মে দিবসেও কাজ করেন পরিবহন শ্রমিকরা

শ্রমিকদের মে দিবস আসে আর যায়। এ দিনটিতেও পরিবহন খাতের শ্রমিকরা গাড়ি চালান, আর মালিক সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীরা মে দিবস পালন করেন। তারা ছুটি ভোগ করেন। অথচ মে দিবস শ্রমিকদের দিবস। তাদেরই ছুটি পাওয়ার কথা। অন্যান্য দিনের মতো মে দিবসেও তারা ১৫-১৬ ঘণ্টা কাজ করেন।
Transport worker
মে দিবসে রাস্তায় পরিবহন শ্রমিকেরা। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

শ্রমিকদের মে দিবস আসে আর যায়। এ দিনটিতেও পরিবহন খাতের শ্রমিকরা গাড়ি চালান, আর মালিক সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীরা মে দিবস পালন করেন। তারা ছুটি ভোগ করেন। অথচ মে দিবস শ্রমিকদের দিবস। তাদেরই ছুটি পাওয়ার কথা। অন্যান্য দিনের মতো মে দিবসেও তারা ১৫-১৬ ঘণ্টা কাজ করেন।

আইন অনুযায়ী প্রত্যেক শ্রমিককে নিয়োগপত্র দেওয়ার কথা। কিন্তু, পরিবহন মালিকরা কাউকেই নিয়োগপত্র দেন না। আইনের এই বিধান পরিবহন খাতে কখনওই বাস্তবায়িত হয়নি।

এর কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, মালিকরা আইন প্রতিপালন না করেও পার পেয়ে যান, কারণ যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন মালিকরা কোনো না কোনোভাবে সরকারের সঙ্গেই যুক্ত থাকেন। পরিবহন খাত যেটি কী না সেবার খাত হওয়ার কথা ছিলো, সেটিকে তারা মুনাফার খাতে পরিণত করেছেন।

শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী একজন বাস চালকের ১২ হাজার টাকা বেতন এবং মিনিবাস চালকের ১০ হাজার ও হেলপারের ৮ হাজার টাকা মাসিক বেতন হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু, অধিকাংশ মালিক এই নিয়মের তোয়াক্কা করেন না। ট্রিপ সংখ্যার ভিত্তিতে মজুরি পান পরিবহন শ্রমিকরা। মূলত এ কারণেই বেশি যাত্রী ও বেশি ট্রিপ ধরার জন্য সড়কে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে হয় বাস চালকদের।

সড়ক দুর্ঘটনার কথা আসলেই সব সময় শুধুমাত্র চালকদেরকে দায়ী করা হয়। কিন্তু, দুর্ঘটনার পেছনে আরও অনেক আনুষাঙ্গিক বিষয় জড়িত থাকে উল্লেখ করে পরিহন খাতের ২৩৫টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ফেডারেশনের নেতা ওসমান আলী বলেন, “একজন পরিবহন শ্রমিক যদি দিনে ১৬ ঘণ্টা কাজ করে তাহলে কীভাবে তার দ্বারা সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে? শ্রমিকদের নির্দিষ্ট বেতন নেই, কাজের নির্ধারিত কোনো সময় নেই, সামাজিক মর্যাদা নেই, ফলে যাদের জীবনে এতো ‘নেই-নেই’ তাদের দিয়ে কীভাবে নিরাপদ সড়ক আশা করা হয়। যদি নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে হয় তবে এই শ্রমিকদের যৌক্তিক বেতন, নির্দিষ্ট শ্রমঘণ্টা সর্বোপরি সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।”

উল্লেখ্য, ১৮৮৬ সালে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে শ্রমিকরা আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে সমবেত হয়েছিলেন। তাদেরকে ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি এক অজ্ঞাতনামার বোমা নিক্ষেপের পর পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। ফলে প্রায় ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক ও পুলিশ নিহত হয়। পরবর্তীতে, বিশ্বজুড়ে শ্রমিক সংগঠনগুলো ১ মে ‘বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না করার’ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং ১ মে হয়ে উঠে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস।

Comments