কথা একটাই ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’

খুব সিম্পল ট্যাগলাইন লেখা, “গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না”।
T-Shirt
ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

খুব সিম্পল ট্যাগলাইন লেখা, “গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না”।

এই লাইনটা একটা মুভমেন্ট। উচিত ছিল সবারই এই মুভমেন্টে সাপোর্ট দেয়া। এটাই একটা ফুলস্টপ হওয়ার কথা ছিলো। গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না মানে গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না।

কিন্তু দাঁড়ালো কী? ফেসবুকে নারীদের গেঞ্জির লেখা নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন তারা কি আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখেছেন? একজন নারীর পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চলার প্রতিদিনের বিড়ম্বনা জানেন?

নগরীতে গণপরিবহনের স্বল্পতার কথা আমরা সবাই জানি। হোক সেটা বাস কিংবা লেগুনা। চিত্র কিন্তু সব জায়গায় একই। একে তো পর্যাপ্ত গণপরিবহন নেই, তার উপরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তীর্থের কাকের মতো দাঁড়িয়ে থাকা, কখন একটি বাস আসবে। একটি বাস হয়ত এলো, তাতে সবাই দৌড়-ঝাপ দিয়ে উঠবে, বাসের ভেতরে গাদাগাদি করে দাঁড়াবে, কেউ আবার বাসের দরজার হাতল ধরে ঝুলতে ঝুলতে যাবে।

বাসে উঠার প্রথম থেকেই শুরু হয় যুদ্ধ। প্রথমেই গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করে বাসের হেলপার। বাসে উঠার সময়ই হয়তো দেখা যাবে কেউ একজন কনুই দিয়ে ওই নারী যাত্রীটির স্পর্শকাতর কোনো এক স্থানে আঘাত করেছে। বাসের ভেতরে গাদাগাদি করে দাঁড়ালেই দেখা যাবে কেউ একজন ওই নারী যাত্রীটির শরীর স্পর্শ করে কোনো বিকৃত সুখ খুঁজে বেড়াচ্ছে। এ এক চেনা দৃশ্য, অসহ্য যন্ত্রণা। মোট কথা একজন নারীকে পুরুষের সঙ্গে রীতিমত যুদ্ধ করে গণপরিবহনে উঠতে হয়।

বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থা এতই নিম্নমানের আর এতটাই অপ্রতুল যে প্রতিটি নারীর জন্য গণপরিবহনে চলাচল করা ভীষণ ভীতিকর আর আতঙ্কের একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এবার আসি কেন মেয়েরা এ ধরনের প্রতিবাদের পথ বেছে নিলেন? আমরা যদি পরিসংখ্যানের দিকে তাকাই তবে কি দেখতে পাই?

উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের একটি গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে গত বছর। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী বাংলাদেশের পাবলিক ট্রান্সপোর্টে নারীদের ৯৪ শতাংশ মৌখিক, শারীরিক ও অন্যান্য উপায়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।

এই যখন অবস্থা তখন প্রতিবাদের জন্য এরচেয়ে শান্তিপূর্ণ আর ভদ্র ভাষা কি জানা আছে কারও? অন্তত আমার জানা নেই।

এই শহরে যে মেয়েরা জীবনের টানে জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন বাইরে বের হন, অনিচ্ছাকৃত ঘেঁষে দাঁড়ানো আর ইচ্ছাকৃত ঘেঁষে দাঁড়ানোর পার্থক্য তারা বোঝেন।

আপনি যদি কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে ঘেঁষে না দাঁড়ান তাহলে এই লেখা তারা আপনাকে দেখাতে লিখেন নাই। মিটমাট!

যারা সরাসরি বা ইনিয়ে-বিনিয়ে বা না- মানে বলছিলাম কি; ইত্যাদি বলে সমালোচনা করছেন, তাহলে জেনে নিন আপনি হয়ত নারীকে অসম্মান করা ‘গা ঘেঁষে দাঁড়ানো’ একজন।

যারা এই আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য লেখাগুলো এডিট করে অশ্লীল শব্দ বসিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়াচ্ছেন, তারা আসলে নিজেদের প্রকৃত চেহারাই উন্মোচন করছেন।

কথা একটাই, নারীকে মানুষ ভাবুন। সম্মান করুন।

গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না।

এমনকি আমার গা ঘেঁষেও না...।

লেখক: সিনিয়র রিপোর্টার, ডেইলি স্টার

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

8h ago