পুণ্যস্নানে প্রস্তুত ব্রহ্মপুত্রের তীর লাঙ্গলবন্দ

নারায়ণগঞ্জের ব্রহ্মপুত্র নদে প্রতিবছরের মতো চৈত্র মাসের শুক্লাষ্টমী তিথিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পুণ্যস্নান আগামী ১২ এপ্রিল শুরু হবে। দুই দিনব্যাপী এই পুণ্যস্নানে দেশ বিদেশের লাখ লাখ ভক্তপ্রাণের আগমন নির্বিঘ্ন করতে ব্রহ্মপুত্রের তীর লাঙ্গলবন্দে চলছে শেষ পর্যায়ে প্রস্তুতি।
Narayanganj_langolband
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে পুণ্যস্নানের জন্য প্রস্তুত ব্রহ্মপুত্রের ঘাটগুলো। সেখানকার প্রেমতলা ঘাটের মন্দিরে বাসন্তী পূজা উপলক্ষে চলছে প্রতিমা তৈরির শেষ মুহূর্তের কাজ। ছবি: সনদ সাহা

নারায়ণগঞ্জের ব্রহ্মপুত্র নদে প্রতিবছরের মতো চৈত্র মাসের শুক্লাষ্টমী তিথিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পুণ্যস্নান আগামী ১২ এপ্রিল শুরু হবে। দুই দিনব্যাপী এই পুণ্যস্নানে দেশ বিদেশের লাখ লাখ ভক্তপ্রাণের আগমন নির্বিঘ্ন করতে ব্রহ্মপুত্রের তীর লাঙ্গলবন্দে চলছে শেষ পর্যায়ে প্রস্তুতি।

ভক্তদের বিশ্বাস মতে তিথির নির্দিষ্ট সময়ে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান খুবই পুণ্যের, এ স্নানে ব্রহ্মার সন্তুষ্টি লাভ করে পাপমোচন হয়। এছাড়াও লাঙ্গলবন্দে বৃহস্পতিবার মহাষষ্ঠী পূজার মঙ্গলঘট স্থাপন ও মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে বাসন্তী পূজা শুরু হবে। যা ১৫ এপ্রিল দশমীর মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে। বসন্তকালে হয় বলে এর নাম বাসন্তী পূজা।

লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব উদযাপন কমিটির নেতারা জানান, তিথি অনুযায়ী ১২ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ১১টা ৫ মিনিটে মহাষ্টমী স্নানোৎসবের লগ্ন শুরু হবে। পরদিন শনিবার সকাল ৮টা ৫৫ মিনিট ২২ সেকেন্ড পর্যন্ত লগ্ন রয়েছে। আর এ তিথির মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের ১২টি ঘাটের যেকোনটি দিয়ে স্নান খুবই পুণ্যের, এ স্নানে ব্রহ্মার সন্তুষ্টি লাভ করে পাপমোচন হয়।

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দের ব্রহ্মপুত্র নদে গিয়ে দেখা গেছে, পুণ্যার্থীদের জন্য প্রতিটি ঘাটের সামনে নদে বাঁশ দিয়ে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে নদের ওই বলয়ের মধ্যে ফেলা হচ্ছে বালুর বস্তা। স্নানের পর নারী পুণ্যার্থীদের কাপড় বদলের জন্য ঘাটগুলোর পাশে যে ছোট রুম আছে সেগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। অস্থায়ী বাথরুম, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা সহ রাস্তা ঘাট পরিষ্কার করা হচ্ছে।

স্নান উপলক্ষে ৩৩টি ধর্মীয় স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন পুণ্যার্থীদের সেবা দিতে ক্যাম্প স্থাপন করছে। এদিকে পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিটি টিভি ক্যামেরা, মাইক, ওয়াচ টাওয়ার বসানো হচ্ছে। তৈরি করা হচ্ছে প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র। আর মন্দিরগুলোতে চলছে বাসন্তী পূজার প্রতিমা তৈরি কাজ। রঙ তুলির কাজ শেষে প্রতিমার সাজসজ্জার চলছে।

বাংলাদেশ হিন্দু কল্যাণ সংস্থার কেন্দ্রীয় সদস্য রনজিৎ মোদক জানান, এবার ললিত সাধুর ঘাট, অন্যপূর্ণ ঘাট, রাজ ঘাট, কালীগঞ্জ ঘাট, মা কুঁড়ি সাধুর ঘাট, মহাত্মা গান্ধী ঘাট, বড় দেশ্বরী ঘাট, জয়কালি ঘাট, রক্ষাকালী ঘাট, প্রেম তলা ঘাট, চর শ্রীরাম ঘাট, সাবদি ঘাট, বাসনকালী ও জগৎবন্ধু ঘাটে স্নান হবে।

লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুজিত কুমার সাহা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রতিবছর বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল সহ বিভিন্ন দেশের কয়েক লাখ পুণ্যার্থীর আগমন হয় লাঙ্গলবন্দ স্নানে। শুক্র ও শনি দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় এবার পুণ্যার্থীদের আগমন দ্বিগুণ হবে বলে আশা করছি। আর তাই পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, স্নান আয়োজন করতে আমাদের ১০০ স্বেচ্ছাসেবক ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাবে। ঝড় বৃষ্টি হলেও যাতে পুণ্যার্থীদের কষ্ট না হয় সেজন্য মজবুত প্যান্ডেল তৈরি করা হচ্ছে। জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহে উচ্চ ক্ষমতার দুইটি জেনারেটর থাকবে। ১৬টি ঘাটের ৩৭টি পয়েন্টে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে। এছাড়াও পুণ্যার্থীদের জন্য ১০০টি অস্থায়ী শৌচালয়, ৮০টি গভীর নলকূপ, ট্যাংকের সাহায্যে অস্থায়ীভাবে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা সহ এক লাখ বিশুদ্ধ পানির বোতল বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।

নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেন, লাঙ্গলবন্দে পুণ্যার্থীদের উৎসব যাতে নিরাপদ হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ১৬০০ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। তিন শিফটে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করবে। তার মধ্যে নৌ পুলিশ, টহল পুলিশ, সাদা পোশাকে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করবে। মোবাইল টিম, ওয়াচ টাওয়ার, মহিলা পুলিশ, আনসার বাহিনীও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, ১২টি স্নানঘাটসহ পুরো লাঙ্গলবন্দ সিসি ক্যামেরায় আওতাভুক্ত থাকবে। ২০১৫ সালে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছিল পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সকলকে সর্তক থাকতে হবে।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ সেলিম রেজা বলেন, আমাদের ১৬টি দপ্তরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। র‌্যাব, পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি প্রস্তুত থাকবে। প্রয়োজন হলে বিজিবি মোতায়েন করা হবে। এছাড়াও কয়েকটি স্পটে ভ্রাম্যমাণ আদালত, মেডিকেল টিম, ফায়ার সর্ভিসের ডুবুরি দল, কোস্ট গার্ড, পানি ও শুকনা খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আশা করছি শান্তিপূর্ণ ভাবে স্নানোৎসব পালিত হবে।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago