চাচাতো ভাইয়ের অপরাধে জরিমানা দিলেন মেয়র নিজেই

রাজশাহীর ফুটপাতগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করতে ১১ দিনের অভিযান শহরের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের উদ্যোগেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু আজ তিনি নিজেই এই অভিযানের শিকার হয়েছেন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। স্টার ফাইল ছবি

রাজশাহীর ফুটপাতগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করতে ১১ দিনের অভিযান শহরের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের উদ্যোগেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু আজ তিনি নিজেই এই অভিযানের শিকার হয়েছেন।

তবে নিজের কোনো ভুলের জন্য না হলেও মেয়র লিটন তার চাচাতো ভাইয়ের অপরাধের শাস্তি নিজের ঘাড়ে তুলে নিয়েছেন। সেই সঙ্গে ফুটপাতে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখার জরিমানাও পরিশোধ করলেন মেয়র।

জরিমানা দেওয়ার পর সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে দীর্ঘ এক পোস্টে মেয়র লিটন লিখেছেন, “আপনি সব চাইতে বেশি প্রতারিত হবেন আপনার কাছের মানুষদের কাছ থেকে। আপনাকে সব চাইতে বেশি কষ্ট দেওয়া মানুষের তালিকা করলে সেখানে শত্রু না, আপন মানুষদের নাম দেখতে পাবেন। শত্রু কখনো বিশ্বাস ঘাতক হয় না, বিশ্বাসঘাতকতা করে কেবল আপন মানুষরাই।”

অন্যান্য দিনের মতো অভিযানে বেরিয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেখেন গ্রেটার রোডের একটি জায়গায় নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রেখে ফুটপাত দখল করা হয়েছে। এতে পথ চলতি মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে বাধা তৈরি হচ্ছিল। সঙ্গে সঙ্গেই মালিককে ১০,০০০ টাকা জরিমানা ঘোষণা করেন তিনি। পরে জানা গেল, বাড়ির মালিক আর কেউ নন স্বয়ং মেয়রের চাচাতো ভাই এএইচএম সাইদুজ্জামান নিপুন।

রাজশাহী শহরের ফুটপাত দখলমুক্ত করতে চলছে উচ্ছেদ অভিযান। ছবি: আনোয়ার আলী

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “জরিমানার কথা শুনে বাড়ির মালিক মেয়র স্যারের কাছে তদবির করেন এবং মেয়র আমাকে ফোন করেন, নমনীয় হতে বলেন।”

“আমি অস্বীকার করি, তাকে বলি আপনিই আমাকে এ অভিযানে পাঠিয়েছেন। মেয়র স্যার তখন নিজের পকেট থেকে জরিমানার টাকা পাঠিয়ে দেন,” বলছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার।

তবে এ ব্যাপারে সাইদুজ্জামান নিপুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আমি ফকির নাকি! জরিমানার টাকা আমি নিজেই দিয়েছি। 

জরিমানা নিয়ে এ ধরনের বক্তব্য আসার পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পালের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করা হলে বলেন, নিপুন একজন প্যানেল মেয়রকে নিয়ে এসেছিলেন তদবির করার জন্য। পরে জরিমানার টাকা দিয়ে বলেন, মেয়রের কাছ থেকে এনে দিলাম।

এই ঘটনা ছাড়াও, একই দিনে এই অভিযানে তেরখাদিয়া এলাকায় রাস্তার পাশে অবৈধভাবে সরকারি জায়গার ওপর নির্মিত আওয়ামী লীগের দুটি অফিসও ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে তিনি জানান। কয়েক বছর আগে নির্মিত এই কার্যালয়গুলো বুলডোজার দিয়ে অপসারণ করা হয়।

রাজশাহী শহরে গত ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া অভিযানে এ পর্যন্ত ফুটপাত ও রাস্তার পাশের ৮০০ অবৈধ স্থাপনা সরানো হয়েছে এবং যত্রতত্র নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখায় অন্তত দুই লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

এ অভিযান ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত এই অভিযান চলবে। ইতিমধ্যেই অভিযানের সুফলও ভোগ করতে শুরু করেছেন নগরবাসী। পথচারীরা ফুটপাতে হাঁটতে পারছেন স্বচ্ছন্দে।

Comments