কিরগিজদের হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

আগের ম্যাচের মতো এদিনও শুরু থেকেই আগ্রাসী ঢঙে বাংলাদেশ। একের পর এক আক্রমণে কিরগিজস্তানের রক্ষণভাগকে ব্যস্ত রেখেছিল মেয়েরা। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত গোল পায়নি দলটি। ম্যাচের তিনটি গোলই আসে গোলরক্ষকদের ভুলে। তাতে ২-১ গোলের কষ্টার্জিত জয় পায় গোলাম রব্বানি ছোটনের দল। ফলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সেমিফাইনালে নাম লেখায় স্বাগতিকরা।
ছবি: বাফুফে

আগের ম্যাচের মতো এদিনও শুরু থেকেই আগ্রাসী ঢঙে বাংলাদেশ। একের পর এক আক্রমণে কিরগিজস্তানের রক্ষণভাগকে ব্যস্ত রাখে মেয়েরা। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত গোলটি আসে ভাগ্যের সহয়াতায়। ম্যাচের তিনটি গোলই আসে গোলরক্ষকদের ভুলে। ২-১ গোলের স্বস্তির জয় পায় গোলাম রব্বানি ছোটনের দল। তাতে অবশ্য লক্ষ্য পূরণ হয়েছে বাংলাদেশের। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সেমিফাইনালে নাম লেখায় স্বাগতিকরা।  

তবে আরব আমিরাতের বিপক্ষে কিরগিজস্তানের জয়েই সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের। চাইলেই রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড়দের যাচাই করতে পারতেন কোচ ছোটন। তবে তাতো করেনই নি, এমনকি দলে পরিবর্তন ছিল না একটিও। সেরা দল মাঠে নামিয়েও কষ্টার্জিত জয় পায় বাংলাদেশ। অবশ্য মেয়েদের আক্রমণাত্মক ফুটবল মন ভরিয়েছে দর্শকদের।

বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ মূলত প্রাণ পায় এদিনই। মাঠে উপস্থিত ছিলেন প্রায় হাজার দশেক দর্শক। আর উপস্থিত দর্শকদের সামনে এদিন বেশ গোছালো ফুটবল খেলে দলটি। মাঝ মাঠ নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন মৌসুমি-মারিয়ারাই। দারুণ সব সংঘবদ্ধ আক্রমণও করেছিলেন। কিন্তু সমস্যা সেই পুরনোই। অ্যাটাকিং থার্ডে এসে খেই হারিয়েছে দলটি।

ম্যাচে এগিয়ে যেতে অবশ্য খুব বেশি সময় নেয়নি বাংলাদেশ। মাত্র ৩০ সেকেন্ডই গোল পায়। তবে এটাকে প্রতিপক্ষের উপহারও বলা চলে। বাঁ প্রান্ত থেকে লক্ষ্যে কোণাকোণি শট নিয়েছিলেন কৃষ্ণা। সহজ বলটা ঠিকভাবে ধরতে পারেননি কিরগিজ গোলরক্ষক তোলোনোভা আইচুরেক। তার হাত ফসকে বেরিয়ে গেলে ফাঁকায় বল পেয়ে যান সানজিদা আক্তার। আলতো টোকায় বল জালে জড়াতে কোন ভুল করেননি এ ফরোয়ার্ড।

ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারতো ম্যাচের ১২তম মিনিটেই। ডান প্রান্ত থেকে দারুণ আড়াআড়ি ক্রস করেছিলেন সানজিদা। গোলমুখে ফাঁকায় পেয়েছিলেন কৃষ্ণা। কিন্তু তার শট লক্ষ্যে থাকেনি। পাঁচ মিনিট পর স্বপ্নার শটও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরের মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ মিস করে বাংলাদেশ। কর্নার ঠেকাতে কিরগিজ গোলরক্ষক এগিয়ে এলে লাইন মিস করেন। ফলে গোল মুখে সৃষ্টি হয় জটলা। ফাঁকা বারে একাধিক শট নিয়ে লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি বাংলাদেশের মেয়েরা। প্রতিহত করেন প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডাররা।

২৪তম মিনিটে আবারো সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। ডান প্রান্ত থেকে সানজিদার ক্রসে লাফিয়ে উঠে ভালো হেড নিয়েছিলেন কৃষ্ণা। কিন্তু অল্পের জন্য তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পাঁচ মিনিট পর গোল করার আবারো হতাশ করে দলটি। মারিয়া মান্ডার ক্রস বুক দিয়ে নামিয়ে কৃষ্ণাকে বল দিয়েছিলেন মার্জিয়া। এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে গোলরক্ষককে একা পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। শটও নিয়েছিলেন। তবে দারুণ দক্ষতায় সে যাত্রা কিরগিজদের রক্ষা করেন গোলরক্ষক তোলোনোভা।

