এ সময় ভারতের উত্তর দিনাজপুর জেলার কুকড়াদহ ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাদের দিকে গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই বাবু নিহত হয়। তার মামা পালিয়ে চলে এসেছে বলে জানান শফিকুল। তবে সোহেলের লাশ ভারতে রয়ে গেছে।”

এছাড়াও, গত ২ ফেব্রুয়ারি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্তের ওপারে বিএসএফ’র গুলিতে আশাদুল ইসলাম (২৮) নামের এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।

ওইদিন ভোরে উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের ডাঙ্গাটারী সীমান্তে ওপারে ভারতের নিউ কুচলিবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আশাদুল ইসলাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের নবীনগর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি এক ছেলে ও মেয়ের বাবা।

রংপুর-৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাফিজুর রহমান আশাদুলের নিহত হওয়ার সত্যতা স্বীকার করেন।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

6h ago