‘বোমা বানানোর মতো ইউরেনিয়াম উৎপাদন করার কথা ভাবছে ইরান’
মধ্যপ্রাচ্যে আবার যেনো তেঁতে উঠছে ইরান প্রসঙ্গ। পশ্চিমের দেশগুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে মার খেতে খেতে বেশ কাবু হয়ে পড়েছে ইতিহাস ও খনিজসম্পদ সমৃদ্ধ ইরান। তবে কিছুতেই যেনো বিশ্ব মোড়লদের কাছে মাথা নোয়াতে রাজি নয় ইসলামি বিপ্লবের দেশটি।
২০১৫ সালে বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের গত বছরে সরে আসা এবং ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পরও দেশটি বলেছিলো- তারা চুক্তি থেকে সরে যাবে না। কিন্তু, গতকালই (৯ মে) ইরানের রাষ্ট্রপতি হাসান রুহানির মুখে শোনা গেলো ভিন্ন কথা।
রুহানি জানালেন, চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে যাওয়ায় ইরানের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ইউরোপীয় দেশ- যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি। তাই ইরানেরও অধিকার রয়েছে চুক্তির কিছু শর্ত থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার।
দেশটির অন্যতম প্রধান দৈনিক তেহরান টাইমস-এ প্রকাশিত রুহানির বক্তব্য হলো: “এই ঘোষণা আগামী ৬০ দিনের জন্যে। আমরা ঘোষণা দিচ্ছি চুক্তির অপর অংশীদাররা (জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া এবং চীন) যদি আগামী ৬০ দিনের মধ্যে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসে এবং আমরা নতুন উপসংহারে পৌঁছতে পারি এবং আমাদের খনিজ তেল বিক্রি ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার নিরাপত্তা দিতে পারি, তাহলে আমরা গত ৭ মে’র আগের পরিস্থিতিতে ফিরে আসবো।”
রুহানির এই ইঙ্গিতপূর্ণ কথার অর্থ হলো: যদি বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের কোনো ‘নতুন চুক্তি’ না হয় তাহলে দেশটি আবারো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে শুরু করবে। আগের ‘পরমাণু চুক্তি’-তে যেসব বাধ্যবাধকতা ছিলো তা দেশটি কায়মনোবাক্যে মেনে নিতে বাধ্য নয়।
এর দ্বারা আরও বোঝা যায় যে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার যে ৩ দশমিক ৭ শতাংশের মাত্রা বেঁধে দিয়েছিলো বিশ্বশক্তি, তা মেনে চলতেও আর বাধ্য নয় ইরান।
এছাড়াও, সমৃদ্ধ বাড়তি ইউরেনিয়াম বিদেশে বিক্রির যে বাধ্যবাধকতা ছিলো তাও এখন অকার্যকর।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত রুহানির বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবরে জানা যায়, ইরানের রাষ্ট্রপতি বলেছেন, এখন থেকে তার দেশ সমৃদ্ধ বাড়তি ইউরেনিয়াম সঞ্চয় করে রাখবে। শুধু তাই নয় বোমা বানানোর মতো ইউরেনিয়াম আবারো উৎপাদন করার কথা ভাবছে তার দেশ।
তবে রুহানির এই বেঁধে দেওয়া ৬০ দিনের সময়সীমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা জানিয়েছেন, “আমরা যেকোনো আল্টিমেটামকে প্রত্যাখ্যান করছি। বরং আমরা এখন যাচাই-বাছাই করে দেখবো ইরান চুক্তির শর্তগুলো কতোটুকু মেনে চলছে।”
সম্প্রতি ইরানকে বার্তা দিতে মধ্যপ্রাচ্যে রণতরী পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের তেল বিক্রির ওপর অবরোধের পাশাপাশি নতুন করে অবরোধ দেওয়া হয়েছে ইরানের ইস্পাতশিল্পের ওপর। এমন পরিস্থিতিতে ইরানের হুমকি তাই দেশটির সঙ্গে পশ্চিমের দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাতে বাড়তি রসদ জোগাবে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
Comments