'মাশরাফির কান্না' তাসকিনের চোখে

মাশরাফি বিন মুর্তজা-তাসকিন আহমেদ
ছবি: সংগ্রহীত

পাশাপাশি দুটি ছবি। একটি ২০১১ সালের। অন্যটি আজকের। কিন্তু দুটি ছবির গল্প একই। হৃদয়ভাঙার গল্প। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলতে না পেরে সেদিন কেঁদেছিলেন বর্তমান অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। আর আসন্ন বিশ্বকাপে সুযোগ না পেয়ে কাঁদলেন পেসার তাসকিন আহমেদ।

ঘটনা ১.

বাংলাদেশ জাতীয় দল ঘোষণা হবে কিচ্ছুক্ষণ পর। বিশ্বকাপ দলে থাকছেন জেনেই ফুরফুরে মেজাজে মাঠে এসেছিলেন মাশরাফি বেশ পরিপাটি ভাবেই। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমী মাঠে বোলিং অনুশীলন করছিলেন। অন্যদিকে সংবাদ সম্মেলন কক্ষে জানানো হলো বাংলাদেশ দল। তাতে বিস্ময়করভাবে নেই মাশরাফির নাম।

একাডেমী মাঠে ছুটে গেলেন সাংবাদিকরা। প্রশ্ন করা হয়, ‘ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ। এতো বড় আয়োজন। আপনি নেই। ঘরের মাঠে খেলতে না পারার অনুভূতিটা কি?’

প্রশ্ন শুনে লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস নিলেন মাশরাফি। কিছু একটা বলতে গেলেন। এরপর হাউমাউ কেঁদে বসে পড়লেন। প্রায় ১০ মিনিট সময় লাগলো তার শান্ত হতে। উপস্থিত সাংবাদিকরাও অবাক। নিজেকে সামলে বলেছিলেন, ‘নির্বাচকরা হয়তো মনে করেছে আমি ফিট নই। জানি না আর কখনো ফিরতে পারব কি না। তবে আট দশটা মানুষের মতোই বাংলাদেশকে সমর্থন দিব। দলে যারা সুযোগ পেয়েছে তাদের শুভেচ্ছা।’

ঘটনা ২.

বাংলাদেশ দল ঘোষণা হলো সংবাদ সম্মেলন কক্ষে। তাতে নেই তাসকিন আহমেদের নাম। খুব একটা অবাক করা না হলেও অনেকেই আশা করছিলেন সবশেষ বিপিএলের পারফরম্যান্সে হয়তো টিকে যাবেন তিনি। তা না হলেও নিজেকে প্রমাণের জায়গাটা পাবেন। ত্রিদেশীয় সিরিজে রাখা হবে তাকে। আয়ারল্যান্ড সফরে না থাকা কিছুটা হলেও অবাক করেছে সবাইকে।

মিরপুর একাডেমীতে এসেছিলেন তাসকিন। সেখানেই তাকে ঘিরে ধরল সাংবাদিকরা। প্রশ্ন, ‘বিশ্বকাপ দলে থাকছেন না। অন্তত আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে তো থাকতে পারতেন?’

তাসকিনের উত্তর, ‘না ঠিক আছে। সবাই তো ভালই চায়। দলের খারাপ কেউই চায় না। সামনে আরো সুযোগ আছে। আমি চেস্টা করবো। প্রিমিয়ার লিগে সুপার লিগ আছে ভাল করার চেষ্টা করবো।’ এরপরই অঝরে কেঁদে দিলেন তাসকিন। কান্না থামাতে না পেরে চলেই যান তিনি।

অভিষেকের পর থেকেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের সেরা পেসার মাশরাফি। বহু জয়ের নায়ক। তাকে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে হতে হয়েছিল দর্শক। ২০১১ সালের বিশ্বকাপের মাস তিনের আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েন তিনি। এরপর প্রায় ৮০ ভাগ ইনজুরি কাটিয়ে ফিরেছিলেন। কিন্তু সম্পূর্ণ ফিট না হওয়ায় তাকে বিবেচনা করেননি নির্বাচকরা। তবে ফিরে এসে দেশের ক্রিকেটের ইতিহাসই বদলে দিয়েছেন অধিনায়ক।

২০১৯ সালে তাসকিনের গল্প হয়তো একটু ভিন্ন। প্রায় ১৮ মাস যাবত দলের বাইরে। একবার ইনজুরি থেকে উঠলে আবার পড়ে যান ইনজুরিতে। কিন্তু সবশেষ বিপিএলে দারুণ বোলিং করে আবার যেন স্বরূপে ফিরেছিলেন। ১২ ম্যাচে ১৪.৪৫ গড়ে পেয়েছিলেন ২২টি উইকেট। আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিও ছিলেন তিনি। তখনই তাকে নিয়ে আবার আশায় বুক বেঁধেছিলেন সবাই। ২০১৫ বিশ্বকাপে এই তাসকিনই তো ছিলেন দলের সেরা বোলার। ৯টি উইকেট পেয়েছিলেন।

দুর্ভাগ্যক্রমে বিপিএলে নিজেদের শেষ ম্যাচে চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ফিল্ডিং করার সময় চোট পান গোড়ালিতে। এরপর ইনজুরি কাটিয়ে গত মাস থেকেই পুনর্বাসন শুরু করেছিলেন। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে একটি ম্যাচেও খেলেছিলেন। কিন্তু পুরনো ছন্দ খুঁজে পাননি। তাই বিশ্বকাপ দলে তো থাকলেনই না, থাকলেন না ত্রিদেশীয় সিরিজের দলেও।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

4h ago