৩৬তম মিনিটে সামসুন্নাহারের পাস থেকে ডি বক্সে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বাঁ প্রান্ত থেকে কোণাকুণি দারুণ এক শট নিয়েছিলেন বদলী খেলোয়াড় মার্জিয়া। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার, বার পোস্টে লেগে বল ফিরে আসলে ব্যবধান বাড়েনি স্বাগতিকদের। ৪৪তম মিনিটে দিনের সেরা সুযোগটি মিস করেন সানজিদা। অসাধারণ দক্ষতায় দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ভালো ক্রস দিয়েছিলেন মার্জিয়া। কিন্তু একবারে ফাঁকায় বল পেয়েও বাইরে মারেন সানজিদা। পরের মিনিটে মারিয়ার দূরপাল্লার দারুণ শট ঠেকিয়ে দেন তোলোনোভা।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আরও একটি সহজ সুযোগ মিস করেন মার্জিয়া। মারিয়ার পাস থেকে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে চিপ করেছিলেন তিনি। কিন্তু অল্পের জন্য বার ঘেঁষে বল বাইরে চলে যায়। ফলে এক গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

দ্বিতীয়ার্ধের তৃতীয় মিনিটেই ব্যবধান বাড়াতে পারতো বাংলাদেশ। সতীর্থের পাসে একবারে ফাঁকায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন মার্জিয়া। কিন্তু শট নিতে দেরি করে ফেলেন তিনি। তবে আলগা বল পেয়ে গিয়েছিলেন কৃষ্ণা। শটও নিয়েছিলেন। কিন্তু বারপোস্ট ঘেঁষে সে শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে হতাশা বাড়ে এ ফরোয়ার্ডের। ৫৪তম মিনিটে আবারো সহজ সুযোগ মিস করে বাংলাদেশ। সামসুন্নাহারের পাস থেকে কৃষ্ণার শট এক ডিফেন্ডার প্রতিহত করলে আলগা বল পেয়ে যান সানজিদা। তবে তার শট লক্ষ্যে থাকেনি।

৫৯তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ। আবারো প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের উপহার। গোল করেন কৃষ্ণা। তবে এ গোলের মূল কৃতিত্ব ছিল সানজিদার। দারুণ দক্ষতার সঙ্গে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে দুর্দান্ত এক ক্রস করেন এ ফরোয়ার্ড। গোলরক্ষক বল ধরতে গেলে হাত ফসকে বেরিয়ে গেলে গোলমুখে আলগা বল পেয়ে যান কৃষ্ণা। আলতো হেডে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। চার মিনিট পর আবারো অবিশ্বাস্য এক মিস করেন কৃষ্ণা। সানজিদার আরও একটি দারুণ পাসে ফাঁকায় গোলরক্ষককে একা পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি কৃষ্ণা।

৬৫তম মিনিটে মারিয়ার ক্রসে গোলমুখে জটলায় আলগা বল পেয়েও বাইরে মারেন কৃষ্ণা। চার মিনিট পর উল্টো ব্যবধান কমায় কিরগিজস্তান। নিজেদের অর্ধ থেকে বাড়ানো বল দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডান প্রান্তে বল আখমাতকুলোভা জাইরিনাকে পাস দেন রিসবেক কিজি কেনঝেবুবু। জাইরিনার দূরপাল্লার বাংলাদেশ গোলরক্ষক রূপনা চাকমার ভুলে জালে জড়ায় বল। তিনি বল ধরতে না গিয়ে ফিস্ট করলে হয়তো রক্ষা পেতে পারতো বাংলাদেশ।

৭৬তম মিনিটে ছোট কর্নার থেকে মারিয়ার নেওয়া ক্রসে ফাঁকায় হেড দিয়েছিলেন আঁখি খাতুন। তবে তার হেড লক্ষ্যে থাকেনি। পরের মিনিটে প্রায় মাঝ মাঠ থেকে দুর্দান্ত এক শট নিয়েছিলেন তোকতোবোলোতোভা ব্যাকতিগুল। তবে এবার আর কোন ভুল করেননি রূপনা। সহজেই লুফে নেন তিনি।

৮৭ মিনিটে ফাঁকায় বল পেয়ে মিস করেন বদলী খেলোয়াড় সাজেদা। একক দক্ষতায় এগিয়ে তাকে দারুণ পাস দিয়েছিলেন সামসুন্নাহার। পরের মিনিটে মৌসুমের ক্রস থেকে আবারো ফাঁকায় বল পান সাজেদা। কিন্তু ঠিকভাবে বলে পা লাগাতে না পারলে ব্যর্থ হয় সে সুযোগ। পরের মিনিটে তিন ডিফেন্ডারকে দারুণ দক্ষতায় কাটিয়েছিলেন আরেক বদলী খেলোয়াড় তহুরা খাতুন। কিন্তু ভালো শট নিতে পারেননি।

নির্ধারিত সময়ের শেষ মুহূর্তে একবারে ফাঁকায় বল পেয়েও লক্ষভেদ করতে পারেননি মনিকা চাকমা। যোগ করা সময়ে নিজেদের অর্ধ থেকে বাড়ানো বলে গোলরক্ষককে একা পেয়ে গিয়েছিলেন সাজেদা। কিন্তু গোলরক্ষক বরাবর শট নেন তিনি। ফিরতি বল পেয়েছিলেন মার্জিয়া। কিন্তু তার শট লক্ষ্যে থাকেনি। যোগ করা সময়ে প্রায় মাঝ মাঠ থেকে দুর্দান্ত শট নিয়েছিলেন আঁখি। অল্পের জন্য তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ফলে স্বস্তির জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago