বার্সেলোনাকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে লিভারপুল

ছবি: এএফপি

ঘরের মাঠে প্রথম লেগে এগিয়ে থাকা যেন বার্সেলোনার জন্য কাল হয়েই দাঁড়িয়েছে। ন্যু ক্যাম্পে তিন গোলে এগিয়ে থাকলেও অ্যানফিল্ডে এসে এবার চারটি গোল হজম করে দলটি। আর তাতে অবিশ্বাস্য এক প্রত্যাবর্তনের গল্প লেখে ইংলিশ দলটি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে জায়গা করে নেয় তারাই। অথচ দলের সেরা তিন জন খেলোয়াড়ই ছিলেন না এদিন একাদশে।

অবিশ্বাস্য নাটকীয়তা হয়তো এটাকেই বলে। ইতিহাস গড়তে দরকার ছিল চারটি গোল। সঙ্গে প্রতিপক্ষকে গোলবঞ্চিত রাখা। তাই করে দেখাল দলটি। এদিন বার্সেলোনাকে ৪-০ গোলে হারায় লিভারপুল। রক্ষণভাগ যে তাদের কতটা জমাট তা দেখিয়ে দিলেন ভার্জিল ভ্যান ডাইকরা। দারুণ কিছু সুযোগ পেয়েছিল বার্সেলোনা। কিন্তু তা থেকে গোল আদায় করে নিতে ব্যর্থ হয় দলটি।

রবার্টসনের পরিবর্তে এদিন দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামেন জর্জিয়ানো ভেইনালদাম । নেমেই গড়ে দেন ম্যাচের পার্থক্য। ১০ মিনিটেই দুই গোল করেন তিনি। জোড়া গোল করেন দিভোক ওরিগিও। অবশ্য দারুণ কৃতিত্ব রয়েছে আলেকজান্ডার-আর্নল্ডেরও। নির্ধারিত সময়ের ১১ মিনিট আগে বুদ্ধিদীপ্ত এক ক্রসেই যে বদলে দেয় সব। টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে লিভারপুল।

দলের সেরা দুই তারকা মোহাম্মদ সালাহ ও রবার্তো ফিরমিনোকে ছাড়া বেশ দুশ্চিন্তায় ছিল লিভারপুল। ছিলেন না নেবি কেইটাও। তবে এ ত্রয়ীকে ছাড়াই শুরু থেকেই দারুণ আগ্রাসী ফুটবল খেলতে থাকে লিভারপুল। সপ্তম মিনিটে এগিয়েও যায় তারা। নিজেদের অর্ধ থেকে লম্বা বাড়ানোর বল জর্দি আলবা ঠিকভাবে ঠেকাতে না পারলে পেয়ে যান সাদিও মানে। তার বাড়ানো বলে ডি বক্সে ঢুকে দারুণ শট নিয়েছিলেন অধিনায়ক হেন্ডারসন। দারুণ দক্ষতায় ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন বার্সা গোলরক্ষক মার্ক টের স্টেগান। তবে আলগা বল পেয়ে যান ওরিগি। আলতো টোকায় লক্ষ্যভেদ করেন এ বেলজিয়ান।

১৪তম মিনিটে দারুণ এক সেভ করেন লিভারপুল গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার। আলবার পাস থেকে বাঁ প্রান্তে দারুণ কোনাকুনি শট নিয়েছিলেন মেসি। ঝাঁপিয়ে পড়ে তা ঠেকিয়ে দেন ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক। পরের মিনিটে অসাধারণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন মেসি। ডি বক্সের ভিতরে একেবারে ফাঁকা বল পেয়ে শট নিতে দেরি করে ফেলেন এ আর্জেন্টাইন। ১৮তম মিনিটে মেসির পাস থেকে কৌতিনহোর নেওয়া শট ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন অ্যালিসন। কর্নার থেকে আলগা বলে দুর্দান্ত এক শট নিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

২৩তম মিনিটে রবার্টসনের শট ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন বার্সা গোলরক্ষক টের স্টেগান। ৪৩তম মিনিটে রবার্টসনের আরও একটি শট আর্তুরু ভিদালের পায়ে লেগে বার পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। ম্যাচের যোগ করা সময়ে মেসির দূরপাল্লার গড়ান শট অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি। পরের মিনিটে পাল্টা আক্রমণ থেকে মেসির বাড়ানো বলে একেবারে ফাঁকায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন আলবা। কিন্তু ঠিকভাবে বল নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি তিনি।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণের ধার বাড়ায় লিভারপুল। ভেইনালদাম মাঠে নামায় মধ্যমাঠের শক্তি বাড়ে। ৫১তম মিনিটেই কর্নার থেকে ভ্যান ডাইকের ব্যাকহিল টের স্টেগান ঠেকিয়ে না তখনই ব্যবধান দ্বিগুণ হতো লিভারপুলের। পাল্টা আক্রমণে মেসির পাস থেকে একেবারে ফাঁকায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন সুয়ারেজ। ভালো শটও নিয়েছিলেন। কিন্তু ঝাঁপিয়ে পড়ে সে যাত্রা দলকে রক্ষা করেন অ্যালিসন।

৫৪ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন স্বাগতিকরা। এ গোলেও দায় রয়েছে আলবার। তার কাছ থেকে বল কেড়ে ডি বক্সে ক্রস বাড়ান ট্রেন্ট অ্যালেকজান্ডার-আর্নল্ড। জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন ভেইনালদাম। এর দুই মিনিট পর জেরদান শাকিরির ক্রস থেকে ফাঁকায় লাফিয়ে দারুণ এক হেডে আবারও বল জালে জড়ান ভেইনালদাম।

৬৭তম মিনিটের মেসিকে আবারো গোল বঞ্চিত করেন অ্যালিসন। ছোট কর্নার থেকে রাকিতিচের সঙ্গে দেওয়া নেওয়া করে কোণাকোণি জোরালো এক শট নিয়েছিলেন অধিনায়ক। কিন্তু তা ঠেকিয়ে দেন অ্যালিসন। ৭৯তম মিনিটে কাঙ্ক্ষিত গোলটি করে বার্সেলোনা। কর্নার পেয়েছিল লিভারপুল। বার্সা গোলরক্ষক টের স্টেগেনসহ বার্সেলোনার রক্ষণভাগ প্রস্তুত ছিল না। তাই দেখে আচমকা শট নেন অ্যালেকজান্ডার-আর্নল্ড। ডি বক্সে ফাঁকায় বল পেয়ে জোরালো শটে জাল খুঁজে নেন ওরিগি। তাতেই আরও একবার স্বপ্নভঙ্গ হয় বার্সেলোনার।

৮৬তম মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়াতে পারতো লিভারপুল। একবারে ফাঁকায় হেড দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন শাকিরি। কিন্তু লক্ষ্যে রাখতে পারেনি। শেষ দিকে সমতায় অ্যাওয়ে গোল আদায় করে নিতে চেষ্টা করেছিল অতিথিরা। কিন্তু লিভারপুলের জমাট ডিফেন্স ভাঙতে পারেনি দলটি। ফলে সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয় স্প্যানিশ দলটিকে।

Comments

The Daily Star  | English

All 3 major parties backed Yunus' leadership: press secretary

Expressed support for a free, fair, and peaceful election under his administration, says Shafiqul Alam

10m ago